চলমান সংবাদ

অবিলম্বে সকল শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি পুণ:নির্ধারণ ও সার্বজনীন রেশন এবং অন্তর্বর্তী সময়ে মহার্ঘ্য ভাতা চালু কররা দাবি জানিয়েছে স্কপ

জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, আই.এল.ও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুসারে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন চর্চার সুযোগ নিশ্চিত করা, শ্রম আইন ও বিধিমালার শ্রমিক নিপীড়নের ধারা সমূহ সংশোধন, চাকরি ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে পঙ্গুত্ব বা জীবনহানিতে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপুরণ এবং বাজারদরের সাথে সংগতিপুর্ণ মজুরি, রেশন ও আপৎকালীন মহার্ঘ্য ভাতার দাবিতে আজ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবার, বিকাল ৪টায়, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এর আহবানে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ।
স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক চৌধুরী আশিকুল আলম এর সভাপতিত্বে এবং অপর যুগ্ম সমন্বয়ক আহসান হাবিব বুলবুল এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্কপ নেতা শহিদুল্লাহ চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, রাজেকুজ্জামান রতন, আব্দুল কাদের হাওলাদার, কামরুল আহসান, নইমুল আহসান জুয়েল, শামীম আরা, সাকীল আক্তার চৌধুরী, নূরূল আমিন, খলিলুর রহমান, নুর মোহাম্মদ আকন্দ। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন আই.টি.এফ বাংলাদেশ কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক ওসমান আলী, আই.বি.সি এর মহাসচিব ও গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা রাশেদুল হাসান রাজু, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম প্রমুখ। শ্রমিক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন স্কপ নেতা সাইফুজ্জামান বাদশা, ডা: ওয়াজেদুল ইসলাম খান, আব্দুল ওয়াহেদ, আবুল কালাম, প্রকাশ দত্ত, পুলক রঞ্জন ধর, খালেকুজ্জামান লিপন প্রমুখ। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন ২০১৫ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীদের সর্বশেষ মজুরি কমিশন কার্যকর করা হয়েছে। ২০১৫ সালে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ছিল ৭৭ টাকা ৮০ পয়সা আর ২০২২ সালের ১৫ সেপেটেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারীত দরে ডলারের বিনিময় হার ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা অর্থাৎ এই সময়ে টাকার দাম কমেছে কমপক্ষে সাড়ে ৩৬ শতাংশ আর গত ১ মাসেই টাকার দাম কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব। বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশকীয় পণ্য এবং সেবার চাহিদা সৃষ্টি ও মূল্য বৃদ্ধির মাত্রায় বিচার করলে টাকার মান অর্ধেকে নেমেছে। যে সময়ে দেশের জিডিপি ১৭ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা থেকে ৩৯ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা হয়েছে, মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ ডলার থেকে ২৮২৪ ডলার অতিক্রম করে ৩০০৭ ডলারে পৌঁছানোর পথে, সেই সময় শ্রমিক – কর্মচারীদের মথাপিছু বার্ষিক আয়ের মাত্রা কমে ৪০০ থেকে ৭০০ ডলারে নেমে এসেছে। ফলে দেশের উন্নয়নের বিপরীতে অর্থনীতির নানা মারপ্যাঁচে শ্রমিক কর্মচারীদের প্রকৃত আয় কমছে, তাদের জীবনমান কমতে কমতে পুষ্টিহীনতা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে। এই অবস্থায় দেশের উন্নয়নের নামে মালিকদের উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে শ্রমজীবী মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করা যাবেনা। শ্রমিকরা অপুষ্টি আর অর্ধাহার কে সঙ্গি করে উন্নয়নের গল্প শুনবে না। তাই অবিলম্বে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ সকল শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি নিত্যপণ্যের বাজারদরের সাথে সংহতিপূর্ণভাবে পুণ:নির্ধারণ ও শ্রমজীবীদের জন্য সার্বজনীন রেশনের ব্যবস্থা এবং অন্তর্বর্তী সময়ে মহার্ঘ্য ভাতা চালু করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য কমাতে এবং ভারসাম্যপূর্ণ শিল্পসম্পর্ক তৈরী করতে শ্রমজীবীদের সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনভাবে দরকষাকষির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শ্রম আইনের শ্রমিক স্বার্থ বিরোধি ধারা সমুহ সংশোধন করে সংলাপের মাধ্যমে সকল শিল্প বিরোধ মিমাংসার পরিবেশ তৈরী না করে বর্তমান দমনমুলক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করলে তা শিল্প সম্পর্কে বুমেরাং হয়ে দেখা দেবে। নেতৃবৃন্দ হাসেম ফুড, বি.এম কনটেইনার ডিপোসহ কর্মক্ষেত্রে নিহত শ্রমিকদের পরিবার প্রতি আজীবন আয়ের মানদন্ডে ক্ষতিপুরণ প্রদান এবং ক্ষতিপুরণ আইন সংশোধনের আহবান জানান। নেতৃবৃন্দ ইপিজেড অঞ্চলসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের চাকরি অবসানে প্রাপ্য ন্যায্য পাওনা আদায় করে দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ব্যার্থতার জন্য নিন্দা এবং বেকা, কুনতং, এ-ওয়ানসহ সকল কারখানার শ্রমিকদের প্রাপ্য পাওনা অবিলম্বে পরিশোধের দাবি জানিয়ে বলেন আর কোনো কারখানার শ্রমিকরা যেন সিনহা টেক্সটাইলের শ্রমিকদের মত বঞ্চিত না হয়। সমাবেশ থেকে শ্রমজীবীদের জন্য সার্বজনীন রেশন চালুর দাবিতে ৫ অক্টোবর ২০২২ তারিখে খাদ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান এবং সারাদেশ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে খাদ্য মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।

# ১৬/০৯/২০২২, ঢাকা #