মতামত

নির্মান শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির পাশাপাশি পেনশন ও বীমা স্কিম চালু করতে হবে

– মহিন উদ্দিন

বর্তমান সরকারেরঅন্যতম এজেন্ডা হচ্ছে-  উন্নয়ন। পদ্মা সেতু, বড় বড় ফ্লাই ওভার, রাস্তাঘাট, মেট্রো রেল, কর্ণফুলি নদীর নীচে টানেল ইত্যাদি বড় বড় প্রজেক্ট সম্পাদন করে বর্তমান  সরকার ক্রমশঃ উন্নয়নের মহা সড়কে যেন এগিয়ে চলছে। এছাড়া বেসরকারী পর্যায়েও সৃষ্টি হয়েছে বহু বড় বড় ডেভেলপার কোম্পানী। যাদের মাধ্যমে দেশের আনাচে কানাচে তৈরি হচ্ছে অজস্র বহুতল ভবন। সুতরাং এক কথায় বলা যেতে পারে দেশে এখন উন্নয়নের মহোৎসব চলছে। কিন্তু আমরা কী জানি এই উন্নয়ন মহোৎসবের অন্যতম চালিকা শক্তি- এদশের লক্ষ লক্ষ হতভাগা নির্মাণ শ্রমিকেরা কেমন আছে?

একথা বলতে দ্বিধা নেই আমরা নির্মাণ শ্রমিকেরা একদম ভালো নেই। আমাদের হাতের ছোঁয়ায় এত উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হলেও দিনশেষে আমাদের পরিচয় যেন দিন মজুর। আমাদের নেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। আমরা কাজ করলে মজুরি পাই আর কাজ না করলে মজুরি পাইনা। অনেক সময় কাজ শেষ হয়ে গেলে বকেয়া মজুরি পেতে বছরের পর ঘুরতে হয়। এমনকি বকেয়া মজুরি চাইতে গিয়ে অনেক নির্যাতন হয়রানির শিকার হতে হয় আমাদেরকে। এ বিষয়গুলো দেখার জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগও নাই।

আমরা বড় বড় প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করলেও আমাদের প্রতি সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর যেন কোন দায়বদ্ধতা নেই।  এখন রোজা চলছে। আগামী ২ অথবা ৩ মে ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকেরা ঈদ বোনাস পাওয়ার নিয়ম থাকলেও আমরা নির্মাণ শ্রমিকেরা বোনাস কার কাছে থেকে নেব সেটাই জানা নেই। আমাদের দুই-চারজনের কাছে ঈদ করার মত জমা টাকা থাকলে তাদেরকে সৌভাগ্যবানই বলা যেতে পারে। আর যাদের জমা টাকা নাই তাদেরকে ধার-কর্জ করে ঈদ করার প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক সময় ঋনের টাকার জন্য দিতে হয় উচ্চ হারে সুদ।

শুধু তাই নয়,সুনির্দিষ্ট  নিয়োগ কর্তা না থাকায় আমরা নির্মান শ্রমিকেরা শ্রম আইনের সকল সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছি। নির্মাণ শ্রমিকদেরকে কোন নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক বুক, সবেতন ছুটি কিছুই দেয়া হয়না। বয়স বাড়ার কারনে কিংবা শারীরিক অসুস্থতার কারনে কাজ করতে না পারলে নির্মান শ্রমিকদের আয় শূন্য থাকতে হয়। ফলে নির্মান শ্রমিকদের সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।  নির্মান শ্রমিকদের এ সকল সংকট থেকে উত্তরণের জন্য শ্রমিকদের স্থায়ী রেশনিং এর আওতায় আনা এবং কল্যাণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কিছু পরিকল্পিত উদ্যোগ যেমন – পেনশন এবং বীমা স্কিম চালু করা দরকার। সেই সাথে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কিংবা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদেরকে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র দিয়ে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বিকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। নির্মাণ শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে পুর্নাংগ নাম ঠিকানাসহ রেজিস্টার খাতা রাখতে হবে। যাতে শ্রমিকেরা আহত বা নিহত হলে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় এবং তাদের সুচিকিৎসা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা যায়।

নির্মান শ্রমিকদের একটা বড় অংশ দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করে। চট্টগ্রামে দেওয়ান হাট, চকবাজারে নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ পাওয়ার আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এটা খুবই অমানবিক। ঐ সকল জায়গাগুলোতে নির্মান শ্রমিকদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য টয়লেট ও ওয়াশ রুম সুবিধা সহ পর্যাপ্ত শেড নির্মান করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।

মহিন উদ্দিনঃ সাধারণ সম্পাদক, ইমারত নির্মান শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ, বায়েজিদ থানা কমিটি