স্বাস্থ্য

রসালো ফল তরমুজ

-ড. রতন চৌধুরী।

বাজারে বিক্রির জন্য ক্ষেত থেকে তোলা তরমুজ
আশির দশকে আমার জেলা নাটোরে ব্যাপক ভাবে তরমুজ উৎপাদন হতো। ধুধু মাঠে শুধু তরমুজ আর তরমুজ। কোনো একবছর প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি হলো। সেই শিলখণ্ড কোনো এলাকায় প্রায় দুইদিন পর্যন্ত অক্ষত ছিল। তখন এলাকার তরমুজ চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। সেসময় বেশিরভাগ কৃষকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তরমুজ আবাদ করতো। অনেক কৃষক এই শোক সইতে না পেরে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত করেছে। তৎকালিক সরকার কৃষকদের এই দুর্দিনে খুব কাছে থেকে বিষয়টা দেখেছে সহায়তার মানসিকতা নিয়ে। তখনকার সরকার আর্মিদের সহায়তা নিয়ে এলাকার মাটি পরীক্ষা করে দেখেছে অতি দ্রুত কি ফসল ফলানো সম্ভব এ এলাকায়। জরুরী ভিত্তিতে তখন এলাকার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে মুগডাল এর বীজ সরবরাহ করা হলো। তাদের কৃষি ঋণ মওকুফ করা হয়েছিল। আর তারপর থেকে তরমুজের রাজধানী খ্যাত নাটোর হয়ে গেল মুগডালের বাড়ী। কিন্তু যে সকল কৃষক তখন তরমুজ আবাদ করে ধনী হয়েছিল তারা আজও ভুলতে পারেনি সেই লাল টকটকে তরমুজের কথা! নাটোরের তরমুজ একসময় সারাদেশব্যাপী বিক্রি হতো। তখন কেজির মাপ আসেনি দেশে। ছোটবেলায় দেখেছি এক একটা তরমুজের ওজন প্রায় ২৫-৩০ সের পর্যন্ত হতে। মাঠে তরমুজ যখন বেশ বড় হয়ে যেতো তখন অনাহুত উৎপাত (শেয়াল) থেকে বাঁচার জন্য টংঘর করে পাহারা দিতো।
তরমুজ (ইংরেজি: Watermelon) (বৈজ্ঞানিক নাম: Citrullus lanatus) একটি গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ফল। ঠান্ডা তরমুজ গ্রীষ্মকালে বেশ জনপ্রিয়। এতে প্রচুর পরিমাণ জল থাকে। এই ফলে ৬% চিনি এবং ৯২% জল এবং অন্যান্য উপাদান ২%। এটি ভিটামিন এ জাতীয় ফল।
আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত হলো সুগার বেবি। ওপেন পলিনেটেড গোলাকার সমান আকৃতির ঘন সবুজ আবরণের ঘন লাল অভ্যন্তর জাতটি বেশি চাষ হয়। চাষের পর তরমুজ সাধারণত আড়াই মাসের মাথায় ফলন দিয়ে থাকে। অন্যান্য যে জাতগুলো আছে তা হল আসাহি ইয়ামাতো, আধারি, পুষা বেদানা, BU তরমুজ -১ (IPSA তরমুজ), হান্টার, বিগ ফ্যামিলি, জাগুয়ার, ব্লাক বেরী ইত্যাদি। আমাদের দেশে মৌসুমি তরমুজের চাষ হয় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। এর ৮০-৯০ দিনের মধ্যে তরমুজ খাবারের উপযোগী হয়।
ব্লাক বেরি তরমুজ
অধুনা দুটি তরমুজের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা। নামকরণ করা হয়েছে বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২। দেশীয় আবহাওয়া উপযোগী এসব তরমুজ সারা বছরই চাষ করা যাবে। দেশেই বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা যাবে এই জাত দুটির। একটি জাতের তরমুজের ভেতর হবে হলুদ, অন্যটির টকটকে লাল।
জাত উদ্ভাবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বারির বিজ্ঞানীরা জানান, আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে যেসব উন্নত মানের তরমুজ পাওয়া যায় তার প্রায় সবই জাপান বা অন্যান্য দেশ, যেমন: চীন, থাইল্যান্ড, ভারত থেকে আমদানি করা সংকর জাতের বীজ থেকে উৎপাদন করা হয়। ফলে তরমুজের বীজ আমদানি বাবদ প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়। এ ছাড়া এসব জাতের বীজের বিশুদ্ধতা ও অঙ্কুরোদ্গমের হার সব সময় ঠিক না থাকায় কৃষকেরা প্রতারিত হয়ে থাকেন। কিন্তু বারি উদ্ভাবিত জাত দুটি থেকে কৃষক নিজেই বীজ উৎপাদন করতে পারবেন। এগুলোর ফলন, আকৃতি, স্বাদ ও মিষ্টতা প্রচলিত জাপানি সংকর জাতের চেয়ে উন্নততর।
