বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (৬৮): পাগলের পৃথিবী

-বিজন সাহা  

কয়েক দিন আগে ফেসবুকে কে যেন লিখেছিল ইউরোপের অর্থনীতি হবে পাকিস্তানের মত। হ্যাঁ, এই যুদ্ধে ইউরোপ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এটা যে আমেরিকার চালেই হচ্ছে সেটা অনেকেই বিশ্বাস করে না। এটাও কি সম্ভব যে ইউরোপ ন্যাটোর সদস্য, আমেরিকার সামরিক শক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক – আমেরিকা তাকেই ধ্বংস করবে? সম্ভব। স্বার্থের এই পৃথিবীতে সবই সম্ভব। ইউরোপ নিজে থেকেই নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমেরিকার হাতে তুলে দিয়েছে। রুশরা বলে «যদি তুমি নিজের সেনাবাহিনীর ভরণপোষণ না কর তবে তোমাকে অন্যের সেনাবাহিনীর ভরণপোষণ করতে হবে।» এটাই বাস্তবতা তা সে যত নির্মমই হোক না কেন। তাই ইউরোপ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সেটা কি ওরা নিজেরা বোঝে না – এই প্রশ্ন আজ অনেকেরই। আচ্ছা পাকিস্তান আমলে মোনায়েম খানেরা কি বুঝতো না যে দেশের সম্পদ ব্যয় হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে? বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের মানুষ কি বোঝে না যে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী ধরে রেখে তারা আসলে নিজেদের দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করছে? তারপরেও এসব দেশের জনগণের একটা বিরাট অংশের মধ্যে পাকিস্তান বা ভারত বিরোধিতা এতটাই তীব্র যে তথাকথিত শত্রুকে রুখতে তারা যেকোনো ধরণের কষ্ট সহ্য করতে রাজী। ধূর্ত রাজনীতিবিদরা খুব ভাল মনস্তাত্বিক। তারা জনগণের এই ঘৃণার সুযোগটা নেয়। এই ঘৃণা জাগিয়ে রাখে আর এই ঘৃণার উপর ভিত্তি করে নিজেদের ক্ষমতার ভিত শক্তিশালী করে। মোনায়েম খানদের কাছে দেশ, দেশের মানুষের চেয়েও বেশি বড় ছিল পাকিস্তানের ধারণা। একই কথা বলা চলে বর্তমান ইউরোপের নেতাদের ক্ষেত্রে। তাদের কাছে আমেরিকার পদলেহন আর রুশ বিরোধিতা দেশপ্রেম, গণতন্ত্র, মানবতা এসবের উপরে। আর একারণেই জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনায়াসে বলতে পারে জার্মানির জনগণের মতামতের চেয়েও ইউক্রেনকে সাহায্য করা তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার কেন যেন মনে হয় না ইউরোপ না আমেরিকা – এরা এখন আর নিজেদের দেশের জনগণের সেবা করে না, তারা সেবা করে তাদের প্রভুদের। কে সেই প্রভু। বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। এটাকে কল্পনা করতে পারেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মত। তারা ব্রিটিশ ক্রাউনের নামে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ শাসন করত। যখন তারা সেটা করতে ব্যর্থ হল, তখন ব্রিটিশরাজ নিজে ক্ষমতার হাল ধরে। তবে যুগ পালটে গেছে। ১৮৫৭ সালে পুঁজিবাদ শক্তিশালী হলেও ব্রিটেনের ক্রাউনের তুলনায় তার শক্তি ছিল নগণ্য। বর্তমানে হাওয়া বদলে গেছে। আগে যদি বিভিন্ন রাষ্ট্র পুঁজিকে ব্যবহার করত নিজেদের উপনিবেশ বৃদ্ধির জন্য, এখন এই অর্থনৈতিক উপনিবেশের যুগে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে দেশে দেশে তাদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য। সেই হিসেবে আমেরিকার সেনাবাহিনী দেশে দেশে এসব কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করার জন্য নিয়োজিত ভাড়াটে সেনা