বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (৯৮): পুনর্জন্ম

-বিজন সাহা

বিজন সাহা (ফাইল ছবি)

১৯৯৬ সাল। দু’ মাসের গবেষণা সফরে গিয়েছি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিয়োরেটিক্যাল ফিজিক্সে। অনেক আগে প্রফেসর আব্দুস সালামের চেষ্টায় ইতালীর ট্রেস্টে এই সেন্টার তৈরি হয়েছিল। সেটা এখনও পর্যন্ত তৃতীয় বিশ্বের পদার্থবিদদের কাছে এক তীর্থ স্থান। অনেকেই এটাকে বলে আই ওপেনার। যখন তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই গবেষণার তেমন সুযোগ ছিল না এই কেন্দ্র তাদের সামনে খুলে দিত বৃহত্তর বিজ্ঞানের দুয়ার। আমি ইতিমধ্যে প্রায় দুই বছর দুবনায় কাটিয়েছি গবেষণা করে। তবে সেই সময়, যখন রাশিয়া প্রচণ্ড কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এরকম ট্রিপ ছিল সেখানকার বিজ্ঞানীদের ভেসে থাকার একমাত্র না হলেও অন্যতম প্রধান উপায়। সেখানেই আলাপ হল ইংল্যান্ড থেকে আসা দুই পিএইচডি স্কলারের সাথে। ওরা এসেছে একটা স্কুলে যোগ দিতে। সেবার স্ট্রিং থিয়োরির উইন্টার স্কুলে জন শোয়ারজ সহ অনেক নামকরা বিশেষজ্ঞরা এসেছিলেন। সেখানেই প্রথম দেখলাম পদার্থবিজ্ঞানীরা আর আগের মত মনভোলা মানুষ নন, তারা ফ্যাশন করতে জানেন। আসলে দেশে থাকতে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে গল্প পড়ে একটা ধারণা হয়েছিল যে বিজ্ঞানী মানেই আপন ভোলা মানুষ যে জামা কাপড় ইত্যাদির দিকে তেমন নজর দেন না। সোভিয়েত ইউনিয়নে ছাত্রজীবনে আর পরে চাকরি জীবনে এর খুব একটা ব্যতিক্রম দেখিনি, এখনও দেখিনা। ইতালীতে গিয়ে ইউরোপিয়ান বিজ্ঞানীদের দেখেও সেই ধারণাই হয়েছিল। কিন্তু স্কুলে যখন আমেরিকান বিশেষজ্ঞরা এলেন, তাদের পোশাক আশাক, তাদের চলন বল দেখে এই প্রথম বুঝলাম ওখানে বিজ্ঞানীরা অন্য রকমের যারা গবেষণার পাশাপাশি সমাজ জীবন সম্পর্কেও যথেষ্ট সজাগ।

