চলমান সংবাদ

আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকেরা খুশি

সিলেটে এ বছরের জুন মাসে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ফসলের বড় একটা অংশ গোলাতেই নষ্ট হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছিল হাওরের কৃষকের৷এ মৌসুমে সুনামগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলনে সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠার স্বপ্ন দেখছেন চাষীরা৷

সিলেট জেলার ৯০ ভাগ ঘরবাড়ি জুনের ভয়াবহ বন্যায় নিমজ্জিত হয়৷পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনোরকমে গোলায় তুলেছিলেন বোরো ফসল; কিন্তু বন্যায় সেই ফসলের বড় অংশই গোলাতেই নষ্ট হয়ে যায়৷ বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ধানবীজ আর সারের সহায়তা নিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর৷ ফলে এবার হাওরে আগের বছরের তুলনায় বেশি জমিতে আমনের চাষ হয়েছে৷

সংস্থাটি জানাচ্ছে, চলতি মৌসুমে উফশি, হাইব্রিড ও স্থানীয় মিলিয়ে প্রায় ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে৷ গত মৌসুমের তুলনায় এবার এক হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে বেশি আমন ধান আবাদ হয়েছে৷

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘‘সুনামগঞ্জ জেলা মূলত হাওর অধ্যুষিত৷ সব উপজেলায় আমন আবাদ হয় না এবার বেশি হয়েছে৷ ফলনও বাম্পার হয়েছে৷ প্রায় ৬৫ ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে৷ চলতি সপ্তাহে ৮০ ভাগ জমির ধান গোলায় উঠবে৷আমন ও বোরো মিলিয়ে জেলায় প্রায় চার লাখ চাষি পরিবার রয়েছে৷’’

সোমবার সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া, কোরবাননগর ও মোহনপুর ইউনিয়ন এবং তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হলুদ রঙে সেজেছে আমনের ক্ষেত৷ মাঠে মাঠে আমন ধান কাটার উৎসব চলছে৷

কেউ মাঠে ধান কাটছেন৷ পাশেই খলা করে সেই ধান মেশিন দিয়ে মাড়ানো হচ্ছে৷ পরে বস্তায় করে তা বাজারে বা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা৷ ভাল ফসল পাওয়ায় খুশি বলে জানান কৃষকেরা৷ পাশাপাশি শ্রমিকরাও ধান কেটে খোরাকি সংগ্রহ করতে পেরে আনন্দিত৷

কৃষকেরা জানান, গত জুন মাসে সিলেট বিভাগে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ভাড়ারের ধান, বীজধান ও খোরাকির ধান পানির মধ্যে থেকে নষ্ট হয়ে যায়৷ তখন মাঠঘাট ও সড়ক ডুবে থাকায় কৃষকেরা ভেজা ধান শুকাতে না পারায় কালচে হয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেই ধান৷ যার ফলে কৃষকের ধানের ভাড়ার এখন প্রায় শূন্য৷

কৃষকদের দুর্দশার কথা চিন্তা করে সরকার ১৬ হাজার আমন চাষীকে বীজ ও সার দেয়৷১০ হাজার ১২০ জন চাষীকে সবজি বীজ দিয়েছে৷ বিশেষ প্রণোদনা এবং বন্যার পলিতে জমি উর্বর হওয়ায় আমন চাষের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়৷ সেই আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে৷ হেক্টরপ্রতি এবার চার টন ধান (চাল ২.৬৭ মেট্রিক টন) উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ৷

কৃষকরা জানান, এখন আমন ধান দিয়ে আবার শূন্য ভাড়ার পূর্ণ করছেন তারা৷ তবে বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ ধানে চিটার কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন৷

সদর উপজেলার বুড়িস্থল গ্রামের আলম হোসেন মুন্না বলেন, ‘‘বন্যায় এবার আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে৷ এখন আমন ধানে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি৷ খোরাকির সঙ্গে কিছু বিক্রিও করতে পারব৷ প্রতি বছর এভাবে আমন মৌসুম  পেলে কৃষকরা লাভবান হবেন৷’’

সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের বাদে সাদেকপুর গ্রামের কৃষক উকিল মিয়া বলেন,  “এ বছর বিআর- ২৮ আর বিআর-২৯ ধান ভালো হয়নি৷ তবে বিআর-৩২, বিআর-২২, বিআর-২০ ধান ভালো হয়েছে৷ বন্যার পর পর আমরা পলি পেয়ে আমন চাষ করেছিলাম৷ ভালো ফলন পেয়েছি৷” মোহনপুর ইউনিয়নের বর্মাউত্তর গ্রামের নিজাম উদ্দিন বলেন, “এবার আমাদের এলাকায় আমনের ফলন ভালো হয়েছে৷ বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ মণ ধান হয়েছে৷”

তবে ট্রাক্টরে হাল দেওয়া, সেচ, মেশিনে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ডিজেল ব্যবহার করায় খরচ বেশি হয়েছে বলে জানান এই কৃষক৷ তিনি বলেন,  “ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যয় অন্য বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে৷ তবে বন্যামুক্ত বাম্পার আমন ফলন পেয়ে কৃষকরা অনেক খুশি৷”

তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কড়ইগড়া গ্রামের মান্দি নারী শ্রমিক সরোজিনি রিছিল বলেন, “আমরা শ্রমিক মানুষ৷ এখন আমন ধান কাটছি৷ প্রতিদিন ৫০০ টাকা পরিমাণের ধান খোরাকি পাচ্ছি৷ ১৫ দিন ধান কাটতে পারলে অন্তত তিন মাসের খোরাকি তুলতে পারবো৷”

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “এবারের বন্যায় আমাদের কৃষকসহ সবশ্রেণির মানুষের বহুমুখী ক্ষতি হয়েছে৷ কিন্তু এখন বাড়ি এসে দেখি, গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে পাকা আমন ধানের বিস্তার৷ ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছেন কৃষকরা৷ আমনের বাম্পার ফলনে বাজারে চালের দাম কমছে৷ শাকসবজিতেও মাঠ ভরে আছে৷

“আশা করছি, আগামী বছর আমাদের ভালো যাবে৷ তাছাড়া আসছে বোরো মৌসুমে অনাবাদী সব জমি যাতে চাষাবাদের আওতায় আনা হয় সেজন্য সরকার নির্দেশনা দিয়েছে৷” বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী৷