চলমান সংবাদ

বিএম ডিপো দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্ক

বিগত ২০২২ সনের ৪ জুন বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৫১ জন শ্রমিক কর্মস্থলে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে  নিহত হয় এবং প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হয়। উক্ত ঘটনার ১ বৎসর পূর্তিতে চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আজ দুপুর ৪টায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।  বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ মিয়ার সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক শ্রমিকনেতা ফজলুল কবির মিন্টুর সঞ্চালনায় উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচীতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিলস এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার পাহাড়ি ভাটাচার্য, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট ইকবাল হোসেন, জাতীয় শ্রমিক লীগের লুৎফুন নাহার সোনিয়া, নির্মাণ শ্রমিক লীগের চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি মোঃ জাবেদ আলম, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর নেতা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের নেত্রী নাজমা আকতার, বাংলাদেশ ফ্রী ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের নূর আলম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের পাচলাইশ-বায়েজিদ আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক জাহেদ উদ্দিন শাহিন, জাতীয় শ্রমিক জোটের হুমায়ুন কবির প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দুর্ঘটনার পর পর চট্টগ্রামের স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এবং বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত বিবৃতি এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা, মারাত্মক আহত প্রত্যেক শ্রমিককে ৬ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য আহতদের কমপক্ষে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে ডিএনএ টেস্টে চিহ্নিত না হওয়ার অজুহাতে এখনো ৭/৮ জন নিহত শ্রমিকের পরিবারকে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। এছাড়া আহতদের বড় একটা অংশ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পায়নি। আহতদের ৩৬ জন ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় বিগত ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিল। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক উক্ত ৩৬ জনের তালিকা বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানোর পরেও অদ্যাবধি অনেক আহত শ্রমিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পায়নি। বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের সাথে আহত শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তারা সুনির্দিষ্ট কোন জবাব না দিয়ে বিভিন্নভাবে সময় ক্ষেপন ও হয়রানি করছে। শ্রম আইনের ১২৩ ধারা অনুসারে চূড়ান্ত পাওনা বা ক্ষতিপূরনের টাকা সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক হলেও দীর্ঘ ১ বৎসর সময়েও শ্রমিকেরা তাদের পাওনা পাচ্ছেনা।

পড়ুন:  বিএম কন্টেইনার ডিপো দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের দিনকাল -১ -কন্টেইনার মেরামতকারী সিয়াম জানে না তার জীবন কীভাবে মেরামত করবে?

তাছাড়া আইএলও কনভেনশন ১২১, বাংলাদেশ শ্রম আইন ১৫১ ধারা এবং তফশীল ৫ অনুসারে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত বেতন প্রদানের কথা উল্লেখ থাকলেও আহত শ্রমিকেরা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে আর কোন ধরনের চিকিৎসা সহযোগিতা পায়নি।

আহত শ্রমিকদের অনেকের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, অনেকে কানে শুনতে পায়না, অনেকে পায়ের উপর ভর দিয়ে বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।  ফলে তাদের প্রায় সবাইকে পঙ্গুত্বের জীবন বরণ করে নিতে হচ্ছে এবং বিগত ১ বৎসর যাবৎ তারা আয়-রোজগারহীন অবস্থায় জীবন যাপন করতেছে। আবার তাদের প্রায় প্রত্যককে চিকিৎসা বাবদ মাসে ৭/৮ হাজার টাকা করে খরচ করতে হচ্ছে। যা আয়-রোজগারহীন এসকল অসহায় শ্রমিকদের পক্ষে যোগাড় করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে নিহত অচিহ্নিত শ্রমিকদের দ্রুত চিহ্নিত করে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের পরিবার প্রতি ১০ লক্ষ টাকা, মারাত্মক আহতদের ৬ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য আহতদের ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং আহতরা পূর্ণাংগ সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, অবিলম্বে এও দাবি কার্যকর না হলে চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্ক ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের শ্রমিক ও নাগরিক সমাজকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।