সেই দুই বন্ধুর সাথে ঠিক করলাম গ্রত্তা গিগান্তো মানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গুহা দেখতে যাব। সেটা ট্রেস্টেই। আমাদের সেন্টার থেকে শহর হয়ে বাস ও ট্রামে সেখানে যাওয়া যায়। তবে ঠিক করলাম আমরা যাব পায়ে হেঁটে, পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে। আগের দিন আমি গেছিলাম ভেনিসে বন্ধুদের সাথে। শেষ ট্রেন ধরে ফিরলাম প্রায় ভোর সকালে। কারণ ঐ ট্রেন সরাসরি ট্রেস্টে আসে না, আসে ভেরোনা হয়ে প্রায় পাঁচ ঘন্টা জার্নি করে। তাই সকালে যখন দরজায় টোকা পড়ল প্রথমে টের পাইনি। অনেকক্ষণ পরে দরজা খুলে দেখি ওরা দু’ জন রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে রাস্তায় নামলাম, বা বলা চলে রাস্তায় উঠলাম। রাস্তার যেন শেষ নেই। উঠছি তো উঠছিই, কিন্তু কিছুতেই রাস্তা শেষ হচ্ছে না। হাঁটছি আর গল্প করছি।
– তুমি পুনর্জন্মে বিশ্বাস কর?
– হঠাৎ এ প্রশ্ন?
– মানে তুমি তো ইন্ডিয়া থেকে। ওখানে তো মানুষ পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে।
খেয়াল করলাম দেশে আমরা যতই ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ করি না কেন বাইরে বিদেশীদের চোখে আমরা সবাই ইন্ডিয়ান। এটা অনেকটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের মত। তা যে দেশেরই হোক, আমাদের এলাকার সব রেস্টুরেন্ট ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট নামেই পরিচিত আর ডিস ইন্ডিয়ান ডিস। অন্তত তখন পর্যন্ত এটাই ছিল। কথা প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ছে আবুধাবি ট্রিপের কথা। সেটাও গবেষণার কাজে। ওখানে এয়ার পোর্টে আমাকে মিট করল এক ছেলে, দেখেই মনে হয় আমাদের এলাকার। বলল বাংলাদেশ থেকে। এরপর ও আমাকে আরেক জনের হাতে সোপর্দ করল। দেখা গেল সেও বাংলাদেশি। ও আমাকে একটা ট্যাক্সিতে তুলে দিল। উঠে জিজ্ঞেস করলাম বাংলাদেশি কিনা।
– না আমি পাকিস্তান থেকে। তবে বাংলাদেশি অনেক বন্ধু আছে আমার আর ভারতীয়। আমরা এক বাসায় কুড়ি জন থাকি, এক সাথেই রান্না করে খাই। পাকিস্তানি, ভারতীয়, বাংলাদেশি।
– সমস্যা হয় না?
– এখানে আসার আগে ভারতীয়দের খারাপ মনে করতাম, শত্রু মনে করতাম। এখন ওরাই আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাংলাদেশিরাও।
– হুম। এই সহজ সত্যটা বোঝার জন্য দেশ ভাগ করতে হয়েছিল, কয়েকটা যুদ্ধ করতে হয়েছিল, দেশ ছেড়ে বিদেশে আসতে হয়েছিল কাজের খোঁজে।
– তা যা বলেছেন।

যাহোক ফিরে আসি আমাদের গল্পে। দেখা গেল বিদেশিরা আমাদের সম্পর্কে যেসব ধারণা পোষণ করে তাদের অন্যতম যোগ ব্যায়াম, পুনর্জন্ম, সাই বাবা ইত্যাদি। হয়তো এ ব্যাপারে শুধু আমাকেই নয়, অন্যদেরও প্রশ্ন করে। তাই কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু এই প্রসঙ্গ তুলল। এই গল্পই নীচে।

