চলমান সংবাদ

কিছু অবহেলা চিহ্নিত, ৯ সুপারিশ

-সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ বিরল দুর্ঘটনা, কাজে নেমে তদন্ত কমিটিও শিখেছে

অক্সিজেন প্ল্যান্টে দুর্ঘটনা বিরল। সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের দুর্ঘটনাটি বাংলাদেশে প্রথম অক্সিজেন প্ল্যান্ট দুর্ঘটনা। শুধু তাই নয়, গত এক দশকে সারা পৃথিবীতে এ নজির চার থেকে পাঁচটির বেশি নেই। ‘দেশে বিরল’ এ ঘটনা তদন্তে নেমে আমাদের অনেক গভীরে যেতে হয়েছে। সে কাজ করতে গিয়ে নতুন অনেক কিছু শিখেছে তদন্ত টিম। গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি জানান, মূলত টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজের প্রয়োজন থাকায় তদন্ত কাজ শেষ করতে পাঁচ দিনের জায়গায় ১০ দিন লেগেছে। যেহেতু অক্সিজেন্ট প্ল্যান্টের ঘটনা দেশে আর ঘটেনি সেজন্য টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজের প্রয়োজন হয় এবং তদন্ত টিমের সাথে নতুন করে দুজনকে যুক্ত করা হয়। এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে নতুন অনেক জিনিষ শেখা হয়েছে আমাদের।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান এর আগে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের হাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। ৮ পৃষ্ঠার সেই তদন্ত প্রতিবেদনে ৯টি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কিছু অবহেলা ও গাফিলতি চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে বিস্ফোরণের কারণ ও সুপারিশ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এবং তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক দুজনের কেউ বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।

তদন্ত টিমের আহ্বায়ক রাকিব হাসান বলেন, সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট দুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের কিছু অবহেলা, কিছু ঘাটতি অবশ্যই ছিল; যার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ পর্যন্ত এতটুকু রাখি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে পুরো প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা আপনাদের পরে জানানো হবে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এসব সুপারিশ সরকার অবশ্যই বাস্তবায়ন করবে। পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কী করা যেতে পারে, তা আমরা সুপারিশ করেছি প্রতিবেদনে। এর মধ্যে যেগুলো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাস্তবায়ন সম্ভব তা করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, পরবর্তীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য আমরা কাজ করছি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে যতগুলো অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে সবগুলোকে নিয়ে আমরা একটা ওয়ার্কশপ করব, কীভাবে নিরাপদে অক্সিজেন প্ল্যান্ট পরিচালনা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে।

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানও কথা বলেন সাংবাদিকদের সাথে। তিনি বলেন, সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের ঘটনার পর আমরা ভারী ও মাঝারি শিল্পের জন্য মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি। চট্টগ্রামে যে অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে সেগুলোর জন্য একটি ম্যানুয়েল তৈরি করতে চাই। একটি বড় প্রতিষ্ঠান, যাদের কমপ্লায়েন্স ভালো তারা এগিয়ে এসেছে। সব অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে ২–৩ জন করে প্রতিনিধিকে সাথে নিয়ে আগামী ২০ মার্চ একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করব। কোন পর্যায়ে কোন ধরনের লোকবল কাজ করবে, সেগুলোসহ সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ যেসব কারখানা আছে সেগুলোতে ২–৩ দিনের মধ্যে পরিদর্শন শুরু হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোও উদ্যোগ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন তদন্ত টিমের সদস্য জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবদুল হালিম।

গত ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি এলাকার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৭ জন নিহত হয় ২৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়।