বারি-১ ও বারি-২ জাতের তরমুজ
একটি তাজা তরমুজের পুষ্টিগত মান –
পুষ্টিগত মান (প্রতি ১০০ গ্রামে):
শক্তি ৩০ কিলো ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট ৭.৬ গ্রাম, প্রোটিন ০.৬১ গ্রাম, ফ্যাট ০.১৫ গ্রাম, কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম, ফাইবার ০.৪ গ্রাম।
ভিটামিন:
ফোলেট ৩ মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন ০.১৭৮ মিলিগ্রাম, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড ০.২২১ মিলিগ্রাম,
পাইরিডক্সিন ০.০৪৫ মিলিগ্রাম,
থায়ামিন ০.০৩৩ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন এ ২৮ IU, ভিটামিন সি ৮.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.০৫ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন বি ৬ ০.০৪৫ মিলিগ্রাম।
ইলেক্ট্রোলাইট:
সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১১২ মিলিগ্রাম।
মিনারেল:
ক্যালসিয়াম ৭ মিলিগ্রাম, কপার ০.০৪২ মাইক্রোগ্রাম, আয়রন ০.২৪ মিলিগ্রাম,
ম্যাগনেসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.০৩৮ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ০.১ মিলিগ্রাম।
ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট:
ক্যারোটিন, আল্ফ়া ০ মাইক্রোগ্রাম;
ক্রিপ্টো জ্যানথিন, বিটা ৭৮ মাইক্রোগ্রাম; লিউটিন + জিয়া জ্যানথিন ৮ মাইক্রোগ্রাম;
লাইকোপেন ৪৫৩২ মাইক্রোগ্রাম;
সিট্রোলিন ২৫০ মিলিগ্রাম।
তরমুজের উপকারিতা এবং ক্ষতিকারক দিক –
গরমের দুপুরে ঠান্ডা মিষ্টি তরমুজ ভাবতেই কেমন জিভে জল এসে গেলো, তাই না? এটি এমন একটি ফল যা একদিকে দেখতেও যেমন সুন্দর, তেমনি খেতেও অসাধারণ সুস্বাদু, আবার তরমুজের স্বাস্থ্য উপকারিতাও প্রচুর।
তরমুজের উপকারিতা –
তরমুজ একটি সুস্বাদু ও রসালো ফল যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমানে পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, সি ও বি। কিন্তু যার জন্যে তরমুজের উপকারিতা আরও বেশি হয়ে ওঠে তা হল লাইকোপেন নামে এক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যার ফলে তরমুজের রং এতখানি লাল হয়ে থাকে। তরমুজে উপস্থিত এই লাইকোপেন বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে যা স্ট্রোকের সম্ভাবনা অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বেশ কার্যকরী। যদিও অন্যান্য অনেক ফলের মত এতে ফাইবারের পরিমান অতখানি নেই, কিন্তু এতে ক্যালোরির পরিমান খুবই কম যা শরীরে ফ্যাট জমতে দেয়না ও জলের পরিমান বাড়িয়ে দেয়।
সুগার বেবি তরমুজ
নীচে বিস্তারিত ভাবে তরমুজের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে দেওয়া হল।
১. হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে:
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে তরমুজের উপকারিতা এতটাই যে প্রতিদিন অন্তত এক টুকরো করে তরমুজ খেলে নিষ্প্রয়োনীয় ও ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলকে দূরে রাখা যায় যা হার্ট সংক্রান্ত রোগগুলিকে প্রতিরোধ করতে পারে। তরমুজে উপস্থিত সিট্রোলিন হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই ভাল। কারণ মহিলাদের মেনোপজ হওয়ার পর যে মাঝে মাঝে ধমনী শক্ত হয়ে যায় যা ব্যাথার সৃষ্টি করে, সেটি রোধ করতে সাহায্য করে এই সিট্রোলিন।
২. হজম ক্ষমতা বাড়াতে:
তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমানে জল যা হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া এতে রয়েছে ফাইবার যা কোষ্টকাঠিন্য দূর করে ও খাবার হজম করিয়ে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
