মতামত

মৃত্যুর আগে ঋন মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়

-মোঃ মহিম উদ্দিন

বর্তমানে দ্রব্য মূল্যের বাজার লাগামহীন হয়ে পড়ায় নির্মান শ্রমিক খুবই অসহায় হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিনের আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশী, বাসা ভাড়া সহ যাবতীয় খাতে কেবল খরচ বেড়েই চলেছে, কিন্তু বাড়ছেনা  শ্রমিকের বেতন।বাড়তি খরচ মেটাতে নিতে হচ্ছে ঋন। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন থেকে ঋন পাওয়া যাচ্ছে না। ভরসা একমাত্র বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋন প্রদানকারী সংস্থা। তাদের থেকে ঋন নিলে দিতে হয় উচ্চ হারে সুদ। সুদ সহ ঋন যেন আমাদের কাছে পাহাড় সমান বোঝা হয়ে দাড়াচ্ছে।

প্রতি নিয়ত ঋনের বোঝা যেন বেড়েই চলেছে, ফলে পরিবারের খরচ জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছে নির্মাণ শ্রমিকেরা। অন্যদিকে নির্মান সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে বর্তমানে কাজও কমেছে। সুতরাং আয় কমলেও খরচের লাগাম টানা যাচ্ছেনা। ক্রমবর্ধমান খরচ মেটাতে- বিভিন্ন এনজিও ক্ষুদ্র ঋন প্রদানকারী সংস্থা থেকে ঋন নিয়ে পরিশোধ করতে না পরায় প্রতি নিয়ত সইতে হচ্ছে অপমান।

পরিবারের সদস্যরা পুষ্টিকর খাদ্য খেতে না পারায়  বাড়ছে অসুস্থতার হার। অনেক সময় কর্মসংস্থানে পৌছানোর জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ী ভাড়া না থাকায় পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে কয়েক মাইল পথ। কর্মস্থলে না খেয়ে করতে হচ্ছে কাজ।  ফলে কম খেয়ে, অনাহারে থেকে কাজ করায় দিনদিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে নির্মাণ শ্রমিকেরা।

নির্মান শ্রমিকেরা তাদের সন্তানের পড়াশোনার খরচও বহন করতে পারছেনা। ফলে অনেক নির্মাণ শ্রমিকদের সন্তানেরা শিক্ষা জীবন থেকে থেকে ঝরে পড়ছে। এটা জাতির জন্য খুবই অশুভ সংবাদ।

অবস্থা এমন হয়েছে  যে, কোন শ্রমিক অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা দেয়ার মত টাকাও পাওয়া যাচ্ছেনা এমনকি কোন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করিলে  অর্থের অভাবে গ্রামের বাড়ীতে লাশ পাঠানোও প্রায় কষ্টকর হয়ে পড়েছে। একজন শ্রমিক দুর্ঘটনা জনিত কারনে মৃত্যু বরন করিলে – মালিক পক্ষ দুই লক্ষ টাকা ক্ষতি পূরণ দেওয়ার বিধান শ্রম আইনে থাকলেও বেশীর ভাগ মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষতি পূরন পাচ্ছেনা শ্রমিকের পরিবার। আজীবন পঙ্গুত্ব বরণকারী শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ক্ষতি পুরনের বিধান থাকলেও দুর্ঘটনার পর মালিক পক্ষ খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেয়না শ্রমিকের।আইনের এই বিধান কার্যকরের জন্য কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ভূমিকা আরো বাড়াতে হবে।

সবকিছু মিলিয়ে নির্মাণ শ্রমিকেরা খুব ভাল নেই। কেউ কেউ আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ঋন নিলেও শোধ কীভাবে করবে জানেনা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ঋণগ্রস্ত নির্মাণ শ্রমিকেরা মৃত্যুর আগে ঋন শোধ করতে পারবেনা। এমতাবস্থায় প্রতিটি শ্রমিক পরিবারের জন্য স্থায়ী রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় তিলে তিলে মৃত্যু পথের যাত্রী হবে নির্মাণ শ্রমিকেরা। ঋনের বোঝা মাথায় নিয়েই হয়তো মরতে হবে নির্মান শ্রমিকদের।

লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, ইমারত নির্মান শ্রমিক ইউনিয়ন – ইনসাব,বায়েজিদ বোস্তামী থানা শাখা।