যাদের ভরণপোষণের খরচ বহন করে মার্কিন জনগণ। রুশরা বলে “যেখানে রাষ্ট্র শেষ হয়ে যায় সেখানে বৃহৎ পুঁজির রাজ্যত্ব শুরু হয়।” চাক আর না চাক, জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব থাকে, কিন্তু পুঁজির সেই দায়িত্ব নেই। আজ ইউরোপ আর আমেরিকায় আমরা যা দেখি, যখন সাধারণ মানুষের ঘরে উত্তাপ থাকুক আর নাই থাকুক, টরনাডো বিধ্বস্ত ফ্লোরিডায় মানুষের ঘরে বাতি জ্বলুক আর নাই জ্বলুক ইউক্রেনে কামান ঠিকই দাগবে, অস্ত্র ব্যবসায়ীর পকেট ঠিকই গরম হবে। এসব দেখে আমার মনে পড়ছে চণ্ডীর গল্প। মহামায়ার জন্ম হয়েছিল দেবতাদের সম্মিলিত তেজ থেকে। কেন? দানবদের হাত থেকে স্বর্গ উদ্ধার করতে। কারণ দেবতারা যুদ্ধে দানবের কাছে পরাজিত হয়ে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। না না, আমার স্বর্গ নরক নিয়ে মাথা ব্যথা নেই, মাথা ব্যথা নেই দেব দানব নিয়ে। এই গল্প বলার একটাই কারণ – স্বর্গ মানেই দেবতার বাসস্থান নয়, দেবতারা দুর্বল হলে, অযোগ্য হলে স্বর্গও দানবের হাতে বেদখল হয়ে যেতে পারে, বেহাত যায়। বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বে সেটাই ঘটেছে।

২৪ ফেব্রুয়ারি যখন স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন শুরু হয় তখন মূল উদ্দেশ্য ছিল ডিন্যাসিফিকেশন আর ডিমিলিটারিজেশন। তখন অনেকের হয়তো ধারণা ছিল ইউক্রেনের মানুষ সাদরে রুশদের গ্রহণ করবে। বাস্তবে সেটা হয়নি যদিও দনবাস তো বটেই, হেরসন, জাপারোঝিয়া (উল্লেখ করা যেতে পারে যে শেষের দুটো অঞ্চলে রুশ সমর্থন ছিল সবচেয়ে কম – ৬০% – ৭০%, যেখানে দনবাস, খারকভ, ওদেসা, নিকোলায়েভ, দনেপ্রপেত্রভস্ক – এক কথায় পুরো দক্ষিণ পূর্ব ইউক্রেনে এই সমর্থন ৮০% থেকে ৯০%) কোথাও কোন রকম প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। ত্রিশ বছরের, বিশেষ করে বিগত আট বছরের দুঃশাসনে সাধারণ মানুষ আর ইউক্রেনের সাথে থাকতে চায় না যদিও বিগত ত্রিশ বছরে আমেরিকা আর কানাডা অতি যত্নে ইউক্রেনে এমন এক জেনারেশন গড়ে তুলেছে যাদের কাছে যা কিছু রুশ তাই খারাপ। এদের সংশোধন করার অন্য কোন উপায় নেই সমূলে উৎপাটন করা ছাড়া। এটা অনেকটা আমাদের দেশের রাজাকারদের মত। আমাদের দেশে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও তারা পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি, বরং আরও বেশি করে পাকিস্তানি হচ্ছে। এখানেও সেটাই ঘটবে। রাশিয়া আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভেবে দেখতে পারে কি করবে এই বিগড়ে যাওয়া মানুষদের নিয়ে। আসলে মানুষকে বদলান খুবই কঠিন। ইউরোপের দিকে তাকালেও সেটা বোঝা যায়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে গত শতকের তিরিশ চল্লিশের দশকে প্রায় সমস্ত ইউরোপই ফ্যাসিবাদী চেতনা দ্বারা আক্রান্ত ছিল – প্রায় সব দেশেই ইহুদীদের ঘৃণা করা হত, সব দেশেই তাদের ধরিয়ে দেওয়া হত। যদিও আমরা সাধারণ ভাবে বলি জার্মান বাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেছিল, বাস্তবে সেখানে জার্মান বাহিনীর বাইরেও ইটালিয়ান, রোমানিয়ান, হাঙ্গেরিয়ান, চেক বিভিন্ন দেশের আলাদা আলাদা সেনাবাহিনী যুদ্ধ করেছিল হিটলারের হয়ে। ইউরোপের সব দেশই বিনা যুদ্ধে হিটলারের জার্মানির কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল, প্রতিরোধ আন্দোলন যেটুকু গড়ে উঠেছিল সেটা মূলত কমিউনিস্ট আর বাম