বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (৮৯): শাহবাগ ও একুশ

– বিজন সাহা   

বিজন সাহা (ফাইল ছবি)

একুশ নিয়ে বলতে গিয়ে বার বার উঠে এসেছে শাহবাগ আন্দোলনের কথা। কাকতালীয় ভাবে এর শুরু ফেব্রুয়ারি মাসে। এ বছর সেই আন্দোলনের ১০ বছর পূর্তি হল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাকে বলা যায় দ্বিতীয় গণ আন্দোলন। যদি আমরা ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখব গণ আন্দোলনগুলো ছিল দীর্ঘ সময় ধরে চলমান বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি আকারের প্রতিবাদের চূড়ান্ত পর্যায়। বাহান্নর শুরু ছিল ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের উর্দু ও ইংলিশের পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি, ছিল ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ – যা ছিল প্রায় সর্বশক্তিমান জিন্নাহর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ। ভাষা আন্দোলন পরবর্তীতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে যার ফলস্বরূপ পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে, যদিও আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসে সেটা বাতিল করে। এরপর ১৯৬২ ও ১৯৬৬ সালের আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আর এর হাত ধরে আসে ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বিজয় যার চূড়ান্ত রূপ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ। সে সময়েও পাকিস্তানপন্থী লোকের অভাব ছিল না, অভাব ছিল না তাদের পেছনে সরকারি মদতের। কিন্তু বিরোধীরা ছিল ঐক্যবদ্ধ, যাদের সবার একটাই লক্ষ্য ছিল – স্বাধীনতা। আর লক্ষ্য এক ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ করা। এটা ঠিক যে স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে বিভিন্ন দলের মধ্যে মতের পার্থক্য ছিল, কিন্তু যতক্ষণ না দেশ স্বাধীন হচ্ছে – ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ছিল ঐক্যবদ্ধ। আর এই জাতীয় ঐক্যই ছিল পাকিস্তান বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে সাফল্যের পেছনে মূল কারণ। কিন্তু স্বাধীনতার পরে আন্দোলনের পটভূমি বদলে যায়, বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতার পরে প্রথম গণ অভ্যুত্থান হয় ১৯৯০ সালে। ১৯৮৩ সাল থেকেই অবশ্য এই আন্দোলন শুরু। বরাবরের মত ছাত্ররাই এতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তখন সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয় এরশাদের সামরিক ও আধা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে। আর সেই আন্দোলন চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে। ১৯৯১ থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় বত্রিশ বছর ক্ষমতার বদল হচ্ছে মূলত নির্বাচনের মাধ্যমে আর সেটা সেই ১৯৯০ এর গণ অভ্যুত্থানে বিজয়ের ফল। পরবর্তী পর্যায়ে সে ধরনের আন্দোলন গড়ে ওঠে ২০১৩ সালে – শাহবাগে। সেই আন্দোলন অবশ্য শুরু হয় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে, মূলত ব্লগার ও অনলাইন আক্টিভিস্টদের দ্বারা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে। সেটা অবশ্য ছিল নিমিত্ত মাত্র। আসল যে আকাঙ্ক্ষা কাজ করেছে তা ছিল রাজনীতি থেকে সাম্প্রদায়িকতা হঠানো, স্বাধীনভাবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার অধিকার, মুক্তমনে চিন্তা করা ও সেটা প্রকাশ – এক কথায় মৌলবাদের নাগপাশ থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিকে মুক্ত করা। অল্প দিনের মধ্যেই সেই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। লাখ লাখ মানুষ সেই আন্দোলনকে সমর্থন করে। এমনকি বিদেশের মাটিতে বসে আমরাও মিটিং মিছিল করেছি শাহবাগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে। এটা অবশ্য সব সময়ই ঘটেছে। একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামের