মতামত

শ্রম বিধিমালা সংশোধনীঃ মাতৃত্ব কল্যাণ ছুটি প্রসঙ্গে

– ফজলুল কবির মিন্টু

ফজলুল কবির মিন্টু (ফাইল ছবি)

শ্রম বিধিমালা সংশোধনীতে বিধি ৩৮ এর শেষে আরো একটি নতুন শর্তাংশ যুক্ত করে বলা হয়েছে প্রসব পূর্ববর্তী ৮ সপ্তাহের নির্ধারিত সময়ের পরে কোন মহিলা শ্রমিক সন্তান প্রসব করলে উক্ত নির্ধারিত সময়ের পরবর্তী দিন এই বিধির অধীন সমন্বয় করতে হবে। বিধির অধীন কীভাবে সমন্বয় করা হবে তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। তাছাড়া পূর্ববর্তী ৮ সপ্তাহের নির্ধারিত সময়ের পূর্বে যদি সন্তান জন্ম গ্রহণ করে সেটা কীভাবে সমন্বয় হবে সেটাও আলোচনায় আসা উচিৎ ছিল। কিন্তু বিধিতে এ বিষয়টি রহস্যজনক কারনে উহ্য রাখা হয়েছে।

নতুন বিধি ৩৮ক যুক্ত করে গর্ভপাতের পরে স্বাস্থ্যজনিত কারণে  সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ৪ সপ্তাহ ছুটি ভোগ করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে “ছুটি ভোগ করতে পারবেন” এর বদলে “ ছুটি প্রাপ্য হবে” উল্লেখ করা হলে শ্রমিকের ছুটি প্রাপ্তি নিশ্চিত হতো অন্যথায় এই ৪ সপ্তাহ ছুটি পাওয়া মালিকের ইচ্ছা –অনিচ্ছার উপর নির্ভর করবে। এছাড়া স্বাস্থ্য জনিত কারণে ৪ সপ্তাহ পরেও যদি ছুটি প্রয়োজন হয় তাহলে অব্যবহৃত পীড়া ছুটি, অতঃপর নৈমিত্তিক ছুটি এবং অর্জিত ছুটি হতে ছুটি পাওয়ার অধিকার শ্রমিকের থাকবে এমন শর্তও যুক্ত হওয়া উচিৎ।

প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার পরিমান বিষয়ে শ্রম আইনের ধারা ৪৮ এর উপধারা ২ এ উল্লেখ আছে নোটিশ প্রদানের অব্যবহিত পূর্ববর্তী ৩ মাসে শ্রমিকের প্রাপ্ত মজুরীকে উক্ত সময়ে তার মোট প্রকৃত কাজের দিনগুলি ভাগ করে ১ দিনের গড় মজুরি নির্নয় করতে হবে। আইনে এভাবে সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকার পরেও নতুন বিধি ৩৯ক যুক্ত করে উপবিধি ১ এ  বলা হয়েছে শ্রমিকের সর্বশেষ মাসিক প্রাপ্ত মজুরীকে ২৬ দ্বারা ভাগ করে ১ দিনের মজুরি নির্নয় করতে হবে। প্রথমত এ বিধিটি মূল আইনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং দ্বিতীয়ত এতে শ্রমিক পূর্বের তুলনায় কম মজুরি পাবে।  কেননা ছুটিতে যাবার আগের মাসে বিভিন্ন জটিলতার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রমিকের অসুস্থ্য থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। ফলে কম সংখ্যক দিন উপস্থিত থাকার কারণে তারা কম মজুরি পাবে। তাই উক্ত প্রাপ্ত মজুরীকে ২৬ দ্বারা ভাগ করলে ১ দিনের গড় মজুরিও কমে যাবে। যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারেনা।

লেখকঃ সংগঠক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় কমিটি