মতামত

পিঁপড়া থেকে শেখার আছে অনেক কিছু

পিঁপড়া পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রানীগুলোর অন্যতম। কিন্তু পিঁপড়ার জীবন প্রণালি বিশ্লেষন করে জানা যায় তারা খুবই সুশৃংখল প্রাণি। দলবদ্ধভাবে এবং সারিবদ্ধভাবে চলার জন্য পিঁপড়ার সাথে আর কোন প্রাণির তুলনা হয়না। এমনকী সৃষ্টির সেরা জীব মানুষও বোধ হয় সারিবদ্ধভাবে চলার ক্ষেত্রে পিঁপড়ার কাছে হেরে যাবে। আমরা শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন সময় সংগঠনের বিভিন্ন প্রয়োজনে মিছিল-র‍্যালি করে থাকি। কিন্তু আমি লক্ষ করেছি আমাদের পক্ষে কখনোই দুই লাইনে শৃংখলাবদ্ধভাবে র‍্যালি বা মিছিল করা সম্ভব হয়না। এর জন্য কর্মীদের চেয়ে নেতারাই বেশি দায়ী বলেই আমার মনে হয়। বেশি্রভাগ নেতাদের মনোভাব হচ্ছে মিছিলের ব্যানারের ঠিক পেছনেই যেন তাদেরকে থাকতে হবে। কেউ কেউ এক কাঠি সরস। তারা অন্যান্য নেতা-কর্মীদের ব্যানারের পেছনে রেখে নিজে ব্যানারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় যেন সামনে না দাঁড়ালে বা তার ছবি দেখা না গেলে  মিছিল কোনভাবেই অর্থবহ হবেনা। এ সকল নেতাদের অসুস্থ্য মনোভাবের কারণে বাকী নেতা-কর্মীদের মধ্যেও সামনে যাবার একটা অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা পরিলক্ষিত হয়। ফলে এক হাজার মানুষের মিছিলকেও তখন এক শত মানু্ষের মিছিল মনে হয় না।  সব যেন ব্যানারকে ঘিরে জটলা বেধে যায়। এসকল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই – পিঁপড়া জীবন প্রণালী দেখে সুশৃংখল হতে শিখুন। আমাদের লড়াই মালিক শ্রেনী এবং মালিকদের নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র যন্ত্রের বিরুদ্ধে। শক্তি সামর্থের বিচারে লড়াইটা চরম অসম। এই অসম লড়াইয়ে জিততে হলে সুসশৃংখল হওয়া এবং একতাবদ্ধ হয়ে চলার কোন বিকল্প নাই।

A line of worker ants marching in search of food. Vector illustration

পিঁপড়া জীবন থেকে আরো অনেক কিছুই শেখা আছে। পিপড়ারা অসম্ভব দূরদর্শী। শীত কালে তাদের খাবার জোগাড় করতে সমস্য হয় বিধায় তার গরমকালেই শীতকালের জন্য খাবার জোগাড় করে রাখে। খাবার জোগাড় শেষে তারা দলগতভাবে মিটিং করে কতটুকু খাবার জোগাড় হয়েছে তা জেনে নেই এবং শীতকালের জন্য আর কতটুকু খাবার জোগাড় করতে হবে সেটাও দলগত সিদ্ধান্তভাবে নেই। পিঁপড়ারা খাবার জোগাড় করে সব নিজে খায় না। একজনের জোগাড় করা খাবার অন্যকেও নিঃস্বার্থভাবেই বিলিয়ে দেয়।

এটাকে পিঁপড়ার দলগত কাজ বা Team Work বলা হয়। এখানেও আমাদের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সাথে যুক্তদের অনেক কিছু শেখার আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখানেও আমরা পিঁপড়ার কাছে হেরে যায়। আমরা যখন কোন সংগঠনের নেতা হই তখন পুরো সংগঠনকে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করি। নেতারা ১/২ জন সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের কর্মসূচী পালনের নির্দেশ দিয়েই কেল্লাফতে। আসলে আমাদের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে নেতারা নিজেদের আজ্ঞাবহ কর্মী বানাতে বেশি পছন্দ করে। ফলে এরা দলগত কাজ বা Team Work কে সমর্থন করেনা কিংবা বলা যায় পছন্দ করেনা।

পিঁপড়ার আরো গুন আছে, তারা একজনে বিপদের আঁচ পেলে সাথে সাথে অন্যদেরকেও সংকেতের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। পিঁপড়ারা দলবদ্ধভাবে কাজ করে বিধায় নিজেদের সক্ষমতার চেয়েও ২০ গুন বেশি ওজন তারা বহন করে এক স্থান হতে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ পিঁপড়ার এইগুনগুলিও যদি আমরা অনুসরণ করতে পারতাম তাহলেও পরস্পরের প্রতি সহানুভুতিশীল, সংবেদনশীল হতে পারতাম এবং ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী হিসাবে নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে দাবি-দাওয়া আদায়ে যোগ্য ভূমিকার রাখার জন্য তৈরি হতে পারতাম।

শুধু বই পড়ে নয় -প্রকৃতি এবং প্রাণি জগৎ থেকেও আমরা অনেক কিছুই শিখতে পারি। শুধু পিঁপড়ার জীবন প্রণালি অনুসরণ করলেও আমরা প্রত্যেকে যোগ্য ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী হিসাবে গড়ে উঠতে পারবো বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

লেখকঃ ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক ও কলামিস্ট।