চলমান সংবাদ

অনুদান নির্ভর ২ হাজার ১৬১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা চসিক’র

উন্নয়ন অনুদান এবং কর আদায়কে অন্যতম খাত নির্ধারণ করে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-চসিক’র দুই হাজার ১৬১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় বাজেট ঘোষণা করলেন তিনি।

সেই সঙ্গে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ১ হাজার ২০২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট ঘোষণা করা হয়। রোববার (২৬ জুন) নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চসিক’র ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। এই সময় মেয়র চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে তার একগুচ্ছ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

মেয়র কোনোরূপ ম্যাচিং ফান্ড ছাড়া ২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন’ শীর্ষক প্রকল্প (১ম সংশোধিত) একনেক সভায় অনুমোদন প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

বাজেট বক্তৃতায় মেয়র বলেন, নগরবাসীর আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানোর প্রত্যাশা এবং চট্টগ্রাম নগরকে পরিবেশগত, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ, নান্দনিক ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই বাজেট। জনগণের প্রত্যাশিত সেবা ও উন্নয়ন কর্মকান্ড নিশ্চিত করার জন্য নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সকল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। সমস্যা আছে এবং থাকবেই। মেধা, দক্ষতা, সৃজনশীলতার মাধ্যমে সমাধানের পথ আমাদের খুঁজতে হবে। অতীত নিয়ে কিছু বলতে চাই না। যা আছে তা নিয়েই আমাদের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পরিচ্ছন্ন, সবুজ, বাসযোগ্য ও নান্দনিক চট্টগ্রাম মহানগরী গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরের প্রধান ৩৬টি খালে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প সিডিএ কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে যার বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সরকারের প্রকল্প সহায়তায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে। এ ছাড়া নগরীর অবশিষ্ট ২১টি খালের উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারের বিষয়ে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।

মশকনিধন কার্যক্রম জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উল্লেখ করে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদদের মাধ্যমে মশার ওষুধের গুণগতমান যাচাই করা হয়েছে। মশার উৎপাত রোধকল্পে ও পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে ৪১টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকনগুনিয়া-রোধে নিয়মিত মশার ওষুধ অ্যাডালটিসাইড ও লার্ভিসাইড স্প্রে করা ও নালা-নর্দমা থেকে মাটি-আবর্জনা উত্তোলন কাজ অব্যাহত আছে।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন অনুদান খাতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২১২ কোটি টাকার আয় দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে দেখানো হয়েছে বকেয়া কর ও অভিকর খাতে ২১৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। হালকর ও অভিকর খাতে আয় দেখানো হয়েছে ২১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এছাড়া ফিস আদায় বাবদ ১২৫ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার, জরিমানা আদায় বাবদ ৬০ লাখ, সম্পদ হতে অর্জিত ভাড়া ও আয় বাবদ ১১১ কোটি ৮০ লাখ, ব্যাংক স্থিতি থেকে আয় বাবদ ৫ কোটি ও ভর্তুকিসহ নিজস্ব উৎস থেকে আয় বাবদ ৯০৪ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন খাতে ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা, বকেয়া দেনা বাবদ ১৭৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তবে চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও পারিশ্রমিক প্রদান বাবদ ব্যয় হবে বছরে ২৯০ কোটি ১০ লাখ টাকা। এছাড়া মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ভাড়াকর ও অভিকর বাবদ ৭ কোটি ৩৫ লাখ, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও পানি ব্যয় বাবদ ৫০ কোটি ৫০ লাখ, কল্যাণমূলক ব্যয় বাবদ ৪২ কোটি ৭০ লাখ, ডাক তার দূরালাপনী বাবদ ১ কোটি ২০ লাখ, আতিথেয়তা ও উৎসব বাবদ ৬ কোটি ৫ লাখ, বীমা বাবদ ৬৫ লাখ, ভ্রমণ ও যাতায়াত ব্যয় বাবদ ১ কোটি ৩০ লাখ, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা ব্যয় বাবদ ৬ কোটি টাকাসহ মুদ্রণ ও মনিহারী বাবদ ৬ কোটি ৮১ লাখ, ফিসবৃত্তি ও পেশাগত ব্যয় বাবদ ১ কোটি ২৩ লাখ, প্রশিক্ষণ বাবদ ১ কোটি, ভান্ডার ও বিবিধ খাতের ব্যয় মিলিয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শুধুমাত্র বেতন-ভাতা, পারিশ্রমিকসহ চসিকের বার্ষিক পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় হবে ৫৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া বাকি ১ হাজার ৫৯৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা উন্নয়ন, বকেয়া দেনা, ত্রাণ ক্রয় ও অন্যান্য খাতে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।

কর আদায়ের পরিমান কম জানিয়ে মেয়র বলেন, নগরবাসীকে উন্নতসেবা নিশ্চিত করতে হলে চসিককে স্বাবলম্বী হতে হবে। কিন্তু যেখানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কর আদায়ের হার ৯০ শতাংশের বেশি সেখানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২০২১-২২ অর্থবছরে এ পর্যন্ত কর আদায়ের পরিমাণ ৪৭ শতাংশ। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। সঠিকভাবে সম্মানিত ব্যবসায়ীবৃন্দ ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করলে ট্রেড লাইসেন্স সংখ্যা দাঁড়াবে আনুমানিক ৪ লাখ। কিন্তু বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন-এর রেজিস্টার অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স সংখ্যা মাত্র ৮৫ (পঁচাশি) হাজার। সব ব্যবসায়ীকে ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনা গেলে এই খাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমদানি-রফতানির ওপর কর আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বন্দরের আয় থেকে ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ আদায়ের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এ সংশোধনী বিল আনয়নের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

#২৬/০৬/২০২২#