পন্থীদের দ্বারা। বর্তমানে যা কিছু রুশ তাই ক্যান্সেল করার যে উৎসব চলছে ইউরোপের দেশে দেশে সেটা নতুন করে প্রমাণ করে যে ইউরোপ এখনও ফ্যাসিবাদ থেকে, বর্ণবাদ থেকে মুক্ত নয়। এশিয়া, আফ্রিকার মানুষদের সাহায্য করে নিজেদের অতীতের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা থাকলেও তার পেছনে অন্য কারণও কাজ করছে – নিজেদের ক্ষয়িষ্ণু ডেমোগ্রাফির সমস্যার সমাধান যা শ্রমিক  সরবরাহ করবে। কারণ এরা আর যাই করুক এসব মানুষ যাতে নিজ নিজ দেশেই কাজকর্ম করে নিজেদের জীবন আর সেই সাথে দেশের উন্নয়ন করতে পারে সে জন্যে তারা কিছু করে না। আসলে সেটা সব ক্ষেত্রেই। বিএলএম, নারী অধিকার ইত্যাদির কথা বললেও এসব সমস্যার মূলে যে অসম বন্টন ব্যবস্থা সেটার বিরুদ্ধে কিন্তু তারা কখনই কথা বলে না। যদিও এখন প্রায়ই আফ্রিকা ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় আসন্ন দুর্ভিক্ষ নিয়ে এরা সোচ্চোর, ইউক্রেনের শস্যের বেশিরভাগ কিন্তু তারাই নিয়ে নিয়েছে, শুধু তাই হয় যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকেই বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো আর ডলার ছেপে বিশ্ব বাজার থেকে শস্য কিনে কৃত্রিম ভাবে অভাব তৈরি করেছে। যদি ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখেন – কী শেখ মুজিব, কী সালভাদর আলিয়েন্দে, কী প্যাট্রিস লুমুম্বা, কী জামাল নাসের – এরা কেউই কমিউনিস্ট ছিলেন না – সবাই ছিলেন জাতীয়তাবাদী নেতা, সবাই নিজের দেশের স্বার্থকে ইউরোপ আমেরিকার স্বার্থের চেয়ে বড় করে দেখেছেন, আর সে কারণেই সবাই সিআইএর হাতে খুন হয়েছেন – যদিও আপাত দৃষ্টিতে সে হাত ছিল অন্যের। তাই আমেরিকা যে কে শাসন করে সেটাই বিরাট প্রশ্ন। মনে আছে জন কেনেডির কথা? পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট হাজার হাজার মানুষের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন – প্রায় ষাট বছর আগে। আজও সেই রহস্য অজানা রয়ে গেল। কেন? ১৯৬২ সালে ক্যারিবিয়ান ক্রাইসিসের সময় যখন আমেরিকার এস্টাব্লিশমেন্টের প্রায় পুরোটাই সোভিয়েতের সাথে যুদ্ধের পক্ষে তিনি একক ভাবে খ্রুশেভের সাথে চুক্তি করলেন। কেনেডি কি  নিজের জীবনের বিনিময়ে শান্তি কিনেছিলেন? তাই মুখে যাই বলুক আসল ক্ষমতার কলকাঠি যে পশ্চিমা বিশ্বে অন্যের হাতে সেটা বুঝতে কষ্ট হয় না।

জেনিফার প্সাকির কথা মনে আছে? কিছুদিন আগেও তিনি হোয়াইট হাউসের স্পোকস ওম্যান ছিলেন। বারাক ওবামার রাজ্যত্বকালে তার আবির্ভাব। প্রায়ই এমন সব কথা বলতেন যে মনে হত ভদ্রমহিলা আর শিক্ষা দীক্ষা রেল লাইনের মত দুই সমান্তরাল পথের যাত্রী। এ নিয়ে অনেকে হাসাহাসি করত। আমার বিশ্বাস এটা অজ্ঞতা থেকে নয়, ইচ্ছাকৃত ভাবে করা যাতে সবাই এসব নিয়ে হাসাহাসি করে আসল কথাটাই ভুলে যায়। এসব জিনিস বড়ই সংক্রামক। আজ পশ্চিমা বিশ্বের প্রায় সব নেতাই এমনটা করেন। এই তো জোসেফ বাইডেন ইউক্রেনকে ইরাক বলেন, যারা তাঁর জন্মের অনেক আগেই মারা গেছেন তাদের সাথে কথা বলার দাবি করেন, গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এ ছয় মাস আগে মৃত এক সহকর্মীকে খোঁজেন। আবার এই লোকই বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ শুরুর আদেশ দেন, বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।  সে কারণেই আমার মনে হয় এসবই ইচ্ছাকৃত। কেননা যদি কখনও সম্ভব হয় এদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো এরা বেকসুর খালাস পেয়ে যাবেন অপ্রকৃতস্থ বলে।

