বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (৮৫): একুশের আয়নায় স্বদেশ

-বিজন সাহা

গত একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্ব পালন করল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সে উপলক্ষ্যে অনেক লেখালেখি, নতুন করে ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানো। আমরা নিজেরাও নিজেদের মত করে দিনটি পালন করলাম। তবে এবার গতানুগতিক অনুষ্ঠানের বাইরে ছিল রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় লাইব্রেরির (লেনিন লাইব্রেরি) প্রাচ্য বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে বাংলা বই আর বাংলাদেশের উপর ছবির প্রদর্শনী। যেহেতু এখানে বাঙ্গালিদের মধ্যে আমি কমবেশি সিরিয়াসলি ছবি তুলি তাই আমাকে বলা হয়েছিল বাংলাদেশের ছবি দিয়ে একটা প্রদর্শনী করতে। ২০১১-১২, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে দেশে বেড়াতে গেলে যে ছবি তুলেছিলাম তা থেকে ৬২ ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। এই লাইব্রেরির বাঙালি কর্মী স্মিতা সেনগুপ্তের আয়োজিত এই বই প্রদর্শনীতে ছিল দুই বাংলার লেখকদের বই।  আর ছিল প্রথম দিকের বাংলা বই – ব্রিটেনে ছাপানো। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শামসুর রহমান ছাড়াও ছিল বঙ্গবন্ধুর উপরে বেশ কিছু গবেষণামূলক বই। ছিল যে সমস্ত রাশিয়ান নাগরিক বাংলাভাষা ও ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছেন তাদের বিভিন্ন উপস্থাপনা। সবচেয়ে ভালো লেগেছে মস্কোর বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউটের বাংলা বিভাগের ছেলেমেয়েদের “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” আর “আমি বাংলায় গান গাই” গান দুটি বাংলা ও রুশে পরিবেশনা। অন্যান্যদের সাথে সেন্টারের ডাইরেক্টর মারিনা মেলানিনা আর তরুণ কর্মী দানিয়েলের সার্বিক সহযোগিতা অনুষ্ঠানটি সফল করে তোলে। রুশ অতিথিবৃন্দ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান আর দুই বাংলার অনেক মস্কোবাসী বাঙালি। তবে আজকে আমরা কথা বলব আরও কিছু বিষয় নিয়ে।

রাশিয়ার পিতৃভূমির যুদ্ধ শেষ হয়েছে ১৯৪৫ সালের ৯ মে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন নামক সেই বিশাল দেশ ভেঙ্গে জন্ম নিয়েছে ১৫ টি আলাদা দেশ, কিন্তু রুশ জনগণের তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি ঋণ স্বীকারে এখনও ঘাটতি নেই। প্রায় প্রতি বছর বিভিন্ন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দল, যাদের একটা বড় অংশ তরুণ তরুণী – শুধু রাশিয়া নয়, পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যায় যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের দেহাবশেষ খুঁজতে। সেজন্য তারা বিভিন্ন উৎস থেকে, তা সে অফিসিয়াল ডকুমেন্ট হোক, বিভিন্ন সৈনিক বা তাদের আত্মীয়দের ডাইরি বা পারিবারিক গল্প হোক, পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে স্টাডি করে আর প্রতি বছরই কিছু না কিছু খুঁজে বের করে। আমার বাসার সামনেই একটা যুদ্ধ বিমান – যা পঁচাত্তর বছর আগে এক ডোবায় পড়েছিল শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে করতে – সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। এরা বলে শেষ সৈনিকের সমাধি না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হয় না। আর সে কারণেই তারা এসব হারিয়ে যাওয়া মানুষদের খুঁজে বেড়ায়, ইতিহাসকে জীবন্ত করে রাখে নিজেদের মনে। প্রতি বছর ৯ মে বিজয় দিবসে যুদ্ধে বা পরবর্তীতে যেসব সৈনিক মারা গেছেন, তাঁদের ছবি হাতে মিছিল করে রাস্তায় নামে লাখ লাখ মানুষ «অমর বাহিনী» নামে।

একুশ উপলক্ষ্যে অনেক লেখা বেরিয়েছে বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায়। ভালোভাষা নামে এক পত্রিকায় দুটো লেখা বেড়িয়েছে। মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়ের লেখায় সেই সময়ের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য ব্যবহার করে জানানো হয়েছে যে একুশের শহীদদের সংখ্যা আরও বেশি। এমনকি সেটা চল্লিশ জন পর্যন্ত হতে পারে বলেও মত প্রকাশ করা হয়েছে সেই সময়ে চট্টগ্রামের কবি মাহবুব আলম চৌধুরীর কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে। এটা ছিল একুশকে নিয়ে লেখা প্রথম কবিতা। বলা হয়েছে সে সময় অনেক লাশ পুলিশ গুম করে। আহত হয় কয়েক শ’ মানুষ। যদি ভুল না করি পুলিশের লাশ গুমের কথা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও বলা হয়েছে। বাহান্নর পরে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ছিল। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সরকারের হাতে নিশ্চয়ই পাকিস্তান আমলের অনেক গোপন দলিলপত্র এসেছে বা না এলে সরকার চাইলে পাকিস্তান সরকারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইতে পারে। ঐ লেখাটা পড়ে মনে হল আমরা কি আদৌ এসব সত্য উদ্ধার করতে আগ্রহী? কারণ বাহান্ন তো দূরের কথা এমনকি একাত্তর নিয়েও আমাদের ইতিহাস কতটা স্বচ্ছ সে ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন আছে। একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এখনও পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। বাহান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর – এসব ইতিহাস দেশের ইতিহাস, জাতির ইতিহাস, কোন দল বা গোষ্ঠীর ইতিহাস নয়। কিন্তু বিভিন্ন দল ক্ষমতায় এসে যেভাবে ইতিহাসকে নিজেদের মত করে সাজাতে চায় তাতে সন্দেহ জাগে তারা এই ইতিহাসে জনগণের অধিকার স্বীকার করে কি না। এ ব্যাপারে কয়েকদিন আগের একটা ঘটনা শিক্ষণীয়। এখন বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ আছে যেখানে লোকজন নিজেদের সাথে যোগাযোগ করে, মত বিনিময় করে। একজন প্রশ্ন করলেন “ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা কী?” ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে প্রশ্নটা মোটেও অপ্রত্যাশিত মনে হয়নি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি «অসমাপ্ত আত্মজীবনী» পড়ার আগে পর্যন্ত আমি বঙ্গবন্ধুর দেশভাগের আগের রাজনীতি সম্পর্কে জানতাম না, পাকিস্তান সৃষ্টিতে তিনি যে বিশাল ভূমিকা পালন করেছেন সেটা জানতাম না। আমাদের কাছে তিনি সবসময়ই ছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একজন আপোষহীন সংগ্রামী নেতা। সে যাই হোক, এরপরে অনেকেই লিখতে শুরু করল বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নেগেটিভ কোন মন্তব্য করা যাবে না। আমার কেন যেন মনে হল এখানেই আমরা ভুল করছি। যেটা হওয়া উচিৎ তা হল বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তো বটেই কারো সম্পর্কেই সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা কিছু বলা যাবে না। কারণ সত্য বলা বা মিথ্যা না বলা আর নেগেটিভ কিছু না বলার মধ্যে বিস্তর ফারাক। পাছে সমালোচনা করা হয় সেই ভেবে আমরা যদি সত্য চাপা দিয়ে রাখি সেটা ইতিহাস বিকৃত করে। আমি নিজের চোখেই দেখেছি সোভিয়েত ইউনিয়নে পিছে সমালোচনা করা হয় সেটা এড়াতে লেনিন সম্পর্কে অনেক সত্য এড়িয়ে যেতে। যার ফলে পরিবর্তিত বাস্তবতায় যখন সেসব বেরিয়ে আসে তখন লেনিনের ভাবমূর্তি যারপরনাই ক্ষুণ্ণ হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এই যে আমরা নিজেরা যারা এরকম করি তারাই আবার অন্যদের ইতিহাস বিকৃতির দোষে কাঠগড়ায় দাড় করাই।  উল্লেখ করা যেতে পারে যে আমাদের দেশে পাঠ্য পুস্তকে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে বলতে গিয়ে মূলত বাহান্নর একুশের ফেব্রুয়ারির মিছিলে পুলিশের গুলিতে রফিক, শফিক, সালাম, বরকত ও জব্বারের কথাই বলা হয়। এই শহীদদের মধ্যে শুধু বরকত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, আর রফিক দেবেন্দ্র কলেজের। কিন্তু এই আন্দোলন যে একদিনে গড়ে ওঠেনি, পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরপরই যে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান পার্লামেন্টে বাংলাকেও ইংরেজি ও উর্দুর রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি জানান, ভাষা প্রসঙ্গে ১৯৪৮ সালে ১১ মার্চ ছাত্র জনতা যে জিন্নাহর “উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা” এই ঘোষণার প্রতিবাদ করে – এসব ইতিহাস আমাদের কাছে কখনই সেভাবে তুলে ধরা হয় না, যেমন তুলে ধরা হয় না একুশে ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল করার পিছনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভুমিকার কথা বা ঐ সময়ের তাঁর গ্রেফতার হয়ে জেলে থাকার কথা। আরও একটা ব্যাপার, তা হল  ভাষা আন্দোলন শুধু ঢাকা, চট্টগ্রাম বা বড় বড় শহরেই সীমাবদ্ধ ছিল না, সেই আন্দোলন গ্রামে গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছিল। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বা তাদের অবদান সম্পর্কেও তেমন কিছু বলা হয় না সরকারি ইতিহাসে। আমার মনে হয় একেবারে ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েদের বাংলা ও ইতিহাস বইয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে একুশের বিস্তারিত ইতিহাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এসব করা হয় না বলেই এ ধরণের প্রশ্ন আসে, আসবে।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সমস্ত কিছুর মত একুশও আজ কমার্শিয়াল হয়ে গেছে। পাকিস্তান আমলের তো বটেই, এমনকি স্বাধীনতার পর পর বা জিয়া – এরশাদ – বিএনপির শাসনামলে একুশের যে আবেদন ছিল এখন সেটা নেই বলেই মনে হয়। হতে পারে যে আওয়ামী লীগ একাত্তরের পক্ষের দল বলে যে কথা প্রচলিত আছে সমাজে সে কারণেও একুশ এখন আর সংগ্রামের প্রতীক নয়। অথবা এ জন্যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও ভোগবাদী মনোভাব দায়ী। এখন পূজা বা ঈদের মতই একুশে, পয়লা বৈশাখে বা বিজয় দিবসে নতুন জামা কাপড়ের ফ্যাশন তৈরি হয়। একুশও এখন অন্যতম কমার্শিয়াল কমোডিটি তা সে রাজনৈতিক ভাবেই হোক আর অর্থনৈতিক ভাবেই হোক। ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের দিকে তাকালে দেখা যায় এখন বুদ্ধিজীবীরা একুশের চেতনা, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা ও তার উন্নয়নের চেয়ে বইমেলায় কার কটা বই আসছে সেটা নিয়েই বেশি চিন্তিত। যারা বই প্রকাশ করছেন আর যারা করছেন না তাদের কথায় মনে হয় এটাও অনেকটা এসএসসি ও এইচএসসি পরবর্তী জিপিএ ফাইভ পাওয়া না পাওয়ার মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য এতে শুধু লেখকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। প্রকাশকরা লাভ লোকসানের কথা চিন্তা করে বছরের অন্য সময় বই বের করতে চায় না। ফলে লেখকেরা বাধ্য হয়েই এই সময়ে বই প্রকাশের জন্য উন্মুখ হয়ে বসে থাকে। এখানেও সহিত্যের চেয়ে বানিজ্যই বেশি। একদিকে একুশকে ঘিরে উন্মাদনা বাড়ছে, একুশ আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, একুশ উপলক্ষ্যে দেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি সাহিত্য চর্চা হচ্ছে, শোক দিবসের তকমা কাটিয়ে একুশ আজ বাঙালি জাতির জন্য সুখ দিবসে পরিণত হয়েছে – কিন্তু একই সাথে কী রাজনীতি, কী সামাজিক – জীবনের প্রায় প্রতিটি স্তর থেকে একুশের চেতনা ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

