মতামত

রাষ্ট্র স্বীকৃত সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত পরিবহন শ্রমিকেরা

-উজ্জ্বল বিশ্বাস।

মহান মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের ঐতিহাসিক এক দিন। এই দিবসকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবেও পরিচিত পহেলা মে। বরাবরই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ দিনটিকে উদযাপন করা হয়। বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন সময়ে গত দুই বছর কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পালিত হয়েছে মহান মে দিবস। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পয়লা মে জাতীয়ভাবে ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়। বিভিন্ন প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে আমাদের দেশে পালিত হয় মে দিবস। শ্রমিকরা সেদিন রক্তের বিনিময়ে নিজেদের অধিকার আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। দীর্ঘদিনের অমানুষিক পরিশ্রম আর কম পারিশ্রমিক পাওয়া শ্রমিকরা মালিকপক্ষের উপর গর্জে উঠেছিলেন। শ্রমিকদের দাবি ছিল, ‘৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম আর ৮ ঘণ্টা নিজের জন্য’। প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা কিংবা তার চেয়েও বেশি সময় কাজ করতে হয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে। এই দীর্ঘ কর্মঘণ্টার প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন জীবনে। তাই বিশ্বের নানা প্রান্তের শ্রমিক সংগঠনগুলো ৮ ঘণ্টা কাজকে আদর্শ কর্মঘণ্টা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের শ্রমিক আন্দোলনই মহান মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস নামে পরিচিত। শ্রমজীবী মানুষকে ন্যায্য অধিকার আদায়ে আরও সাহস জোগায় এই দিনটি। সব ধরনের অন্যায়, অবিচার জুলুম-নির্যাতন আর অমানবিকতার বিপক্ষে গর্জে ওঠার পথ দেখায় এই মহান মে দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে।
দেশের অন্যতম চালিকা শক্তি হচ্ছে সড়ক পরিবহন খাত এই খাতেই কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭৮ লাখের বেশি। পৃথিবীর মানব সভ্যতার উন্নয়নের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ অংশীদার সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা। অথচ সড়ক পরিবহন খাত  অন্যতম ঝুকিপূর্ণ এবং অনিরাপদ কর্মক্ষেত্র হিসাবেও  চিহ্নিত। বাংলাদেশের নির্মম বাস্তবতায় সড়ক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কতিপয় কর্মকর্তাদের অনিয়ম, দূর্নীতি-দূর্বৃত্তায়ন, জুলুম-নির্যাতন, হয়রানি, মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে বলয়ে অমানুষিক নির্যাতন-নিপীড়ন, চাঁদাবাজিতে শোষনের ফলে স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পরেও পরাধীনতার শৃংখলে কর্মময় জীবন আজ অতিষ্ট। নেই কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, শ্রম আইন স্বীকৃত কর্মঘন্টা, সাপ্তাহিক ছুটি, উৎসব বোনাস, নেই মালিক কর্তৃক নিয়োগ পত্র, পরিচয় পত্র, অতিরিক্ত কাজের মুজুরী, জীবন-মানের নিশ্চয়তা। পরিবর্তিত বিশ্বে চতুর্থ শিল্পায়নের যুগেও মে দিবস আসে, মে দিবস যায় সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের ভাগ্যন্নোয়ন অনিশ্চয়তার জিম্মিদশায় ঘুরপাক খাচ্ছে পরিবহণ শ্রমিকের ন্যায্য মুজুরী ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার।
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬, শ্রম বিধিমালা ২০১৫ স্বীকৃত অধিকার যেন, খাতায় আছে গোয়ালে নেই। দেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে জাতীয় ভিত্তিক একাধিক ফেডারেশনের নেতৃত্বে থাকা কুশিলবরা নিজেদের ভাগ্যন্নোয়নের লক্ষ্য নির্ধারন করে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম নিজারাই বিলুপ্ত করে স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে এমনকি মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদেরও বিভিন্ন পদে পদায়ন করে “নৌকা, নাঙ্গল, ধানের শীষ সকল সাপের এক বিষ” শ্লোগনে গঠন করেন সর্বদলীয়, দল নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, যার বর্তমান নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর অন্যতম সদস্য সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজান খান সভাপতি, বাসদ এর কেন্দ্রীয় নেতা ওসমান আলী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে থেকে সুচারুভাবে সড়ক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের এই সনদকে পুঁজি করে দেশব্যাপি সর্বদলীয় পেশাদার চাঁদাবাজদের সমন্বয়ে সাধারণ শ্রমিক-মালিক-যাত্রী তথা রাস্ট্রকে জিম্মি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অসাধু কতিপয় কর্তাদের সহযোগিতায় বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে আসছে সকলের জ্ঞাতসারে। নিজেরাই মালিক, নিজেরাই শ্রমিক এমনকি তারাই রাস্ট্রীয় সকল ক্ষমতার অধিকারীত্বের দূর্বৃত্তায়নে শ্রমিকদের অসচেতনতায় একদিকে বাড়ছে সড়কে নৈরাজ্য, দূ্র্ঘটনা, যাত্রী হয়রানী, যানজট, মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে ডাকাতি, সাধারণ শ্রমিক-মালিকরা হচ্ছে প্রতিনিয়ত জুলুম-নির্যাতনের শিকার, দিতে হচ্ছে সড়কে নিরীহ শ্রমিকের প্রাণ। অন্যদিকে শ্রমিক-মালিক সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা অপশক্তির বলয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ জনগুরুত্বপূর্ণ এই শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছে তার ন্যায্য অধিকার থেকে । রাস্ট্র হারাচ্ছে রাজস্ব, উপেক্ষিত দেশের প্রচলিত শ্রম আইন, ব্যহত রাস্ট্রীয় সকল উদ্যোগ। সড়ক পরিবহনে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্য থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহান মে দিবসের তাতপর্য। বিলীন হচ্ছে মহান মে দিবসের রক্তাক্ত ইতিহাসের শ্লোগান – “দুনিয়ার মজদুর এক হও! লড়াই কর”
উজ্জ্বল বিশ্বাসঃ সহ-সভাপতি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি।
2