কথায় কথায় কিছু দিন আগে এক বন্ধু জিজ্ঞেস করল
– আপনি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন?
– হ্যাঁ।
– বলেন কি? ধর্মে বিশ্বাস করেন না, কিন্তু পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন। সেটা কেমন করে হয়?
– দেখ তুমি যেভাবে পুনর্জন্ম দেখছ আমি সেভাবে দেখছি না। কোন কিছু বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের আগে তোমার সেই ব্যাপারে একটা পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। আমি আমার ধারণার কথাটা বলি তাহলে হয়তো বুঝতে সুবিধা হবে।
– কিন্তু নতুন করে বলার কী আছে এখানে? সব তো ধর্মগ্রন্থেই লেখা আছে।
– বেশ। সব ব্যাদে লেখা আছে। মানে তুমি ধর্মগ্রন্থ বিশ্বাস কর। তাহলে তো ল্যাঠা চুকেই গেল।
– এটা আবার কি বলছেন? আমি কেন ধর্মগ্রন্থ বিশ্বাস করব?
– তা আমি কোত্থেকে জানব? কিন্তু তুমিও তো ধার্মিকদের মতই ডগমায় বিশ্বাস করছ। তুমি ধর্মগ্রন্থে যেটা লেখা আছে সেটা সঠিক ধরে নিয়ে আমার কাছে জানতে চাইছ আমি সেটা বিশ্বাস করি কিনা। কিন্তু আমাকে কেন সেই ব্যাখ্যাতেই বিশ্বাস করতে হবে? একটা সময় ছিল যখন আমরা ডিটারমিনিস্টিক দর্শনে বিশ্বাস করতাম। এখন  বিজ্ঞান বলে প্রবাবিলিটির কথা, মানে এমনকি এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা আছে যদিও সেটা প্রায় অসম্ভব। আর এ কারণেই আমরা ধর্মের অনেক কিছুই ঠিক অন্যভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি। আমাদের ব্যাখ্যাটাই যে ঠিক তার কোন মানে নেই, কিন্তু সেই সম্ভাবনাটা খতিয়ে দেখতে ক্ষতি কী?
– কোনই ক্ষতি নেই।
– তাহলে তুমি আমার ব্যাখ্যাটা শুনতে প্রস্তুত?
– বলুন।
– আমি অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না, তবে হিন্দু ধর্মে পুনর্জন্মের কথা যেটা বলা আছে সেটা কমবেশি জানি। অন্তত স্কুলে সেটা পড়েছি। হিন্দু ধর্ম বাদেও ভারতে আর যেসব ধর্ম যেমন জৈন, বৌদ্ধ, শিখ ইত্যাদি ধর্ম আছে – এসবকে একসাথে ভারতীয় দর্শন হিসেবেও অনেকে বলে থাকেন। তার মানে এসব বইয়ে অনেক কিছুই লেখা আছে যার সরাসরি অর্থ না খুঁজে এসেবের বিভিন্ন ব্যাখ্যা খোঁজার অবকাশ আছে। আর একারণেই দেখবে বেদ, উপনিষদ, গীতা ও বৌদ্ধ ধর্মের টেক্সটের বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। আর সেই সূত্র ধরেই আমি পুনর্জন্ম একটু অন্যভাবে দেখতে চাই।
– যেমন?
– যদি স্বর্গ, নরক এসব পরলোকের ব্যাপার হয় তবে পুনর্জন্ম ঘটে এই পৃথিবীতে। মনে আছে সেই কবিতা – “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে”? মানুষের কর্মের উপর নির্ভর করে তার পাপ পুণ্য আর এই পাপ পুণ্যের ভিত্তিতেই মানুষ স্বর্গে বা নরকে যায়। এখানে মূল কথা হচ্ছে কর্ম। ভাল কাজ করলে মানুষের পুণ্য হয়, খারাপ কাজে পাপ। কিন্তু ভাল কাজ আর খারাপ কাজ আমরা কিভাবে ঠিক করব? সেটা সমাজই ঠিক করে দেয় তার অভিজ্ঞতা থেকে। মানুষ সামাজিক জীব, তাই সমাজের ভালমন্দের উপর নির্ভর করে মানুষের ভাল মন্দ। যদি সামাজিক পরিস্থিতি খারাপ হয় তবে সফল মানুষও সেখানে ভাল থাকতে পারে না। আমার অনেক বন্ধু আছে যারা দেশে ভাল ভাল পজিশনে ছিল তবে সেখানকার সামাজিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। এই দেখ বিপ্লব পূর্ববর্তী রাশিয়ার কথা। সেখানে উঁচু তলার মানুষ ভাল ছিল। কিন্তু কৃষক, শ্রমিক সহ প্রান্তিক মানুষ ভাল ছিল না, এর ফলে সামাজিক অস্থিরতা, বিপ্লব ইত্যাদি। তাই নিজের ভাল থাকা শুধু নিজের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে সামাজিক পরিস্থিতির উপর। আর এ কারণেই সাধারণত ভাল কাজ বলতে আমরা বুঝি সেটাই যা ব্যক্তি মানুষ ও সমাজ উভয়ের মঙ্গল বয়ে আনে। যে কাজ অমঙ্গল বয়ে আনে (এমনকি ব্যক্তি মানুষের জন্য ভাল হলেও সমাজের জন্য খারাপ) তাকে আমরা খারাপ কাজ বলি। ঘুষ যে নেয় বা দেয় সেটা এই দুজনকে লাভবান করলেও সার্বিক ভাবে সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তাই সেটাও খারাপ কাজ। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় এসব ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত ভাল মন্দের পাশাপাশি প্রকৃতি, পরিবেশ এসবের কথাও মাথায় রাখতে হবে। যেমন নদীর চরে ঘরবাড়ি করে বসবাস বা হালচাষ শুরু করলে কিছু লোক নিশ্চয়ই লাভবান হয়, কিন্তু চর দখলের ফলে নদীর নাব্যতা কমে যায়, বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বন্যার সময় হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই ভাল কাজ হতে হবে প্রকৃতিবান্ধব। এখন আসি সেই পুনর্জন্মের কথায়। প্রায় প্রতিটি মানুষই চায় তার সন্তান তার চেয়ে ভাল থাকুক। আমাদের সন্তান তখনই ভাল থাকবে যদি আমরা তাদের জন্য একটা সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে পারি। আর সেটা সম্ভব যদি আমরা এমন একটা সমাজ গড়ে তুলতে পারি যেখানে প্রতিটি মানুষ তার প্রতিভা বিকাশের সমান সুযোগ পাবে, যে দেশে ও সমাজে প্রকৃতি ও পরিবেশের যত্ন নেওয়া হবে, যেখানে কর্মই হবে মানুষের প্রধান পরিচয়, তার জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এসব মুখ্য হবে না। শাস্ত্রে কী লেখা আছে? যদি মানুষ খারাপ কাজ করে তবে সে পরজন্মে নিচু কোন প্রাণী হয়ে জন্ম নেবে আর মানুষ রূপে জন্ম নিতে হলে তাকে অনেক পুণ্যের অধিকারী হতে হবে, মানে তাকে অনেক অনেক ভাল কাজ করতে হবে।

