চলমান সংবাদ

মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ট্র্যাজেডি চোখের জলে শেষ বিদায়, নিহত ১১ জনের পরিবারে শোকের মাতম

– মামলা দায়ের, গেটম্যান সাদ্দামকে সাময়িক বহিষ্কার

মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা থেকে ফেরার পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। হাটহাজারী স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারের ছাত্র-শিক্ষকরা মিলে মিরসরাইয়ে আনন্দভ্রমণ শেষে ফিরেছেন লাশ হয়ে। মানুষ এখন শোকে স্তব্ধ। মেধাবী তরুণদের এমন অকাল মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই। হাটহাজারীতে নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে আছে পরিবেশ। এদিকে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ জন যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থল রেললাইনের গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে আসামি করে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘটনা তদন্তে আমরা কমিটি করেছি। কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল, কারও গাফেলতি আছে কি না সেটা তদন্তে বের হয়ে আসবে। অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাটহাজারী থেকে কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে শেষে বাড়ি ফেরার পথে মিরসরাইতে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত শিক্ষকসহ ১১ জনের জানাযা ও সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের নামাজে জানাযা শেষে শনিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে তাদেরকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এছাড়া নিহত শান্ত শীলের মরদেহ ধলই ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামে তার মামার বাড়িতে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যদায় সৎকার সম্পন্ন করা হয়। এর আগে সকালে সাড়ে ১০টায় হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার খন্দকিয়া ছমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জনের জানাযা সম্পন্ন হয়। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে জানাযায়। একসঙ্গে এতগুলো তরুণের চলে যাওয়া সকলের কাছেই যেন দুঃস্বপ্ন। জানাযায় তাদের নিথর মুখ দেখে কান্না আটকাতে পারেননি অনেকে। এছাড়া সকাল সাড়ে ১১টায় নজুমিয়া স্কুল মাঠে আরও ৪ জনের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। অপরদিকে নিহত মারুফ ও জিসানের নামাজে জানাযা শুক্রবার (২৯ জুলাই) রাতে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ জন যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। শনিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রামের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাদ্দামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তে দুইটি কমিটি করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সাদ্দাম রেলওয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় গেটম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই প্রকল্পে অধীনে রেলওয়ে পূর্বাচলে ৫০ জন গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মামলা দায়ের, আসামি সাদ্দাম : ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় গেটম্যান সাদ্দামকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। শনিবার ভোরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মিরসরাইয়ে ট্রেন-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হওয়ার পর একটি মামলা দায়ের হয়েছে। অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। দণ্ডবিধির ৩৩৮ (ক)/৩০৪ (ক)/৪২৭ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিকেলে গেটম্যান সাদ্দামকে রেলওয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয়। এদিকে রেলওয়ে পুলিশের চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার হাসান চৌধুরী বলেন, রেল পুলিশ দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। গেটম্যানকে পুলিশের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুর পৌনে ২টার দিকে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের কাছে রেলক্রসিংয়ে রেললাইনে উঠে পড়া একটি মাইক্রোবাসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেন ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসের আরোহী ১১ জন নিহত হন। আহত ছয়জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান অনুপস্থিত ছিলেন এবং গেটে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। গেটম্যান সাদ্দাম নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের এসব বক্তব্য নাকচ করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আব্দুল আহাদ সাংবাদিকদের জানান, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে একটি আপ ট্রেন যাচ্ছিল। চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী রেলক্রসিং অতিক্রম করার আগে গেটম্যান বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধক দেন। আপ ট্রেন বড়তাকিয়া অতিক্রম করার পর মাইক্রোবাসের চালক বাঁশ উল্টে গাড়ি নিয়ে রেললাইনের ওপর উঠে পড়েন। এর আগে গেটম্যান লাল পতাকা উড়িয়ে সংকেত দেন। কিন্তু মাইক্রোবাসের চালক ভেবেছিলেন মহানগর প্রভাতী আসার আগেই রেললাইন পার হয়ে যেতে পারবেন। এই ঘটনায় নিহতরা হলেন- মাইক্রোবাস চালক গোলাম মোস্তফা নিরু (২৬), চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের ইলিয়াছ ভুট্টোর ছেলে মোহাম্মদ হাসান (১৭), একই ইউনিয়নের জিয়াউল হক সজীব (২২), ওয়াহিদুল আলম জিসান (২৩), শিক্ষক রিদুয়ান চৌধুরী (২২), শান্ত (১৭) ও একই এলাকার ইকবাল হোসেন মারুফ (১৭), মোসহাব আহমেদ হিসাম (১৬), তাসমির হাসান (১৭), মনসুর আলমের ছেলে মো. মাহিম (১৭), মোস্তফা মাসুদ রাকিব (১৯)। শুক্রবার (২৯ জুলাই) রাতে সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীদুল আলম। ##