ছাত্রজীবনে আমরা কোরাস গাইতাম

“ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়
ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে-পায়ে”

আমরা লড়াই করে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার বাঁচিয়ে রেখেছি, কিন্তু স্বাধীন দেশে প্রায়ই কথা বলার অধিকারই হারিয়ে ফেলছি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ, রাশিয়ার উদ্যোগে যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয় তখন কয়েকজন বক্তা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষায় শিক্ষার দাবি করেন। সরকারি কাজকর্ম বাংলায় করার আহ্বান জানান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু বাংলা ভাষায় শিক্ষা চালু করলেই তো হবে না। কেন আমরা ইংরেজি ভাষায় পড়তে চাই? কারণ আমরা শিক্ষা শেষ করে যোগ্য বেতনে কর্মসংস্থান চাই। আমরা চাই কাজের নিরাপত্তা, জীবনের নিরাপত্তা, সন্তানদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা, চাই ধর্ম পালন করা বা না করার অধিকার। দেশ এটা দিতে পারে না ও অনেক ক্ষেত্রে দিতে চায় না বলেই সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করা মেধাবী ছাত্রছাত্রী তো বটেই, এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ ভালো চাকরি ছেড়ে বিদেশে চলে যায়। তাই এটা একটা জটিল ব্যাপার, যা সমাধান করতে বহুমুখী ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে অবশ্যই ভাষা দিয়ে শুরু করতে হবে। কেননা বাংলাদেশের অঙ্কুর গজিয়েছে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তাই বাংলা ভাষা আর বাঙালির সংস্কৃতিকে ঘিরেই আমাদের জাতিকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে কিছুদিন আগে রুশ দুমা (পার্লামেন্ট) একটি আইন পাশ করেছে “যদি কোন শব্দের সঠিক রুশ প্রতিশব্দ থাকে তাহলে সরকারি কাগজপত্রে সেই রুশ শব্দ ব্যবহার করতে হবে”। তার মানে বিদেশী শব্দ ব্যবহারে বাধা নেই, তবে সরকারি কাজকর্মে রুশ ভাষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে সাধারণ মানুষ ইংরেজি বা অন্য ভাষা জানা সত্ত্বেও সহজে সে সব ভাষায় কথা বলতে চান না, বিশেষ করে সেখানে বেড়াতে যাওয়া কোন বিদেশী যদি কোন কিছু জিজ্ঞেস করে। ভাষার প্রতি ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলা হয়। কিন্তু আমরা, বিশেষ করে উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত মানুষেরা নিজেরাই চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন পারতপক্ষে বাংলা না বলে, তাদের ইংলিশটা যেন বাংলার চেয়ে ভালো হয়। এটা যাতে না হয় সে জন্য আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। আর সেটা সম্ভব দেশকে সব অর্থে শিক্ষিত, স্বাধীনচেতা ও সচেতন মানুষের বসবাসের যোগ্য করে গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, দুবনা
শিক্ষক, গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, মস্কো, রাশিয়া