চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম নগরীর পানি সংকট দূর হবে- আশা ওয়াসা’র

চট্টগ্রাম নগরীতে ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইনে যুক্ত হচ্ছে আরও ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানি। কর্ণফুলী নদী থেকে তোলা এই পানি পরিশোধনের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে সরবরাহ লাইনে। সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ প্রকল্প বুধবার (১৬ মার্চ) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।
চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প চালু হলে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৭০ লাখ নগরবাসী নির্বিঘ্নে পানি পাবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর ৭০ লাখ মানুষের দৈনিক পানির চাহিদা ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসা ৯২টি গভীর নলকূপের পাশাপাশি হালদা নদী থেকে উত্তোলিত পানি পরিশোধনের মাধ্যমে সরবরাহ করতে পারে সর্বোচ্চ ৪০ কোটি লিটার। তাই দৈনিক ঘাটতি ছিলো প্রায় ১০ কোটি লিটার। ফলে ঘাটতি পানির জন্য চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা হালদা নদীর পানি দিয়ে মোহরায় ৯ কোটি লিটার, মদুনাঘাটে ৯ কোটি লিটার, কর্ণফুলী নদীর পানি দিয়ে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ফেইজ-১ থেকে ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার এবং সবশেষ ফেইজ-২ থেকে আরও ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানির যোগান দিচ্ছে। বাকি ৩ কোটি ৪০ লাখ লিটার পানির যোগান আসে ৩৪টি গভীর নলকূপ থেকে। নতুন পানি শোধনাগারটি চালু হলে ওয়াসা দিনে ৫৬ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করতে পারবে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীতে পানি সরবরাহে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলো চট্টগ্রাম ওয়াসা। এছাড়া আরও ছয় কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প আগামি সেপ্টেম্বরে চালু হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের আগষ্ট মাসে একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়ায় শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্যাকেজ-১ এর অধীনে ইনটেক ও ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ, নাসিরাবাদে রিজার্ভার এবং হালিশহরে এলিভেটেড ট্যাংক নির্মাণ করা হয়। প্যাকেজ-২ এর অধীনে ট্রান্সমিশন ও কনভেয়েন্স পাইপলাইন নির্মাণ এবং প্যাকেজ-৩ এর অধীনে নগরীর পুরাতন পাইপলাইনের পরিবর্তে নতুন পাইপলাইন বসানো হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানি সরবরাহের পাশাপাশি নগরীতে প্রায় ৭শ কিলোমিটার নতুন পানির লাইন স্থাপন করা হয়েছে। পানি পরিশোধনের পর পাইপলাইনে নগরীর নাসিরাবাদ ও হালিশহরে দুটি রিজার্ভারে পানি সংরক্ষণ করা হবে। সেখান থেকে সরবরাহ দেয়া হবে নগরীতে। জাপানের জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৪৯১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা ৩ হাজার ৬২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৮৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা ২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করে।

কর্ণফুলী নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে এ প্রকল্পে পরিশোধনের পর তা সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্প বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীতে আর পানির সমস্যা থাকবে না। তবে ২০৩০ সালের পর যেন সমস্যা সৃষ্টি না হয় সেজন্য এখন থেকেই নতুন প্রকল্প নেয়ার পরিকল্পনা আছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ বুধবার (১৬ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এটি উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে নগরীর রেডিসন ব্লুতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ।

শেখ হাসিনা পানি শোধনাগারের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাকসুদ আলম জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছি। নগরীর নাসিরাবাদ ও হালিশহরে সুউচ্চ রিজার্ভার নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম মহানগরীর কেন্দ্রীয় উত্তর ও পশ্চিমাংশের পানির চাপ সুষম করা সম্ভব হবে। এখন আর নগরীর পাহাড়ি এবং অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকাগুলোতে পানির সংকট থাকবে না।
৭শ কিলোমিটার সরবরাহ পাইপলাইন স্থাপনের ফলে পাইপলাইনে লিকেজের পরিমাণ কমে যাবে। আর তাতে ওয়াসার সিস্টেম লসও কমে আসবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর চাহিদা মিটিয়ে কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে গড়ে ওঠা কোরিয়ান ইপিজেড, কাফকো, সিইউএফএল, চায়নিজ ইকোনমিক জোনসহ ওইসব এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ দিতে ভা-ালজুড়ি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বর নাগাদ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কর্ণফুলীর পশ্চিম তীরের শিল্পাঞ্চল এবং সেইসাথে পটিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালী এলাকার জনগণকে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আওতায় আনা যাবে। আর তাতে ওইসব এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।

# ১৫.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #