চলমান সংবাদ

দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের সাজা

 

তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমান
তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমান

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এক মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নয় বছর এবং তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।

মি. রহমানকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এটি না দিলে তাকে আরও তিন মাস সাজা ভোগ করতে হবে।

অন্যদিকে জুবাইদা রহমানকে কারাদণ্ড ছাড়াও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং অনাদায়ে তাকে আরও এক মাস সাজা ভোগ করতে হবে।

আদালত একই সঙ্গে মি. রহমানের প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

রায় ঘোষণার পরপরই আদালত চত্বরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের এবং নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ‘রায় প্রত্যাখ্যান’ করে মিছিল শুরু করে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় রায় প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ মিছিল করেছে বিএনপি সমর্থকরা।

মি. রহমানের আইনজীবীদের একজন কায়সার কামাল বলেছেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ২০০৭ সালের দায়েরকৃত মামলায় তড়িঘড়ি করে এ মামলায় রায় দেয়া হয়েছে।

“এ রায়ের মাধ্যমে তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অবিচার করা হয়েছে। এ রায় রাজনৈতিক জিঘাংসার ফসল থেকেই এ ফরমায়েশি রায় হয়েছে। জনগণ এ রায় মানেনা। এটি অবৈধ রায়, অন্যায় রায়,” মি. কামাল রায়ের পর বলছিলেন সাংবাদিকদের।

আদালত চত্বর
আদালত চত্বরের দৃশ্য

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও জুবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবাল বানুর বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলো দুদক।

অভিযোগ ছিলো মি. রহমান ও তার স্ত্রীর ঘোষিত আয়ের বাইরেও ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থের অবৈধ সম্পদ রয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করেন। তবে জুবাইদার মায়ের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম পরে বাতিল করা হয়। আদালত মামলার অভিযোগকারীসহ বাদীপক্ষের ৪২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

গত বছরের ১লা নভেম্বর আদালত তারেক রহমান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট উনিশটি মামলা হয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে।

এর মধ্যে আটটি মামলা বিচারাধীন আছে। আর নড়াইলের একটি মানহানির মামলায় তার দুই বছরের কারাদণ্ড হয়েছিলো।

তারেক রহমান
তারেক রহমান

এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দশ বছর, একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন ও অর্থ পাচার মামলায় সাত বছর কারাদণ্ড হয়েছিলো তার।

আজ যে মামলাটির রায় হচ্ছে সেটিও দুনীতির মামলা। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদক এ মামলাটি করেছিলো মি. রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে।

তারেক রহমান ২০০৮ সালের থেকে লন্ডনে রয়েছেন। সেখান থেকে এখন তিনি তার দল বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে।

এর আগে ২০০৭ সালের সাতই মার্চ তাকে গ্রেফতার করেছিলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে মুক্তি পেয়েছে লন্ডনে যাবার আগে তিনি আর রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন- এমন খবর এসেছিলো বাংলাদেশের গণমাধ্যমে।

পরে ২০১৮ সালে তারেক রহমানর পাসপোর্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে বিএনপির তরফ থেকে স্বীকার করা হয় যে মি. রহমান লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০১৮ সালের এপ্রিলে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন যে, ২০১২ সালে তারেক রহমান ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন এবং এক বছরের মধ্যেই সেটি গৃহীত হয়েছে।

এর আগে দলটি বরাবরই দাবি করে আসছিলো যে মি. রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা