চলমান সংবাদ

চবিতে যৌন নীপিড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা কারাগারে, ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রীকে যৌন নীপিড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের পর আপত্তিকর ভিডিও ধারণের মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে পুলিশ। রোববার (২৪ জুলাই) চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম ফারজানা ইয়াসমিনের আদালত আগামী মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছেন। হাটহাজারী থানার ওসি মো. রুহুল আমিন বলেন, র‌্যাবের গ্রেপ্তার করা পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে শনিবার দুপুরে থানায় হস্তান্তর করা হয়। বিকেলে তাদের আদালতে হাজিরের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তার আরেকজন সাইফুলকে শনিবার রাতে হাটহাজারী থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব। তাকেও রোববার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আমরা সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেছি। আদালত আবেদন গ্রহণ করে আগামী মঙ্গলবার শুনানির জন্য রেখেছেন। আদেশ পেলে আমরা তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। এদিকে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র আজিম হোসেন ও আবসার বাবুকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া হাটহাজারী কলেজের যে তিনজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরও বহিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন কলেজটির অধ্যক্ষ গুল মোহাম্মদ। গত শনিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের সুনাম রয়েছে। তিনজন ছাত্রের কু-কর্মের জন্য পুরো কলেজের বদনাম হতে আমরা দেব না। একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি উত্থাপন করবো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের জন্য বহিষ্কারের বিধান রয়েছে। সম্পৃক্ততা পেলে বহিস্কার করবো। প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় ৬ জন যুবকের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হন এক ছাত্রী। মোটর সাইকেলে আসা কয়েকজন ওই ৬ যুবক ছাত্রীর সঙ্গে থাকা তার বন্ধুকে আটকে রেখে তাকে যৌন নিপীড়নের পর বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। পরে ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ করলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০ জুলাই ওই শিক্ষার্থী হাটহাজারী থানায় মামলা করলে শুক্রবার রাতে নগরীর রাউজান ও হাটহাজারি উপজেলা থেকে মোহাম্মদ আজিম (২৩), নুরুল আবছার বাবু (২২), নূর হোসেন শাওন (২২), মাসুদ রানা (২২) ও সাইফুল ইসলামকে (২৪) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে চবির শিক্ষার্থী দুইজন। মোহাম্মদ আজিম ইতিহাস বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের এবং নুরুল আবছার নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া নুর হোসেন শাওন ও মাসুদ রানা হাটহাজারী কলেজের বর্তমান এবং সাইফুল ইসলাম ওই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী বলে জানায় র‌্যাব। গ্রেপ্তার হওয়াদের সবার অভিভাবক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী। তারা নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী বলেও দাবি করেন। এছাড়া র‌্যাব জানায়, ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তার ঘটনার মূল নেতৃত্বদাতা আজিম চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী। এছাড়া এই ঘটনায় গ্রেপ্তার সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের চারজনের বাবাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীর সন্তান হওয়ার সুবাদে ক্যাম্পাস এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে তাদের ছিল নিজস্ব সিন্ডিকেট। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও হেনস্তার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসের ভেতরেই ছাত্রলীগের চার কর্মীর বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠে। গত জুন ও এপ্রিল মাসে শাটল ট্রেনে বহিরাগত কয়েকজন দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ছাত্রলীগ কর্মী-বহিরাগতদের হাতে শিক্ষার্থীরা বারংবার যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার শিকার হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। # ২৪.০৭.২০২২ চট্টগ্রাম ##