শিল্প সাহিত্য

পাহাড়ের সুখী মানুষেরা

-জহিরুল ইসলাম

সারাদিন ছিল হিমেল মেঘলা। হাতের নাগালে পাহাড় পাবো বলে পোখারায় এসেছি গতকাল। কিন্তু সূর্যের দেখা মিলল বিকেলে। যখন ক্লান্তি নিয়ে ট্যুর বাস থেকে হোটেলে নামলাম, তখনি নিজেদের মেলে ধরলো অন্নপূর্ণা, ধবল গীরি আর মেছাপুচ্ছে। এভারেস্টের পর এগুলোও পৃথিবীর প্রথম দশটির তিনটি।

বেশি কিছু লেখার নেই। সারাদিন ঘুরলাম পাহাড়ে পাহাড়ে। পোখারা সিটির আশেপাশে সাতটি স্পট। জনপ্রতি নিল ৮’শ নেপালী রুপি। সকাল ন’টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা অব্দি। হোটেলের বারান্দা থেকে আগের দিন দেখছিলাম পাহাড়গুলো।

পাহাড়ের উপর কোনটি বৌদ্ধ মন্দির, একটি মহাদেবের মন্দির, আরেকটি বিন্দাদেবীর মন্দির। সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টির নাম শরনকোট, ১৬’শ ফুট উপরে। এবড়ো-থেবরো মেঘের জাল ভেদ করে বাস উঠলো পাহাড়ের চূড়ায়। মেঘ ঢেকে আছে চারপাশ! দূরের পর্বতগুলো দেখা যাচ্ছিল কিছুটা।

সবচেয়ে আশ্চর্য হচ্ছিলাম দূর পাহাড় গাত্রে মানুষের ঘরবাড়ি দেখে। কতটা কষ্টকর মানুষের জীবন-যাপন! অথচ মানুষের কী সুখী-সুখী চেহারা! প্রতিটি বাড়ির সঙ্গেই খানিকটা সব্জি বাগান।

আমরা যে কাঁচা ‘লাই পাতা’ খুব আয়েশ করে কুটে খোলা মাছের সঙ্গে ভর্তা বানিয়ে খাই, সেই লাই পাতা প্রত্যেকের বাড়িতে। এবং পাতাগুলো খুব মোটাসোটা, তেলতেলে! এর সঙ্গে টমেটো, পিঁয়াজ কিংবা ধনেপাতার চাষ। খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছিল- এদের পানির চাহিদা মিটায় কী করে?

বাস কিছুক্ষণের যাত্রা বিরতি দিলে একটা বাড়িতে ঢুঁ মারলাম হাতে কিছুটা সময় নিয়ে। জানলাম- দূরের পাহাড়ের মাঝে একটি হ্রদ থেকে নল যোগে পানি আসে। প্রতিটি পাহাড়েই আছে পৃথক পৃথক পানীয় জলের ব্যবস্থা। পানিকে একা পানি’ই বলে, জল বলে না। এক গ্লাস পানি পান করে আন্দাজ করতে পারি- এই পানি আসলে বোতলের পানির চেয়ে কতটা উৎকৃষ্ট!

কেউ কেউ জুম পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে, ধান-গম-ভূট্টার। এই মানুষগুলো হয়ত মনের দিক দিয়ে ধার্মিক। কিন্তু সরকার কিংবা বাইরের একটা চাপ আছে পর্যটনকে ধর্মীয় ভাবাবেগে অনুপ্রাণিত করার।

পাহাড়ের চূড়া কিংবা ট্যুরিস্ট স্পটগুলোকে ধর্মীয় স্পটে পরিণত করে অধিক মুনাফা কুড়ানোর চেষ্টা! এসবের বাইরে খুব সামান্যতে মানুষ যে সুখী থাকতে পারে, তা পাহাড়ের মানুষকে না দেখলে বুঝা যাবে না।

পোখারা (নেপাল), ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৩

(লেখক সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি)