লক্ষ অর্জনে পরিযায়ী পাখি অতুলনীয় অনুপ্রেরণা -ফজলুল কবির মিন্টু
আমাদের দেশে শীতকালে প্রচুর পাখি দেখা যায়। পাখিগুলো দলবদ্ধভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে থাকে। এরা মূলত জলাশয় বা বড় বড় ঝিলের মাঝে বা কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান করে। বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এ সকল পাখি এক অপরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করে। যা দেখে যেকোন মানুষের প্রাণ জুড়ে যায়
এ পাখি গুলো মূলত শীত প্রধান দেশের পাখি। শীতকালে ঐ সকল দেশে তুষার পাত হয় বিধায় ঐ সময় সেখানে তাদের পক্ষে খাবার জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকী তখন বেঁচে থাকায় তাদের পক্ষে দুস্কর হয়ে পড়ে। এরূপ অবস্থায় তারা বাংলাদেশের মত গ্রীষ্ম প্রধান বা নাতিশীতোষ্ণ দেশ গুলোতে আশ্রয় খুঁজে নেয়। এ পাখিগুলো আমাদের দেশে অতিথি পাখি বা পরিযায়ী পাখি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
শীতকালের শুরুতে এরা নিজ আবাস স্থল ছেড়ে এদশে আসে আবার শীত কাল শেষ হলে এরা নিজ দেশে ফিরে যায়। এই আসা-যাওয়ায় তাদেরকে দশ থেকে বিশ হাজার মাইল পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে হয়। এ তথ্যটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তব। এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে এরা কিছু চমৎকার নিয়ম মেনে চলে। তাদের নেতৃত্ব দক্ষতা, দলবদ্ধতা, পারস্পরিক সহমর্মিতা এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
পরিযায়ি পাখিগুলোকে ইংরেজী বর্ণ ‘ভি’ আকারে আকাশে উড়তে দেখা যায় এবং উড়ার সময় প্রত্যেকে পরস্পর থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করে। বিশেষজ্ঞদের মতে এতে পাখিগুলোর পাখা বা ডানার কারনে বাতাসে একটা ঢেউ তৈরি হয়। যা অনেকটা লিফটের ভূমিকা পালন করে এবং পাখিগুলোকে দীর্ঘক্ষন আকাশে উড়ে থাকতে সহযোগিতা করে। এর ফলে পাখিগুলোকে আকাশে উড়তে শক্তি কম ব্যবহার করতে হয় বলে তাদের পক্ষে কয়েক হাজার মাইল উড়তে কোন অসুবিধা হয়না।
উড়ার সময় এদের একজন দলনেতা থাকে। যিনি পথ চিনিয়ে নিয়ে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেক্ষন উড়ার পর দলনেতার দম ফুড়িয়ে গেলে বা কোন কারণে সে অসুস্থ্য বা টায়ার্ড অনুভব করলে দলনেতা আস্তে করে নীচে নেমে যায়। তখন দ্বিতীয় সারি থেকে একজন নেতৃত্ব ভার গ্রহণ করে। এভাবে দীর্ঘ চলার পথে কখনো কখনো তারা নেতৃত্ব বদল করে পুরো দলকে গন্তব্যে নিয়ে যায়।
পরিযায়ী পাখির আরো একটি অন্যরম গুন হলো পারস্পরিক সহমর্মিতা। যা জানলে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না। দীর্ঘ চলা পথে কোন পাখি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তিনি কোন একটি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। তখন উক্ত অসুস্থ্য পরিযায়ী পাখিকে সেবা শুশ্রূষা করার জন্য তাদের দল থেকে অন্য আরেক পাখি তাকে অনুসরণ করে নীচে নেমে যায়। অসুস্থ্য পরিযায়ী পাখিকে সেবাশুশ্রুষ করে সুস্থ্য করে তুলে। অসুস্থ্য পাখি সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত কিংবা মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সাহায্যকারী সংগী পাখি তার সংগ ত্যাগ করে না।
আমরা যদি পরিযায়ী পাখির জীবন প্রণালি পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাই, দলবদ্ধতা, নেতৃত্ব গুন এবং পারস্পরিক সহমর্মিতার এক অপূর্ব সমাবেশ আছে এ ছোট্ট প্রাণিগুলোর মাঝে। এমন অপরূপ আশ্চর্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়ার কারণেই হয়তো হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। পরিযায়ী পাখির এমন কঠোর সংগ্রাম ও গন্তব্যে পৌছার ইস্পাত দৃঢ় প্রত্যয় আমাদের শ্রমিক শ্রেণির জন্য হতে পারে অতুলনীয় এক অনপ্রেরনা। আমাদের গন্তব্য –এদেশের গরীব মেহনতি মানুষকে শোষণ, নির্যাতন, দারিদ্রতা ও বৈষম্য থেকে মুক্তি দিয়ে নতুন এক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। আমরা পরিযায়ী পাখি থেকে শিক্ষা নিয়ে এদেশের শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির পথ কী রচনা করতে পারবো?
লেখকঃ ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক ও কলামিস্ট।