চলমান সংবাদ

কর্ণফুলী ড্রাইডক নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ

আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদী তীরে বন বিভাগের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট উজাড় করে ও নদী দখল করে কর্ণফুলী ড্রাই ডক লিমিটেডসহ আশপাশের সকল স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

একইসাথে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে সাত দিনের মধ্যে নদী রক্ষা কমিশনে রিপোর্ট প্রদানের জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলার কর্ণফুলী নদীসহ অন্যান্য নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় দখল ও দূষণ সংক্রান্ত এক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

তিন দিনের সফরে চট্টগ্রামে থাকা নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান গতকাল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নদী পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি মেরিন একাডেমির পাশে কর্ণফুলী ড্রাই ডক গড়ে উঠেছে নদী দখল করে। ড্রাই ডকটির আশপাশে আরও বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এটা বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছি। বন্ধ করে জেলা প্রশাসক কমিশনকে অবহিত করবেন।

তিনি বলেন, কর্ণফুলী ড্রাই ডকের বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টিম করা হবে। সেই টিম নির্ধারণ করবে সেখানে কী হয়েছে এবং কীভাবে নদী উদ্ধার করা হবে। ততদিন কাজ বন্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। কর্ণফুলী ড্রাই ডকের প্রায় সব অংশই নদীর মধ্যে অবস্থিত। অপরদিকে ফিশারিঘাট (চাক্তাই ভেড়া মার্কেটের বিপরীতে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত নতুন ফিশারি ঘাট), এখানে যে বরফকল সবই নদীর ভেতর ছিল। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক।

নদী কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এখানে অনেক সরকারি সংস্থা আছে। সিটি করপোরেশন, সিডিএ, বন্দর, জেলা প্রশাসনের চোখের সামনে একটা নদী কী করে দখল করে ফেলল। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এর আগে তিনি কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা ও তৃতীয় সেতু অংশ পরিদর্শন শেষে দখল নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ নদী শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয় সারাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি এ নদীর তীরে যে বন্দর তার মাধ্যমে হয়। দখল যে হয়েছে সেগুলো অবমুক্ত করতে হবে।

মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমদানি রপ্তানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কর্ণফুলী নদীর প্রশস্ততা কমেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান নদী দখল করেছে। আরও দখল হচ্ছে। আদালতের রায় অনুসারে এসব বন্ধ করতে হবে। কর্ণফুলী নদীর প্রবাহ বা নাব্যতা যদি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ফিশারীঘাট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ফিশারীঘাটের বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে ওই অংশটিতে ড্রেজিং করলেও পলি জমে যায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ওই স্থানটি ফিশারীঘাটকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দেওয়া হবে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

উচ্ছেদসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘উচ্ছেদ একটি চলমান প্রক্রিয়া। যে ছোট একটা ঘর তুলে নদীর পাড়ে থাকছে সেও অবৈধ দখলদার। কিন্তু যে বড় বড় স্থাপনা গড়ে তুলেছে, সে আরও বড় দখলদার। তাই সবাইকে উচ্ছেদ করতে হবে। তবে তা হবে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। আমাদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে।’

জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান বলেন, একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দেবে কমিশন। এরপর কমিটি আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে কীভাবে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

সভায় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলমসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, এর আগে নদী ভরাট করে নির্মিত কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজের কবল থেকেও নদী উদ্ধার করা হচ্ছে। কর্ণফুলী নদী ও সংলগ্ন খাল ভরাট করে নির্মিত উক্ত ঘাট বন্ধে অভিযান পরিচালনা করেছিল জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের নির্দেশে আগ্রাবাদ ভূমি সার্কেলের সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজের মালিক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশিদ কর্ণফুলী নদীর যেটুকু অংশ অবৈধভাবে ভরাট এবং দখল করেছেন তা সরিয়ে নিয়ে সেখানে আগের মত পানি প্রবাহ নিশ্চিত করবেন। এতে কোন ধরনের ব্যত্যয় হলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজের অবৈধ দখলদারিত্ব সরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম চলাকালেই একই অভিযোগে কর্ণফুলী ডক ইয়ার্ডের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়ার এই সিদ্ধান্ত এলো।