un

সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলছে র‌্যাপেলিং, দুর্ঘটনার আশংকা

তীর্থস্থানে পিকনিকের নামে রাত্রিযাপন-বারবিকিউ! সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান তীর্থভূমি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ ধাম পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে র‌্যাফেলিং (দড়িতে ঝুলে পাহাড়ে উঠা)। স্থানীয় প্রশাসন ও স্রাইন কমিটির কোন ধরনের অনুমতি না নিয়ে ফেসবুক ভিত্তিক কয়েকটি ট্যুরিষ্ট গ্রুপ এই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ র‌্যাফেলিং শুরু করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই কর্মকান্ডে যেকোন সময় এখানে ভয়াবহ কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। এছাড়া তীর্থস্থানে পিকনিকের নামে তাবু দিয়ে রাত্রিযাপন, মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করে বারবিকিউ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসদরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ ধাম পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে ঘিরে এখন ভ্রমন পিপাসু মানুষের আনাগোনা ক্রমশ বাড়ছে। এই পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা মেঠো পথ, প্রাকৃতিক ঝর্ণার রুপবৈচিত্র্য এখানে আসা তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের মুগ্ধ করে। প্রতিদিন এখানে তীর্থ দর্শনার্থীদের পাশাপাশি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটে। এদিকে পর্যটকদের এই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে সম্প্রতি ফেসবুকভিত্তিক কিছু ট্যুরিস্ট গ্রুপ এখানে নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকান্ড শুরু করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চন্দ্রনাথ ধামে শম্ভুনাথ মন্দিরের পরে একটি সু-উচ্চ খাড়া পাহাড় রয়েছে। বিরুপাক্ষ মন্দিরের আনুমানিক তিন’শ ফুট উঁচু খাড়া এ পাহাড়টির একদিকে তেমন কোন গাছপালা নেই। সোজা উপরে চলে যাওয়া এই পাহাড়ের দু’পাশে রয়েছে গভীর খাদ। খাদটি হারিয়ে গেছে ঘন বনের অন্ধকারে। এই খাড়া-উঁচু পাহাড়টিতে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে দড়ি বেঁধে ঝুলে ঝুলে উঠছে কিছু অতি কৌতুহূলী তরুন! কোনরকম নিরাপত্তার সু-ব্যবস্থা ছাড়াই অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে কয়েকজনকে দড়িতে ঝুলতে ঝুলতে এই উঁচু পাহাড়ে উঠতে দেখা গেছে। নানান এডভেঞ্চারের গল্প শুনিয়ে তারা আরো তীর্থ যাত্রী ও অন্য পর্যটকদের এভাবে দড়িতে ঝুলে পাহাড়ে উঠতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। সম্প্রতি বেশ কিছু আইডি থেকে এ ধরণের প্রচারণার লেখা ও ছবি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সচেতন বিভিন্ন মহল। তারা সেখানে যেকোন সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে শংকা প্রকাশ করেছেন। সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথের বীরুপাক্ষ মন্দিরে বহিরাগতদের অনৈতিক ও ধর্মীয় উসকানিমূলক কর্মকান্ড বন্ধে রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সীতাকুন্ড স্রাইন কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে সকল স্তরের সনাতনী সম্প্রদায় নামে একটি সংগঠন। অভিযোগপত্রে তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্যাকেজ ঘোষণা করে মন্দিরের পাহাড়ে তারা তাবু দিয়ে রাত্রিযাপন করছে এবং সেখানে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ঠ করে বারবিকিউ করছে। সেইসাথে তারা বীরপাক্ষ মন্দিরের পাহাড়ের ৩০০ ফুট উঁচু থেকে দড়ি বেয়ে (র‌্যাপেলিং) নিচে নামছে। জুমারিং করছে। ড্রোন দিয়ে পুরো পাহাড় নজরদারি করছে। এটা আমাদের মন্দিরের জন্য হুমকি বলে মনে করছি আমরা। এসব কর্মকান্ড বন্ধে তারা সনাতনী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। জানা গেছে, ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ নামক একটি আইডিতে র‌্যাফেলিংয়ের (দড়িতে ঝুলে পাহাড়ে উঠা) কিছু ছবি পোষ্ট করে মোহাম্মদ হাসান ফরহাদ নামক এক তরুন লেখেন ‘বীরুপাক্ষতে ৩০০ ফুট উপর থেকে র‌্যাফেলিং!!! একই গ্রুপে শিহাব উদ্দিন নামক একজন ছবি পোষ্ট করে লেখেন, লং ফেইসে জুমারিং। লোকেশন ঃবীরুপাক্ষ মন্দির, চন্দ্রনাথ ধাম পাহাড়। বেঙ্গল ট্রেকার্স নামক একটি গ্রুপে মুহেমেনুল ইসলাম লেখেন ‘আপনাদের বহু প্রতিক্ষিত বীরুপাক্ষ ৩০০ ফিট র‌্যাপ্লিং চলে এসেছে। ১৫ সেপ্টেম্বর এই ট্যুর শুরু হবে। ১৬-১৭ দুইদিন র‌্যাফেলিংসহ প্রোগ্রাম করে রাতে ফিরে যাব। জনপ্রতি ফি ৫৫০০ টাকা। সিট খুব কম, ১৪ জনের ট্যুর। এদিকে এভাবে আরো নানান ফেইজ থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে র‌্যাফেলিংসহ নানান এডভেঞ্জারের গল্প শুনিয়ে ভ্রমন পিপাসু তরুনদের টানছে বিভিন্ন ট্রাভেল গ্রুপ। যার কোন অনুমোদন প্রশাসনের নেই। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী বলেন, এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং তীর্থ স্থানের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি স্বরুপ। প্রকাশ্যে এমন র‌্যাফেলিং চলার পরও সংশ্লিষ্ট কেউ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বোধগম্য নয়। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নেবে? এখনই এসব র‌্যাফেলিং বন্ধ করা উচিত। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, এখানে কারা কিভাবে র‌্যাফেলিং করেছে- আমি জানি না। তবে কয়েকদিন আগে একটি গ্রুপ এখানে র‌্যাফেলিং করার জন্য আমার কাছে লিখিত আবেদন করে। এখনো তাদের অনুমতি দেয়া হয়নি। তীর্থস্থানে এ ধরনের কর্মকান্ড করা যাবে কিনা, তীর্থ কমিটির মতামত কি, যারা করছে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি ইত্যাদি বিবেচনা করে পরে অনুমতি দেয়া যাবে কিনা চিন্তা করব আমরা। সীতাকুন্ড স্রাইন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ বলেন, এই ধরনের কোন গ্রুপ স্রাইন কমিটির কাছ থেকে কোন অনুমতি নেয়নি। লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো।
# ১১.০৯.২০২২ চট্টগ্রাম #