un

সীতাকুণ্ডের কাঁচা আম যাচ্ছে ইতালি

ইতালিতে রপ্তানি হচ্ছে সীতাকুণ্ডের কাঁচা আম। গত বুধবার চাষিরা সীতাকুণ্ডের পাহাড়ের নিজস্ব বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে তা বাছাই শেষে মোড়কজাত করে ঢাকায় রপ্তানীকারণ প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়েছেন। কার্গো বিমানে করে এসব আম ইতালিতে রপ্তানি হবে। গত মাসে দুই দফায় পরিক্ষামূলকভাবে রপ্তানি করা হয়েছে ২০০ কেজি। দুই ধাপে পাঠানো আমগুলো পছন্দ তালিকায় থাকায় তৃতীয়বারের মতো কাঁচা আম আবার পাঠানো হচ্ছে। এ বছর বিপুল পরিমান আম রপ্তানির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ জানান, এই মৌসুমে বাংলাদেশে প্রথম আম রপ্তানি হয়েছে সীতাকুণ্ড থেকে। তবে দুই দফায় এই আমগুলো পরীক্ষামূলকভাবে পাঠানো হয়েছে ইতালি ও সুইডেনে। তৃতীয় বারের মতো ১৫০ কেজি আম রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আমগুলো প্যাকেট করে ঢাকায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

ইতালি ও সুইডেনে দুই দফায় পাঠানো আমগুলোর বিষয়ে কোনো আপত্তি না থাকায় তৃতীয় বারের মতো ইতালিতে পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। আমগুলো সেখানকার ব্যবসায়ীদের পছন্দের তালিকায় থাকলে এ বছর বিপুল পরিমান আম বিদেশে রপ্তানি হয়ে দেশে আসবে লাখ লাখ ডলার। তিনি বলেন, এই আম রপ্তানির সূচনা হয়েছে সীতাকুণ্ড পৌরসদরের বাসিন্দা আম চাষি মাহমুদ হাসানের বাড়ি থেকে।

তিনি আরো বলেন, কৃষক মাহমুদ হাসানের গাছে বেশ কিছু কাঁচা আম ধরেছে। এসব আম বিক্রির জন্য তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ ‘সীতাকুণ্ড ফ্রুট শপ’ এ প্রচারণা চালান। এই প্রচারণায় আকৃষ্ট হন বিএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি রপ্তানিকারণ প্রতিষ্ঠান।

পরে প্রতিষ্ঠানটি মাহমুদ হাসানের সাথে যোগাযোগ করে আম কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত করে এবং সব শেষে কৃষি অফিসের কাছে আমের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে মৌসুমি আমগুলো একটু ছোট আকৃতির হলেও চট্টগ্রাম অঞ্চলের উৎপাদিত আমগুলো আকারে বড় হয়। প্রতি কেজি ৬টি আম মিলছে। আমের মানও ভালো বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

আম বিক্রেতা মাহমুদ হাসান জানান, ফেসবুকে আমের বিজ্ঞাপন দেখে তা কেনার জন্য বিএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী রেজাউল ইসলাম কল্লোল হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে আমের কোয়ালিটি নিশ্চিত করার জন্য কল্লোল কৃষি অফিসের একটি প্রত্যায়ন পত্র চান।

কৃষি অফিস এটি দেবার পর তাকে পাঠানো হয়। পরে আলোচনায় প্রতি কেজি আম ১৫০ টাকা করে দরদাম ঠিক হয়। মাহমুদ হাসান আরও বলেন, আমাদের ১২ একর পাহাড়ি জমিতে আমের বাগান রয়েছে। আমরা ধারণা করছি, এই বছর ১০ হাজার কেজি আম উৎপাদন হবে। ইতোমধ্যে যেসব আম রপ্তানি করেছি ইতালি ও সুইডেনের ক্রেতারা সেগুলো যদি পছন্দ করেন তাহলে আরো প্রচুর আম রপ্তানি করব বলে আশা করছি।

রেজাউল ইসলাম কল্লোল বলেন, ইউরোপে আমাদের দেশের কাঁচা আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের আম উৎপাদনের প্রধান অঞ্চল উত্তরবঙ্গের আম পাওয়া যাবে আরও অন্তত এক মাস পরে। আগাম আম রপ্তানির জন্য কাঁচা আম খুঁজছিলাম। ফেসবুকে মাহমুদ হাসানের পেজটি খুঁজে পেলাম।

তারপর তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রথমবারের মতো নমুনা হিসেবে ৮৪ কেজি আম কিনে নিই। এর মধ্যে ৭৫ কেজি নমুনা হিসেবে ইতালি ও সুইডেনে পাঠিয়েছি। দ্বিতীয় বার ১৩০ কেজি ইতালিতে পাঠানো হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো ইতালিতে পাঠানো হচ্ছে ১৫০ কেজি কাঁচা আম। সেখান থেকে আম পছন্দ করলে আরো বহু আম সীতাকুণ্ড থেকে সেখানে পাঠাবো। এতে কৃষক যেমন লাভবান হবে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশও।

প্রসঙ্গত সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৩০৫ হেক্টর জমিতে এ বছরে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।