সময়ও যারা বিদেশে থাকত তারা বিভিন্ন ভাবে সমর্থন যুগিয়েছে। তবে তখন বাঙালি ডায়াস্পোরা এত বড় ছিল না আর বর্তমানের মত টেকনলজিক্যাল সুযোগ সুবিধাও ছিল না। আমার এখনও মনে আছে এই আন্দোলন মস্কোর বাংলাদেশিদের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করে। এই আন্দোলন ছিল ১৯৯০ সালের এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে ভিন্ন। প্রথমত এটা সরকার বিরোধী আন্দোলন ছিল না যদিও সরকারের কাছে ন্যায্য বিচারের দাবি ছিল। এই আন্দোলন পরোক্ষ ভাবে হলেও বিএনপি ও প্রত্যক্ষ ভাবে জামাত বিরোধী ছিল। কারণ বিএনপি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করলেও তার আমলেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির রাজনীতিতে পুনর্বাসন ঘটে। তাছাড়া পূর্ববর্তী নির্বাচনে বিএনপি জামাতের সাথে আঁতাত করে এবং অনেক চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রীত্বের আসনে বসায়। অন্য দিকে মামলার আসামী ছিল মূলত জামাতের উচ্চ পর্যায়ের নেতারাই। তাই এর আগে বিভিন্ন আন্দোলনের বিপরীতে এই আন্দোলন ছিল প্রথম থেকেই দ্বিধাবিভক্ত। আন্দোলনের পেছনে জনসমর্থন প্রমাণ করে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি সুপ্ত ছিল। ফলে ধীরে ধীরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনের সমর্থনে  এগিয়ে আসে। অন্য দিকে বিএনপি সমর্থন দেওয়া তো দূরের কথা এই আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন আখ্যা দিয়ে এর বিরোধিতা করে। পরবর্তী পর্যায়ে একাত্তরের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনমনীয়তার কারণে ঐক্য ভেঙে যায়। যদি পাকিস্তান আমলে সবার লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সামরিক শাসন হঠানো, এবার ছিল ক্ষমতার হাতছানি। আর ক্ষমতা কেউ ভাগাভাগি করতে চায় না। ফলে কোন্দল ছিল অনিবার্য। দুঃখের বিষয় এই যে শাহবাগ আন্দোলনকে সামনে রেখে দেশে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি একাত্তরের চেতনায় বিশ্বাসী এক শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক দল বা মোর্চা গড়ে উঠতে পারত যেটা হয়নি। হয়নি দেশের রাজনীতিবিদদের দূরদর্শিতার অভাবে, হয়নি ক্ষমতার লোভের কারণে, দেশের চেয়ে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবার কারণে। ফলে কাদের মোল্লার ফাঁসির মত আশু দাবি আদায় হলেও আমরা পিছিয়ে পড়ি। আওয়ামী লীগ হেফাজতের মত মৌলবাদী শক্তির সাথে আঁতাত করে দেশকে আসলে রাজনৈতিক ভাবে পিছিয়ে নিয়ে যায়। এই প্রথম কোন আন্দোলনের নেতারা প্রায় হারিয়ে যায় – লাকি আক্তারের মত কেউ কেউ ছাত্র রাজনীতি থেকে মূল রাজনীতিতে যোগ দিয়ে, ইমরান এইচ সরকারের মত কেউ কেউ রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়ে, সুপ্রীতি ধরের মত কেউ কেউ দেশত্যাগে বাধ্য হয়ে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এই আন্দোলনের কোনই পজিটিভ দিক নেই। এর ফলে আমরা দেখলাম ছাত্র রাজনীতিকে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় রাখার পরেও নতুন প্রজন্ম হারিয়ে যায়নি, দেশের মানুষ এখনও একাত্তরের চেতনার জন্য লড়াই করতে পারে। এই আন্দোলনকে ঘিরে নারীদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তৈরি হয়ে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল যেখানে মুক্তচিন্তার চর্চা করা হয়, নারী অধিকারের কথা বলা হয়। তবে অনেকেই সেসব দিন নিয়ে নস্টালজিক, কেউ কেউ বিমর্ষ সেই স্পিরিট ধরে রাখা গেল না বলে। আসলে আমি এ নিয়ে ভাবিত নই। সন্তানরা বড় হয়ে নিজের নিজের পথে চলবে, নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। এটাই নিয়ম। সেই আন্দোলনকে ঘিরে যে জোয়ার এসেছিল সেটাকে ব্যবহার করে অনেকেই পরে নীড় ছেড়ে নিজের নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছে, তুলছে। তাই এ নিয়ে মান অভিমানের সুযোগ নেই। হয়তো একদিন শাহবাগ থেকে বেরিয়ে আসা এমন মানুষই নতুন আন্দোলন গড়ে তুলবে।

