মতামত

পরিবেশ রক্ষায় একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ

-শুভ চন্দ্র শীল

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ৫ জুন। ১৯৭৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি পালিত হয় সামাজিক সচেতনতা ও পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষার শপথে। গত ৫ জুন “প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে সামিল হই সকলে” এই শ্লোগানে সারা বিশ্বে পরিবেশ দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটিতে বৃক্ষ রোপণ পরিচর্যা বনভূমি ও জলাধার রক্ষাসহ প্রধান্য দেওয়া হয়েছে -পরিবেশে ভারসাম্য ও প্রকৃতি রক্ষায় প্লাস্টিক দূষণ রোধের উপর। দৈনিক জীবনে প্লাস্টিক ব্যবহার নিত্যপ্রয়োজনীয় হয়ে দাড়িয়েছে। বাংলাদেশে পাটকল ধ্বংস ও উন্নয়ন বিশ্বের তগমায় হারিয়ে গেছে পাট পণ্যের ব্যবহার, চাহিদা বেড়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যের। ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৪০০ মিলিয়ন টনেরও বেশি প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়, যার অর্ধেক শুধু একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। উৎপাদিত প্লাস্টিকের ১০ শতাংশেরও কম পুনর্ব্যবহারযোগ্য।
অনেক পরিবেশবীদের মতে একবিংশ শতাব্দিতে পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন। বতর্মান বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমাজ পরিবেশের উন্নয়নের ধারায় পুড়ছে বনজঙ্গল। ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়েছে বহু বন, নদী ও গাছপালা। স্থাপনা নির্মাণের নামে প্রতিনিয়িত কবর খুড়া হচ্ছে অক্সিজেনের। দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে সরকারি ও বে-সরকারি বহু পরিবেশ রক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে। অনেকের  কিছু সাদৃশ্য কাজ দেখা গেলেও পরবর্তীতে হারিয়ে যায় তাদের কার্যক্রমগুলো। বিভিন্ন দেশে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তজার্তিক সেমিনার হয়ে থাকে। বিভিন্ন দিবসে পরিবেশ রক্ষা নিয়ে বিভিন্ন সেমিনার মিছিল মিটিং ও কিছু কর্মসূচি হাতে নেয় সরকার ও সংগঠনগুলো। কিন্তু গাছ, বন, নদী, প্রকৃতি কিংবা পরিবেশ রক্ষায় সরকার কিংবা নাগরিকের উপযুক্ত কোন দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি আর প্রকল্প চোখে পড়ে না। সরকার ব্যস্ত উন্নত জীবনযাপন ও র্স্মাট দেশ নির্মাণে। বিভিন্নভাবে বৃক্ষ রোপণ হলেও পরিচর্যার অভাবে নস্ট হয়ে যায় গাছগুলো।
দেশে নগরায়নের হার বাড়ছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঢাকা আন্তজার্তিক মানদন্ডে হ্যাট্রিক করেছে কয়েকবার। বাংলাদেশে সিটি করপোরেশন এলাকা গুলোতে বহুতল ভবন ও যান্ত্রিক পরিব কারনে হ্রাস পাচ্ছে অক্সিজেন।

শহুরে জীবনে বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যস্ততা গড়ে উঠছে কর্পোরেট ছাঁদ বাগান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে “গাছ লাগান গাছ বাচাঁন” এই শ্লোগান প্রচলিত থাকলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ও সরকার গাছ লাগানোর বিপরীতে গাছ কাটছে। বহুতল ভবন, রাস্তা নির্মাণ, বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প ও মহাসড়ক সেতু নির্মাণের নামে পরিবেশের ক্ষতি, নদীর চলমান প্রবাহ ও বৃক্ষ ধ্বংস করছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও দূষণে বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন নিমিষে যাচ্ছে অক্সিজেন এর হার। একদিকে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ও বৃক্ষনিধনে বাড়ছে ফুসফুস, ক্যান্সার, হাইপ্রেশারের মতো রোগগুলো কেড়ে নিচ্ছে জীবন প্রতিনিয়ত। শিশু-বয়স্করা ভুগছে অক্সিজেন সংকটে। যান্ত্রিক শহুরে জীবনের ব্যস্ততায় প্রতিটি মানুষ নিজের অজান্তেই ধ্বংস করছে পরিবেশ, প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে সবকিছুতে।

একদিকে প্লাষ্টিক বর্জ্যে ভরাট হচ্ছে নদী-সমুদ্র,  অন্যদিকে প্লাস্টিক পণ্য পচে না বিধায় হারিয়ে যাচ্ছে মাটির আদ্রতা, দেশের মাটি বৃক্ষরোপনের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।
বিভিন্ন সময়ে প্রগতিশীল আন্দোলনকর্মী ও পরিবেশবিদরা আন্দোলন, প্রতিবাদ, মিছিল, মিটিং, সমাবেশ করে গাছ কাটা, প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ, নদী রক্ষায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দাবি করছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহারে নামমাত্র কিছু আইন থাকলে বাধ্যতার বহনে উৎপন্ন হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে কিউবা, আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, ভারত সহ বহু দেশে বহু স্থাপনা, বহুতল ভবন, সড়ক-সেতু নির্মাণ হয়েছে কিন্তু প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা করে। প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বর্জ্য নিষ্করণে তাদের দেশগুলোতে রয়েছে কঠোর আইন ও সচেতনতা। (ইন্টারনেট ব্যবহার করে খুজলে বহু তথ্য ও প্রতীকী ছবি পাওয়া যাবে)
আসুন শুধু বলা কিংবা শোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করি। গাছ রক্ষার পাশাপাশি, বৃক্ষ রোপণ ও সামাজিক সচেতনতাই পারে সমাজ-প্রকৃতি-পরিবেশ ও মানুষ বাচিয়ে রাখতে। কারণ মানুষ থাকলে অক্সিজেন লাগবে আর অক্সিজেন আসবে বৃক্ষ থেকে। পরিবেশ রক্ষায় শপথ করি, প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করি। বৃক্ষ রক্ষায় প্রচার কার্যক্রম জোরদার করি।
আজকের শ্লোগান হোক ‘গাছ লাগাই পরিবেশ বাঁচাই’।

আগামীর পৃথিবী হোক সবুজায়ন ও দূষণমুক্ত নতুন এক পৃথিবী

লেখকঃ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক এক্টিভিস্ট