সোভিয়েত ইউনিয়নে আসার পর থেকেই একটা কথা শুনে আসছি – ব্যক্তি পূজা। অবশ্য স্তালিনের মতে – অপরিবর্তনীয় লোক নেই। এক সময় মনে হত যদি সঠিক সিস্টেম গড়ে তোলা যায় তাহলে কলাগাছও রাজা হতে পারে। তবে পশ্চিমা বিশ্ব বিগত কয়েক দশক ধরে যে সিস্টেম গড়ে তুলেছিল বর্তমান নেতৃত্ব যে ভাবে সেটা তছনছ করে ফেলছে তাতে মনে হয় ইতিহাসে ব্যক্তির গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়। আসলে এটা অনেকটা গাড়ির মত। যতক্ষণ ভালো ভাবে চলে যেকোনো ড্রাইভারই তা চালাতে পারে, কিন্তু হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেলে শুধুমাত্র দক্ষ ও অভিজ্ঞ ড্রাইভারই সেটা আবার চালু করতে পারে। দেশের ভালো সময়ে যেকোনো নেতাই কাজ চালিয়ে যেতে পারে, তবে ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতিতে দরকার অভিজ্ঞ ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব। গুরুত্বপূর্ণ দেশে সঠিক নেতৃত্বের অভাব বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিপদ। এর ফলে যুদ্ধ চলতে পারে অবিরাম। বর্তমান নেতৃত্ব মনে হয় মহাভারতের কালেক্টিভ অভিমন্যু যারা চক্রব্যূহে ঢুকতে পারে কিন্তু বেরুনোর পথ জানে না। আর তা হলে ইউক্রেন নতুন প্যালেস্টাইনে পরিণত হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। কারণ এখন শুধু ইউক্রেনের সেনারাই সেখানে যুদ্ধ করছে না, যুদ্ধ করছে ন্যাটোর সেনারা, যদিও ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে। শোনা যায় ওদের আক্রমণের প্রথম লাইনে থাকছে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ, তাদের ট্যাঙ্কের দরজা নাকি সীল মারা যাতে পালাতে না পারে। আর পালালে পেছন থেকে তাদের তাদের গুলি করে মারছে ভাড়াটে পোলিশ সেনারা যারা দ্বিতীয় সারিতে। এরপরে আছে  বিভিন্ন ন্যাটো দেশ থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ইউক্রেনের সেনারা। ভ্লাদিমির পুতিন এ যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অনেকেই তাঁর সাথে একমত। কেননা এখানে এক দিকে যেমন ইউক্রেনের একদল মানুষ অন্যদলের সাথে যুদ্ধ করছে আবার রুশরা যুদ্ধ করছে রুশদের বিরুদ্ধে, ইউক্রেনরা ইউক্রেনদের বিরুদ্ধে, ইহুদীরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে, চেচেনরা চেচেনদের বিরুদ্ধে। এক কথায় বহু জাতির দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন জাতির মানুষ যারা আজ রাশিয়া ও ইউক্রেনে বসসবাস করছে তারা একে অন্যের সাথে যুদ্ধ করছে। শুধু তাই নয় – একই পরিবারের দুই ভাই যুদ্ধ করছে দুই পক্ষের হয়ে। সেদিক থেকে এটা যাকে বলে ক্ল্যাসিক্যাল গৃহযুদ্ধ। গৃহযুদ্ধ সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক, সবচেয়ে হিংস্র যুদ্ধের একটি, কেননা এখানে সন্ধির সম্ভাবনা কম – এ থেকে বেরিয়ে আসার একটাই পথ – এক পক্ষের নিরঙ্কুশ বিজয়, অন্য পক্ষের সমূলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া। যদিও এখনও পর্যন্ত যুদ্ধের ভাষা মূলত রুশ, ধীরে ধীরে সেখানে পোলিশ, জার্মান, ইংরেজি, স্প্যানিস এসব ভাষাও শোনা যাচ্ছে। তবে এটা আমাদের চিরপরিচিত আন্তর্জাতিক ঐক্যের ভাষা নয় – এটা ধ্বংসের ভাষা, মৃত্যুর ভাষা।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো