চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে ঈদুল আজাহা উদযাপিত

– আত্মশুদ্ধি ও ত্যাগের মহিমায় সম্প্রতির দেশ গড়ার আহবান

 আত্মশুদ্ধি ও ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে মনের পশুত্বকে কোরবানি দেয়ার আহ্বানে ঈদ উৎসবে মেতে উঠেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। সকল ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রতির আবাহনে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তোলা এবং শান্তি কামনার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে সর্বস্তরের মুসল্লিরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেয় হাজারো মানুষ। মতপার্থক্য দূরে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও এদিন কোলিকুলিতে করেছেন শুভেচ্ছা বিনিময়। ঈদের দিন রোববার (১০ জুলাই) সকাল পৌনে ৮টায় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে ঈদুল আযহার প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধানে ঈদ জামাতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব হযরতুল আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। প্রথম জামাতে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সোলায়মান শেঠ, বিএনপি নেতা মীর নাছিরসহ বিশিষ্টজনরা অংশ নেন। তবে বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় মসজিদেই নামাজ আদায় করেছেন রাজনীতিক-জনপ্রতিনিধিরা। একইস্থানে সকাল পৌনে ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বিতীয় জামাত। এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির ব্যবস্থাপনায় ঈদুল আজহার জামাত স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন বায়তুশ শরফ আদর্শ সিনিয়র কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা ড. সাইয়েদ আবু নোমান। নামাজের পর খুতবায় দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়। ত্যাগের মহিমায় আত্মশুদ্ধি এবং মনের কালিমাকে কোরবানি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে খুতবায়। করোনার সংক্রমণ আবারও বেড়ে যাওয়ায় বয়ানে করোনাভাইরাস ও চলমান প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশবাসীকে রক্ষার জন্য প্রার্থনা করা হয়। এর আগে লালদীঘি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শাহী জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীতে এবার সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ৮টি স্থানে ইদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, এতিমখানা এবং জেলা প্রশাসনের সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত চট্টগ্রামের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ঈদ জামাত শেষে শুরু হয় পশু কোরবানির তোড়জোড়। নগরীর বিভিন্ন অলিগলি, রাস্তায়, মাঠে, বাসা-বাড়ির সামনে কোরবানি শুরু হয়। পশু জবাইয়ের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৩০৪টি স্থান নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু নির্ধারিত স্থানে কোরবানির জন্য সিটি কর্পোরেশনের আহ্বানে তেমন সাড়া মেলেনি। কোরবানি শুরুর আগে সকাল থেকেই বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত ছিলেন চসিক’র পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এবার চসিক’র পক্ষ থেকে বর্জ্য অপসারণে ৩৪৫টি গাড়ি নিয়ে নিয়োজিত ছিল ৫ হাজার কর্মী। তদারকিতে ছিলেন ১১০ জন কর্মকর্তা। টানা ৭ ঘণ্টা কার্যক্রম চালিয়ে প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন কোরবানির পশুর বর্জ্য (৯০ শতাংশ) অপসারণ করা হয়েছে বলে জানায় চসিক। চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী রোববার (১০ জুলাই) দুপুরে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম দেখেন। এসময় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘গতবছরের মতো এবারও যাতে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোরবানি বর্জ্য অপসারণ করতে পারি সেজন্য সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, পরিচ্ছন্ন বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগ, যান্ত্রিক বিভাগের সমন্বয়ে টিমওয়ার্কের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় সাত ঘণ্টার মধ্যেই আমরা নগরীতে কোরবানির বর্জ্য প্রায় অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। পুরো শহর পাঁচটি ভাউচারের মাধ্যমে পানি ছিটিয়ে পরিস্কার করা হয়েছে। ১১টি ভ্রাম্যমাণ টিম নিয়োজিত ছিল। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে ছয়জন কাউন্সিলর মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। নগরীর উত্তর-দক্ষিণের ২২ টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ফেলা হয়েছে নগরীর আরেফিন নগরের আবর্জনাগারে। পতেঙ্গা-বন্দর এলাকার বাকি ১৯টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ফেলা হয়েছে হালিশহরে আবর্জনাগারে। # ১২.০৭.২০২২ চট্টগ্রাম #