চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়িয়ে লোডশেডিং বন্ধের দাবি জানিয়েছে ক্যাব চট্টগ্রাম

দেশব্যাপী প্রচন্ড ধাবদাহে পুরো দেশ যখন জ¦লে পুড়ে আঙ্গার, সেখানে দেশে বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের এলাকাগুলিতে চলছে বিদ্যুত ও পানির জন্য হাহাকার। বিদ্যুত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুৎ প্রয়োজন ১১০০ মেগাওয়াট, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট।  আর একারনে পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে লোডশেডিং বেড়েছে প্রচন্ড আকারে। আর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ বিভিন্ন শিল্প, কলকারখানা, দোকানপাট, শপিংমল ও বাসাবাড়ী। জানা যায় গ্রামাঞ্চলে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ। বিদ্যুত একবার গেলে আর আসার খবর থাকে না। এদিকে রমজানের পুর্বে বিদ্যুত, পানি ও গ্যাস কর্তৃপক্ষ ভোক্তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলো রমজানে বিদ্যুত, পানি ও গ্যাস নিয়ে সংকট হবে না। কিন্তু রমজান মাস পার না করতে বিদ্যুত ও পানির সংকট মারাত্মকভাবে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। তাই জরুরিভাবে চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি। দেশব্যাপী প্রড়ন্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ জনগন ভয়াবহ লোডশেডিং এ কবলে পড়ে জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যহত হবার কারনে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উপরেক্ত দাবি জানান।

১৮ এপ্রিল ২০২৩ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ-সভাপতি সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রচন্ড-তাপদাহে স্বাভাবিক জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সেখানে বিদ্যুতের লোডশেডিং মানুষের দুর্ভোগের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় বেশ কিছুদিন ধরে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি চলছে। বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং বাড়ছে। বাড়ছে বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের কষ্ট সীমাও। বিদ্যুত বিভাগ সুত্রে জানা যায় চট্টগ্রামে ছোট-বড় ২৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। এর মধ্যে ১৩টি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এর মাঝে কাপ্তাই লেকের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানির অভাবে ৪টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চট্টগ্রামে চালু রয়েছে ১১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫৮ মেগাওয়াট। কিন্তু এসব কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৬৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর মধ্যে খুঁড়িয়ে চলছে ৬টি। অপরদিকে উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদনে চলছে ৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র।  কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এখন মাত্র ১ নম্বর ইউনিটে (৪৬ মেগাওয়াট) ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াটের ২টি (প্রতিটি ২১০ মেগাওয়াট করে) বিদ্যুৎ কেন্দ্র দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। শিকলবাহা ২২৫ মেগওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে অনেক দিন ধরে। একই সাথে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও অনেক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটিও অনেক দিন থেকে বন্ধ। ২৪ মেগাওয়াটের রিজেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জি প্যাক বন্ধ। এদিকে বছরের পর বছর ধরে টেকনাফ সোলার প্ল্যান্ট ও কাপ্তাই সোলার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। তাই নামে মাত্র তালিকার বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র তালিকায় না রেখে এগুলোকে সচল করা যেমন দরকার তেমনি বৃহত্তর চট্টগ্রামে ঘাটতি বিদ্যুত সংকট মেটাতে জরুরিভাবে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুত সরবরাহ বাড়ানো উচিত।

এছাড়াও নগর জুড়ে পানির হাহাকারে জনজীবন আরও অতিষ্ঠ। পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা একের পর এক নিত্যনতুন প্রকল্প হাতে নিলেও লবনাক্ততা ও সুপেয় পানির পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারে নি। আর মাস গেলেই ঋনের কিস্তি পরিশোধসহ নানা বাহারী অজুহাতে পানির মূল্যবৃদ্ধির খড়ক দিয়ে ভোক্তাদেরকে বিপর্যস্ত রেখেছে। নগরবাসী সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম বন্ধে সরকারের আশু উদ্যোগ কামনা করে। নতুবা জনঅসন্তোষ ক্রমশঃই দানা বাঁধবে।