চলমান সংবাদ

পরিবেশ বাঁচিয়ে পাম অয়েল ব্যবহার নিয়ে ভাবনাচিন্তা

পাম অয়েলের বিপুল চাহিদা পরিবেশের উপর চাপ ফেলছে৷ ফলে আরও দক্ষতার সঙ্গে এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে এই তেল উৎপাদনের নানা পথ খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এমনকি কৃত্রিম বিকল্প ব্যবহারের কথাও ভাবা হচ্ছে৷

অরণ্য নিধন জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ৷ গাছ ও জমির কার্বন-ডাই-অক্সাইড ধারণক্ষমতা হ্রাসও এমন বিপর্যয়ের জন্য দায়ী৷ মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলেনা ভারকি বলেন, ‘‘পাম অয়েলের জন্য গাছ কাটার একটা বড় অংশ পিট এলাকায় ঘটছে৷ এমন জলাভূমি অভিনব, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উচ্চ মাত্রার কার্বনসম্পন্ন ইকোসিস্টেম৷”

এমন সব প্রভাবের কারণে অনেকেই যে পাম অয়েল উৎপাদনের বিরোধী, তা মোটেই বিস্ময়কর নয়৷ তবে বিষয়টি অত সহজও নয়৷ কারণ অয়েল পাম থেকে বিশাল মুনাফা হয়৷ পাম অয়েল প্লান্টেশনে প্রত্যেক বর্গ মিটার অংশে গড়ে এত পরিমাণ তেল পাওয়া যায়, যা গোটা প্লান্টেশন এলাকায় রেপসিড ও সয়াবিন তেল উৎপাদনের সমান৷ পাম অয়েলের বিকল্প সৃষ্টি করতে হলে অনেক বেশি জমির প্রয়োজন হবে৷

অয়েল পাম গাছের এমন গুণের কারণে সেটি বাজারে সবচেয়ে সস্তার উদ্ভিদজাত তেল৷ অয়েল পাম সবচেয়ে কার্যকর তেলের গাছ হওয়ায় ২০৫০ সাল পর্যন্ত এর চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যাবে৷ পাম অয়েলের বিপুল চাহিদা সামলাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো একটি পথ হতে পারে৷

একাধিক গবেষণার ফল অনুযায়ী আরও ভালো কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগ করলে ইন্দোনেশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদন ষাট শতাংশ বাড়ানো যেতে পারে৷ যেমন আরও উন্নত মানের সার এ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে৷ পাম পাতা ছড়িয়ে রাখাও আরেকটি কৌশল৷ এভাবে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার গতি কমানোর পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিক্ষয়েরও মোকাবিলা করা যায়৷

সুনির্দিষ্ট প্রজনন বা জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি নতুন ও উন্নত প্রজাতির গাছও সহায়তা করতে পারে৷ যেমন ‘বামন পাম’ অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের বলে সহজে চাষ করা যায়৷ তাছাড়া একই আয়তনের জমিতে আরও বেশি চারাগাছ লাগানো যায়৷

পরিবেশ বাঁচাতে কৃত্রিম পাম তেল?

চাষের মাত্রা বাড়ালেও পরিবেশের ক্ষতি হয় বটে, কিন্তু তা সত্ত্বেও রেন ফরেস্টের গাছ কাটার থেকে এই বিকল্প অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য৷ তবে গাছ কাটা বন্ধ ও উৎপাদনশীলতা বাড়লেও বর্তমানে ব্যবহৃত জমি কাজে লাগিয়ে পাম অয়েলের বিপুল চাহিদা মেটানো হয়তো সম্ভব হবে না৷

তাহলে অয়েল পাম গাছ ছাড়াই পাম অয়েল উৎপাদন করলে কেমন হয়? বায়োকেমিস্ট্রি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্রিস চাক মনে করেন, ‘‘এক ধরনের ইস্ট তেলের ক্ষুদ্র বিন্দু সৃষ্টি করতে পারে৷ পাম অয়েলের বিকল্প হিসেবে সেটি সুবিধা বয়ে আনতে পারে৷ আমরা হুবহু সেই একই তেল সৃষ্টি করতে পারি৷”

মূল্যের দিক দিয়ে খাঁটি পাম অয়েলের সঙ্গে কখনো প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে না পারলেও এই তেল ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে ক্রিস চাক মনে করেন৷ তার জন্য  হয়তো কয়েক বছর, এমনকি কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হবে৷

বিস্ময়কর গুণাগুণ থাকা সত্ত্বেও পাম অয়েলকে ঘিরে সমস্যার শেষ নেই৷ অয়েল পাম অন্যান্য গাছের তুলনায় অনেক বেশি তেল উৎপাদন করলেও মূল সমস্যা হলো, কোন প্রক্রিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদন করা হচ্ছে৷

উন্নতির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে৷ বর্তমান প্লান্টেশনে আরও বেশি তেল উৎপাদন থেকে শুরু করে একেবারে নতুন প্রযুক্তির কল্যাণে বাড়তি তেল সৃষ্টি করা যেতে পারে৷ তবে এমন সব উদ্যোগের ফলে হয়তো আমাদের বিভিন্ন পণ্যের জন্য বেশি দাম গুনতে হবে৷ আমাদের পৃথিবীর মূল্যের তুলনায় অবশ্য সেই বাড়তি দাম মোটেই বেশি মনে হবে না৷

আডাম লেভি/এসবি