৩. ওজন কমানোর জন্য:
তরমুজের সবথেকে বড় উপকারিতা হল এটি ওজন কমানোর জন্যে কার্যকরী জানা যায় কারণ তরমুজে জলের পরিমান খুবই উচ্চ। এর ফলে বিপাক ক্রিয়া সঠিক থাকে ও শরীরকে নানা ধরণের বিষক্রিয়া পদার্থ ও ফ্যাট থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে, যা ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে।
একটি তরমুজের বড় টুকরোয় মাত্র ৮৬ ক্যালোরি, ২২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ১ গ্রামের থেকেও কম ফ্যাট থাকে এবং কোনোরকম কোলেস্টেরল থাকে না। এটি আপনার শরীরের প্রতিদিনের ফাইবারের প্রয়োজনীয়তাকে ৫% মেটায় যা শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।
৪. শরীর আর্দ্র রাখতে:
তরমুজে রয়েছে ৯০% জল যা শরীরকে বেশ আর্দ্র রাখে। ফলে প্রস্রাবের পরিমান ঠিক থাকে এবং কিডনিতে চাপ পড়ে না।
৫. ক্যান্সার রুখতে:
তরমুজে থাকা লাইকোপেন ক্যান্সারের প্রবণতা অনেকটা কমিয়ে আনে। এই লাইকোপেনের জন্যেই তরমুজের রং গাঢ় লাল হয় এবং এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর যা ক্যান্সার রোধ করে। দুই কাপ তরমুজে রয়েছে ২০ গ্রাম লাইকোপেন যা নানা ধরণের ক্যান্সারের বিরুধ্যে লড়াই করতে সাহায্য করে। প্রস্ট্রেট ক্যান্সারের জন্যে লাইকোপেন কেমো থেরাপির মত কাজ করে যা সহজেই ক্যান্সারের কোষগুলি নষ্ট করে দেয় বলে জানা গেছে। তবে এই ব্যাপারে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৬. মাংস পেশী ঠিক রাখতে:
ব্যায়াম বা জিম করার পর মাংস পেশীতে যখন ব্যাথা করে তখন ইলেকট্রোলাইট ও অ্যামাইনো অ্যাসিড ভরপুর সিট্রোলিন ( l-Citrulline) আরামদায়ক একটি ঔষধির কাজ করে। তরমুজে রয়েছে এই সিট্রোলিন যা মাংস পেশির ক্লান্তি দূর করতে সক্ষম বলে জানা গেছে। তাই তরমুজ খেলে শরীরে জমে যাওয়া ল্যাকটিক অ্যাসিড দূর হয় ও মাংস পেশি সচল রাখে। তাই তরমুজের উপকারিতা পাওয়ার জন্য এর রস পান করার অভ্যেস করা যেতেই পারে।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
তরমুজ ভিটামিন সি তে সমৃদ্ধ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি ৬ যা অ্যান্টিবডি গঠন করতে সাহায্য করে। এর ফলে শ্বেত রক্ত ক্ষণিকা সঠিক পরিমানে তৈরী হয়। তরমুজে থাকা ভিটামিন এ শরীরকে নানা ধরণের সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে।
৮. হাঁপানির ক্ষেত্রে:
তরমুজে উপস্থিত লাইকোপেন নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ যা শরীরের নানা সমস্যা যেমন ঠান্ডা লাগা ও জ্বর প্রতিরোধ করে। এমনকি বয়স্কদের ক্ষেত্রেও তরমুজ হাঁপানির সমস্যা কম করতে পারে।
৯. কিডনির সুরক্ষা:
যদিও তরমুজে পটাশিয়াম রয়েছে, কিন্তু অন্যান্য ফলের তুলনায় এতে পটাসিয়াম মাত্রা বেশ কম যার ফলে কিডনির সমস্যায় ভোগা মানুষদের জন্যে এটি খুবই কার্যকরী। কিডনির সমস্যা থাকলে কম পটাসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়াই উচিত এবং এক্ষেত্রে তরমুজ অনায়াসে আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন।
১০. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে:
তরমুজে রয়েছে উচ্চ পরিমানে সিট্রোলিন যা উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনতে দারুন কার্যকরী।
১১. চোখের জন্যে:
তরমুজ ভিটামিন এ তে পরিপূর্ণ যা চোখের জন্যে খুব প্রয়োজনীয়। ভিটামিন এ দৃষ্টি শক্তি প্রখর করে ও বয়সকালে দ্রুত ছানি পড়া রোধ করে। ফলে আপনি অনেক দিন পর্যন্ত স্পষ্ট দৃষ্টি শক্তির অধিকারী হতে পারেন নিয়মিত তরমুজ খেলে।
১২. ডায়াবেটিসের জন্যে:
