চলমান সংবাদ

চবি ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫জনই ছাত্রলীগের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের পর আপত্তিকর ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িত পাঁচজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে কোন পদ-পদবিতে তারা নেই। যৌন নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী প্রায় এক ঘন্টা ধরে নির্যাতনকারীদের হাতে জিম্মি ছিল। নির্যাতনকারী কেউ বহিরাগত নন, জড়িতদের মধ্যে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, আবার কারো বাবা সেখানে চাকরি করেন। সেই সুবাধেই ওই রাতে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিল অভিযুক্তরা। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব এসব বিষয় জানান। এদিকে চবি ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই ছাত্র মো. আজিম হোসেন ও নুরুল আবসার বাবুকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির বিশেষ সভায় তাদের বহিষ্কার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শহিদুল ইসলাম। বহিষ্কৃত ছাত্ররা হলেন- ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আজিম হোসেন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুল আবছার বাবু। এর আগে শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে চবি’র ৩৪তম সিনেট সভায় ঘটনায় অভিযুক্তদের বহিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়ন করা হবে সেটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। এ ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। ঘটনার পর থেকে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। যেসব বহিরাগত যুবক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সঙ্গে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। সে সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের বিচারকাজ চলবে। ঘটনায় জড়িত চবি ছাত্রদের আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হবে।

গতকাল শনিবার (২৩ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, চবি ছাত্রী যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ছয়জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুইজনকেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। শনাক্ত ছয়জনের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। র‌্যাব জানিয়েছে, ঘটনার নেতৃত্বদাতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. আজিম (২৩) চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আজিমের সঙ্গে গ্রেপ্তার বাকি তিনজন নুর হোসেন শাওন (২২), নুরুল আবছার বাবু (২২) ও মাসুদ রানা (২২) ছাত্রলীগের অন্য একটি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। তারা সবাই ক্যাম্পাসেই বসবাস করেন। আজিম চবি ইতিহাস বিভাগের ও নুরুল আবছার বাবু নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। নুর হোসেন শাওন হাটহাজারী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান প্রথম বর্ষ ও মাসুদ একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আজিমের বাবা আমির হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের কর্মচারী। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের স্টাফ কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। বাকি তিনজনের বাবাও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মচারী এবং ক্যাম্পাসে পরিবার নিয়ে থাকেন। অন্যদিকে চবি ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় নগরের বহদ্দারহাট এলাকা থেকে সাইফুল ইসলাম নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তার সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা। পাঁচজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব জানায়, ঘটনার শিকার ছাত্রী গত ১৭ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষে তার বন্ধুকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা হয়ে প্রীতিলতা হল সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। রাত সোয়া ১০টার দিকে দু’টি মোটর সাইকেলে আসা পাঁচজন তাদের পথরোধ করে জেরা করতে থাকে। ওই ছাত্রীর বন্ধুকে অহেতুক মারধর করতে থাকে। ভুক্তভোগী বাধা দিলে তাকেও মারধর করা হয়। এসময় ছাত্রী ও তার বন্ধুর সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি করে ছাত্রীর ব্যাগ ও দু’জনের মোবাইল কেড়ে নেয়। এছাড়া তাদের কাছ থেকে ১৩ হাজার ৭০০ টাকা কেড়ে নেয়া হয়। এরপর দু’জনকে টেনেহিঁচড়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের পেছনে ইটের রাস্তা দিয়ে ঝোপের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’জন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগে কোন সেশনে পড়ালেখা করেন- সেটা জানতে চেয়ে আবারও মারধর করে। একপর্যায়ে বন্ধুকে আটকে রেখে ওই ছাত্রীকে যৌন নীপিড়নের পর বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে। ঘটনার মূলহোতা আজিম চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী। এছাড়া জড়িত অন্যরাও ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, অপরাধী যে দলেরই হোক, সে তার শাস্তি পাবে। ছাত্রলীগ কখনও তাদের কর্মীদের পাওয়ার খাটিয়ে অপকর্ম করার অনুমোদন দেয়না। আমার বোনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া জঘন্য অপরাধের বিচার চাই। তিনি বলেন, অপরাধীদের ধরতে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। র‌্যাব চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়নি এবং এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। ঘটনার সময় মূলত যে ছয়জন জড়িত ছিল তাদের সবাইকে আমরা শনাক্ত করেছি। চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তার চারজন নিজেদের ছাত্রলীগের সমর্থক বলে দাবি করেছেন। তাবে তাদের কোনো পদপদবী নেই। তারা শুধুমাত্র সমর্থক, নেতা বা কর্মী পর্যায়ের কেউ নন। তবে বাবার চাকরিসূত্রে তাদের সবার বাসা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এর ফলে তারা দাপট নিয়ে চলাফেরা করে। নিয়মিত ক্যাম্পাসের বিভিন্নস্থানে বসে আড্ডা দেয়। অপরিচিত কাউকে দেখলে পথরোধ করে জেরা করে। বিভিন্নসময় নানাজনকে নানাভাবে হেনস্থার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ## ২৪.০৭.২০২২ চট্টগ্রাম #