চলমান সংবাদ

আইন মেনেই বলছি

– উত্তর পুরুষ

বলেন তো, আপনি কি কথা না বলে থাকতে পারবেন? আপনাকে কোটি টাকা দেয়া হবে যদি আপনি এক বছর কারো সাথে কথা না বলে থাকতে পারেন। আপনি কি পারবেন ? আমাদের অবস্থা ট কি সেই রকম দাঁড়াচ্ছে না? তুমি খাও, ঘুমাও, ফুর্তি কর কোন অসুবিধা নাই, কিন্তু কোন কিছুর প্রতিবাদ করতে পারবে না। তবে যতই চেষ্টা করি না কেন আমাদের প্রতিবাদের অনুভুতিটা কিন্তু এখনো ভোতা হয়ে যায় নি। প্রতিবাদের ধরণটা হয়তো একটু পাল্টেছে, কিন্তু প্রতিবাদ বন্ধ হয় নি। আপনি ফেসবুক খুলে দেখেন। দেখবেন ফেসবুক এর পাতা টিপ দেয়া নারী মুখ এ  ভরে গেছে। কেন এই মুখের ছবি? এটা বলে দিচ্ছে আমি টিপ পড়ব কি পড়ব না তা আমার অধিকার, তুমি বলার কে? তুমি ঠিক করে দেবে কেন?

যাকগে, আসল কথায় আসি। ছোট বেলায় একটা ছড়া প্রায়ই শুনতাম আর সেটা শুনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। এই বুঝি চাঁদ নেমে এল মাটিতে আর এসেই আমার কপালে টিপ দিয়ে গেল। চলুন আর একবার দেখি ছড়াটা পড়ি-

আয় আয় চাঁদ মামা

টিপ দিয়ে যা,

চাঁদের কপালে চাঁদ

টিপ দিয়ে যা।

মাছ কাঁটলে মুড়ো দিব,

ধান ভাংলে কুড়ো দিব,

কালো গরুর দুধ দিব,

দুধ খাবার বাটি দিব

চাঁদের কপালে চাঁদ

টিপ দিয়ে যা।।

 

ছড়াটা শুধু আমি না সব বাচ্ছারাই শুনেছে আর মা’য়ের কোলে ঘুমিয়েছে। কেঊ তো কিছুই বলে নাই। আজকে হঠাত করে টিপ নিয়ে এত কথা কেন ভাই। তুমি বলছ “ টিপ কেন পরছোস?’ কিন্তু তুমি কি জান যে তুমি রাষ্ট্রের একটা অংশ। তুমি কোথায় আমার অধিকার রক্ষা করবে, তা না করে তুমি আমার অধিকার নিয়ে টানাটানি করছ। এটা কত বড় অন্যায়, তুমি কি বোঝ?

 

আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখি না। তুমি এই পচা গলা অধঃপতিত সমাজের একটা অংশ। তোমার মাথার মগজে ঢুকে গেছে টিপ পরা যাবে না। আমি তোমাকে দায়ী করি না। আমি তাদের দায়ী করি যারা তোমার মাথায় এইসব আজগুবি কথাগুলো ঢুকিয়েছে-তাদের,  যারা এই ভাবনাগুলোকে প্রশ্রয় দেয়- তাদের। কই এই বিষয়ে তো রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন প্রতিবাদ আসে নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার সবাই তো নারী। তাদের কেউ একজন তো রাস্তায় দাঁড়িয়ে না হলে ও টিভি ক্যামরায় এসে বলতে পারতেন- হেই পুরুষ এই কথা বলার তুমি কে, তোমাকে এটা বলার অধিকার কে দিয়েছে। না বলেন নি। উনারা সবাই রাজনীতি করেন, উনারা জানেন এই কথা বললে উনাদের ভোট কমে যাবে। ক্ষমতায়  যাওয়া-থাকা কঠিন হয়ে যাবে। তার চাইতে কিছু না বলাই ভাল। আমি ও বলি ভাল। যে কদিন পারেন না বলে থাকেন। এইভাবেই তো আপানারা প্রশ্রয় দিচ্ছেন। সমাজটার তলিয়ে যাওয়া দেখছেন। সহায়তা করছেন। করেন, অসুবিধা নাই।

 

পাকিস্তান আমলে ও এই রকম বিভিন্ন বিষয়ের উপর আঘাত এসেছিল । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে কটাক্ষ, তাকে নিষিদ্ধ করা থেকে শুরু করে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি পরিবর্তনের অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল।

কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধ সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। কিছুই টিকে নাই।

 

ভাইরে, কথা দিয়েছিলাম যা বলব সব আইন মেনেই বলব । তাই বেশি কিছু না বলাই ভাল। কখন আবার কথা বলার জন্য কে কি করে বসেন তার কি ঠিক আছে?  তার চাইতে টিপ নিয়ে কবিতা পড়ি-

“তোমার কপালে

কে বলে তা কেবলই টিপ ?

তাতো সহস্র প্রেমিকের চোখে বিশ্ব,

লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা,

বীর বাঙালীর বিজয়ের উল্লাসে মাতা

আর কবির চোখে নারীত্বের গর্ব ।” ( কবি সোলায়মান ইমরান নিঃসঙ্গী)