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (৯৭): নস্টালজিয়া -বিজন সাহা

– সেটা বুঝলাম, কিন্তু এর সাথে পুনর্জন্মের সম্পর্ক কী?
– তুমি যে অর্থে পুনর্জন্ম বোঝ আমি সে অর্থে বুঝি না। আমার পুনর্জন্ম আমার, আমাদের আগামী প্রজন্মের মধ্য দিয়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের চেয়ে ভালো থাকুক, তাদের পৃথিবীটা আমাদের চেয়েও সুন্দর হোক এই স্বপ্নই তো আমরা দেখি। স্বর্গ লাভ সেটাও তো এক ধরণের স্বপ্ন, যেমন স্বপ্ন আবার ফিরে আসার, আর তাইতো এখনও আমরা জীবনানন্দের সাথে স্বপ্ন দেখি

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শঙখচিল শালিকের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিঁকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।
হয়তো বা হাঁস হবো – কিশোরীর – ঘুঙুর রহিবে লাল পায়
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলঙ্গীর ঢেউএ ভেজা বাংলারি সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।
হয়তো শুনিবে এক লক্ষীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে।
হয়তো খৈয়ের ধান সরাতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে।
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙ্গা বায় – রাঙ্গা মেঘে সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে,
দেখিবে ধবল বক; আমারে পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।

তাই আমার কাছে পুনর্জন্ম এটা একটা স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন যেটা সফল হতে পারে, কিন্তু এই সাফল্য আসতে পারে আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে। তবে সে কাজ অবশ্যই হতে হবে বিজ্ঞান ভাবনার উপর ভিত্তি করে, হতে হবে মানুষকে, প্রকৃতিকে ভালবেসে, হতে হবে মত ও পথের বৈচিত্র্যকে ধারণ করে, জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে শ্রদ্ধার চোখে দেখার মধ্য দিয়ে।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, দুবনা
শিক্ষক, গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, মস্কো, রাশিয়া