হয়তো শুনতে অবাক লাগবে যে ডায়াবেটিস কমাতে তরমুজের ভূমিকা আছে জানলে? আসলে তরমুজের শর্করার পরিমান কম থাকে এবং এছাড়া তরমুজে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ও সঙ্গে অ্যান্টি ডায়াবেটিক উপাদানও। কিন্তু এ ব্যাপারে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে।
১৩. গরমে স্ট্রোক আটকাতে:
শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও প্রচন্ড তেষ্টা মিটিয়ে তরমুজ শরীরে জলের পরিমান ঠিক রাখে। এর ফলে গরমে স্ট্রোক ( Heat stroke ) হওয়া রোধ করা সম্ভব হতে পারে।
১৪. হাড়ের স্বাস্থ্য:
হাড়ের সুস্বাস্থের জন্যে ভিটামিন সি খুব প্রয়োজনীয় কারণ এটি হাড়ের ছোট খাটো সমস্যা খুব সহজেই দূর করতে পারে। তরমুজ খাওয়ার ফলে অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের চিড় ধরা রোধ করা যায়। এছাড়া হাড়ের বৃদ্ধিতেও এর প্রভাব আছে বলে জানা যায়।
১৫. মাড়ির জন্যে:
তরমুজে থাকা ভিটামিন সি মাড়ির জন্যে খুবই ভালো। ভিটামিন সি এর অভাবে মাড়ি থেকে রক্তপাত ও মাড়ির ফোলাভাব দেখা যায় যা তরমুজ নিয়মিত খেলে অনায়াসে কমতে পারে। তরমুজ এমনকি মুখের ভেতরের ব্যাকটিরিয়া ও মাড়ির সংক্রমণও রোধ করতে সাহায্য করে।
বারি জাতের তরমুজ ক্ষেত
১৬. কোষ নষ্ট হওয়া আটকায়:
লাইকোপেনে সমৃদ্ধ তরমুজ শরীরের কোষগুলিকে হার্টের রোগ সংক্রান্ত ক্ষতির থেকে রক্ষা করে।
১৭. গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে:
গর্ভাবস্থার সময় বুকে জ্বালা ভাব হওয়া খুব সাধারণ। এছাড়া সকালে উঠে গর্ভবতী মহিলাদের অসুস্থ বোধ করতেও দেখা যায়। এই সবকিছু তরমুজ খেলে অনেকটা রোধ করা যায়। এমনকি গর্ভাবস্থার শেষের দিকে মাংস পেশিতে ব্যথা হওয়া রোধ করতে পারে এই তরমুজ।
১৮. ফোলাভাব দূর করে:
তরমুজে লাইকোপেন ছাড়াও রয়েছে আন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা শরীরের সংক্রমণ ও ফোলাভাব দূর করতে সাহায্য করে।
১৯. শক্তি বাড়ায়:
তরমুজ হল ভিটামিন বি তে ভরপুর যা শরীরে শক্তি প্রদান করে বলে জানা যায়। কম মাত্রায় ক্যালোরি থাকার ফলে এটি শরীরে যথার্থ পুষ্টি প্রদান করে শরীরে শক্তির যোগান দেয় যা আপনাকে সারাদিন তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া তরমুজে থাকা পটাশিয়াম শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের কাজ করে।
তরমুজের ক্ষতিকারক দিক –
যতই উপকারিতা থাকুক না কেন, যে কোনো জিনিসই অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে ক্ষতি হতে পারে, তেমনি তরমুজ খাওয়ারও সঠিক নিয়ম আছে। তরমুজ অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে কি কি ক্ষতি হতে পারে তা এমন-
১. পেটের সমস্যা:
তরমুজে রয়েছে ভরপুর মাত্রায় লাইকোপেন যা অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে পেটের নানারকমের সমস্যা দেখা দেয় যেমন বমি, পেট খারাপ, হজমের সমস্যা, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি।
২. হাইপারক্যালেমিয়া:
হাইপারক্যালেমিয়া এমন একটি রোগ যেখানে শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক মাত্রায় পটাশিয়াম বেড়ে যায়, যা অতিরিক্ত পরিমান তরমুজ খেলে হতে পারে। এর ফলে হার্টের সমস্যা যেমন অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ও দুর্বল নাড়ি, ইত্যাদি সমস্যা হয়।
৩. অ্যালার্জি:
যাদের তরমুজ খেলে অ্যালার্জি হয়, তাদের কোনোভাবেই তরমুজ খাওয়া উচিত না। এতে শরীরে চুলকানি, ত্বকের লালচে ভাব দেখা যায়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধিক পরামর্শ গ্রহণ করতে অভিজ্ঞ ভেষজবিদ এর মতামত নেয়া আবশ্যক।
# ড. রতন চৌধুরী: নিসর্গবিদ, উদ্ভিদ গবেষক ও কবি