চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা প্রকল্প ব্যয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৭১ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে নগরীর ২২টি খালের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে বলেও আশা করা হচ্ছে। এসব খাল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।

এদিকে আজ মঙ্গলবার গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এতে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যা, জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত প্রকল্প এবং প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করে বছর কয়েক আগে। ২০১৭ সালের আগস্টে একনেকের অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা এবং বাকি ৩ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয় খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নে। প্রকল্পের আওতায় খালের পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, খাল থেকে বালি ও মাটি উত্তোলন এবং নগরীর বিভিন্নস্থানে নালা নির্মাণে বড় ধরনের ব্যয় ধরা হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু করে। ২০১৯ সালে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের জুন মাসে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, প্রয়োজনীয় অর্থের যোগানসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রকল্পটির কাজ ব্যাহত হয়। তবে ইতোমধ্যে ৭১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১২টি খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। আরো অন্তত দশটি খালের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। চলতি বছরের মধ্যেই এই ২২টি খালের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্প ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সিডিএর পক্ষ থেকে প্রকল্প ব্যয় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে তা কেটে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা উল্লেখ করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। পরিকল্পনা কমিশন আরো এক হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার তাগাদা দেয়। কিন্তু সিডিএর দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকায় প্রকল্পটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এই প্রকল্প ব্যয় ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে এই বছর না দিলেও আগামী বছর হয়তো বর্ধিত ব্যয় অনুমোদন দেয়া হবে।

সিডিএর সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, প্রকল্পটির আওতায় ৩৬টি খালের দুই পাশে ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে ৪ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। এই রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের সময় খাল পাড়ের বহুতল ভবন রক্ষা করতে শিট পাইল করতে হচ্ছে। যা প্রকল্পের শুরুতে ছিল না। এতেও ব্যয় বাড়ছে। এর বাইরে প্রকল্পে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র ১৫ কিলোমিটার নালা নির্মাণ করার ব্যয় ধরা হয়েছিল। মাঠ পর্যায়ে কাজে নেমে দেখা যাচ্ছে যে নালা নির্মাণ করতে হবে ৯০ কিলোমিটার। এতে ব্যয় হবে ৩৫৮ কোটি টাকা। রাস্তার পাশের নালা নির্মাণে খরচ বেড়ে গেছে ৩৫৪ কোটি টাকা।

প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণকালে ধরা হয়েছিল যে, ৩৬টি খাল থেকে ৪ লাখ ২০ হাজার ঘনফুট কাদা অপসারণ করতে হবে, এতে ব্যয় হবে ২৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কিন্তু কাজ শুরু করার পর ক্রমান্বয়ে হিসেব পাল্টাতে শুরু করে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ের হিসেবে দেখা যায় যে ৩৬টি খাল থেকে সর্বমোট ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ঘনফুট কাদা সরাতে হবে। এতে ব্যয় হবে ১৭২ কোটি টাকা। খাল সম্প্রসারণে সর্বমোট ৫ লাখ ২৮ হাজার ঘনফুট মাটি কাটার কথা ছিল। যাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭ কোটি টাকা। কিন্তু এখন হিসেব করে দেখা যাচ্ছে প্রকল্পের পুরো সুফলের জন্য মাটি কাটতে হবে ২১ লাখ ঘনফুট। যাতে ব্যয় হবে ১৭০ কোটি টাকা। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। বেড়েছে লেবার কস্টও। পদে পদে খাতে খাতে ব্যয় বৃদ্ধির ফলে প্রকল্প ব্যয় চার-পাঁচ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রকল্পের মেয়াদ ইতোমধ্যে এক বছর বাড়ানো হয়েছে। আগামী বছরের জুন নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৩৬টি খালের কাজ পুরোদমে সম্পন্ন করতে আরো একটু বেশি সময় লাগবে বলেও সূত্রটি মন্তব্য করেছে।