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (৯০): রুচির সংকট -বিজন সাহা

ইতিহাসের কথা ছিল সে সমাজের বিবর্তনের ধারাবাহিকতার গল্প বলবে আগামী প্রজন্মের জন্য। কিন্তু সে প্রায়ই সেই ইতিহাস ভুলে যায়। লেখে সেই গল্প যা বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের ইমেজ তৈরিতে সহায়ক হয়। তাই বর্তমানে ইতিহাস ইমেজ মেকার, সুদূর ভবিষ্যতের জন্য নয় অদূর ভবিষ্যতকে কন্টকমুক্ত করার হাতিয়ার। ফলে মানুষ সেখানে হারিয়ে যায়। থাকে কিছু কিছু মানুষের কথা। এটা আমরা বার বার দেখেছি। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির কথা বললেও এর পূর্ববর্তী বা পরবর্তী ইতিহাস ততটা আর বলা হয় না।  বিশেষজ্ঞরা সেটা জানলেও সাধারণ মানুষ খুব কমই জানে। হারিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান আমলের বিভিন্ন ইতিহাস। ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান নিয়ে তেমন আর বলা হয়, না জাতীয় ভাবে না দলীয় ভাবে এসব আন্দোলনের স্মৃতিকে তেমন একটা স্মরণ করা হয় না। অথচ একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ পথে এসবই ছিল এক একটা মাইল স্টোন। আজ যে আমরা প্রায় তিন দশকের বেসামরিক শাসনের কথা বলি এর পেছনে ছিল ৯০ এর গণ অভ্যুত্থান। সেটাকেই আমরা কতটুকু লাইম লাইটে নিয়ে আসি।

শাহবাগ আন্দোলনকে নস্যাৎ করার মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষ যে কি পরিমান সুযোগ হাতছাড়া করেছে তা বলে বুঝানো যাবে না। এবং এটা যে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীরাই বিভিন্ন দলে ঢুকে করে নাই সেটাও হলফ করে বলা যাবে না। এইতো তার রেশ ধরে নেমে এল ব্লগারদের উপর আইনের খাড়া, যদিও পার পেয়ে গেল আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দোষী অনেকেই। দেশ স্বাধীন হবার আগে সবাই আওয়ামীলীগ করত না। তবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন দল মিলে পেরেছিল একের পর এক আন্দোলন করতে, দেশটাকে স্বাধীন করতে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এখন আর সেই মাপের নেতা নেই, যারা দলের উপরে দেশটাকে দেখবে, তাৎক্ষণিক স্বার্থের উপরে দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থকে স্থান দেবে। এটা শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বেরই সমস্যা। অনেক সময় ভাবি কেন রবীন্দ্রনাথের মত বা পুশকিনের মত আর কোনো কবি হলো না? এটাও হয়তো অতীতকে বড় করে দেখার প্রয়াস। তাছাড়া পরাধীন দেশের রাজনীতি একরকম, স্বাধীন দেশের আরেক রকম। বিরোধী দলের রাজনীতি একরকম, সরকারী দলের অন্যরকম। রাশিয়ায় একটা কথা আছে – “ঋণ শোধ করা খুব কষ্টের। মানুষ ঋণ নেয় অন্যের টাকা আর শোধ করতে হয় নিজের টাকা দিয়ে।” বিরোধী দল সরকারের সমালোচনা করেই খালাস। ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেয় জনগনকে, আর এর বিনিময়ে ধার নেয় তাদের আস্থা – বিশ্বাস, যেটা পায় ভোটের মাধ্যমে। ভোটের আগে সে তার দলের নেতা, ক্ষমতায় এলে দলমত নির্বিশেষে সে সবারই নেতা (প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী)। তাই ঋণ শোধ করার প্রশ্ন এলে তাকে সবার কাছেই ঋণ শোধ করতে হয়, শুধু নিজের দলের লোকদের কাছেই না। তারপর বাইরে থেকে যেটা সোজা মনে হয় আর সোজা মনে করে প্রতিশ্রুতি দেয়া যায়, ভেতরে ঢুকে দেখা যায় কাজটা অনেক অনেক কঠিন, অনেক কিছু বিবেচনায় এনে তবে কাজটা করতে হয়। আর এ জন্যেই বোধ হয় সরকারী ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠা এত কঠিন। কেননা এখানে অনেক রকম পরস্পর বিরোধী স্বার্থ থাকে। এটা ঠিক মত না বোঝার কারণও শাহবাগ আন্দোলনের অপমৃত্যুর পেছনে দায়ী। অভিজিৎ রায়ের হত্যা কান্ড আবার সবাইকে এক করতে পারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। যে যুবকেরা অভিজিৎদের হত্যা করেছিল তারা বাংলাদেশেরই, খুব সম্ভবত তাদের জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশেই। এই যে তারা খুনি হচ্ছে, সেটাও আমাদের রাজনীতিরই ফসল। ভোটের চিন্তা করে আমরা জাতিকে বার বার যুদ্ধের মুখোমুখি ঠেলে দিয়েছি। বিভিন্ন গোষ্ঠির মধ্যে ঘৃণা আজ এত বেশী যে তা সাপের বিষকেও  হার মানায়। আর ঘৃণা যখন হয় কোন জাতির চালিকা শক্তি, তখন সে জাতির ভবিষ্যত অন্ধকার। আজ আসলে কে যে শত্রু আর কে মিত্র সেটা বোঝা কষ্ট। মিত্র রূপে কত শত্রু যে সুযোগের অপেক্ষায় আছে! আর সেটা করছে চারিদিক চাটুকারে ছেয়ে গেছে বলে। আজ কথায় কথায় এসব মানুষ শেখ হাসিনার জয়গান করে। কিন্তু এদের মধ্যে কয়জন হাসিনা বলে আর কয়জন বলে “হাসি না”, কয়জন শেখ হাসিনা বলে আর কয়জন বলে “শেক (shake)” হাসিনা – সেই খবর কি কেউ রাখে? একথা যেমন আওয়ামী লীগের জন্য সত্য, তেমনি সত্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও। আর এসবই হচ্ছে বা হতে পারছে অপরাজনীতির ঘোলা জলে। আর সেই সুযোগ করে দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোই।

একুশের লড়াই ছিলো বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে, বাংলাদেশকে ভালোবেসে, বাংলা সংস্কৃতিকে ভালোবেসে – কারও প্রতি ঘৃণা থেকে নয়। আজ আমাদের মধ্যে ভালোবাসার থেকে ঘৃণাই বেশী। আর ঘৃণা যখন হয় একমাত্র পুঁজি তখন যুক্তি-তর্ক এসবের স্থান নেয় রামদা, কিরিচ আর কালাশনিকভ। আশা করি যেসব মানুষ বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্যকে, সবার উপর মুক্ত চিন্তার পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন তাদের রক্ত আমাদের আবার ভালোবাসতে শেখাবে, এক হতে শেখাবে, সাম্প্রদায়িক ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শেখাবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, আর পেছনে ফেরার পথ নেই। একুশই আলো হাতে আমাদের পথ দেখাতে পারে। বাকি শুধু সামনে পথ চলা। রাষ্ট্র বদলায়, রাষ্ট্রের প্রায়োরিটি বদলায়, বদলায় রাষ্ট্রের রাজনীতি কিন্তু জন্মভূমি থেকে যায়। মানুষ সবার উপরে জন্মভূমির সন্তান।
গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, দুবনা
শিক্ষক, গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, মস্কো, রাশিয়া