চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণে সমীক্ষা যাচাই করবে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান, বাস্তবায়নে সড়ক বিভাগ

চট্টগ্রামের যানজট নিরসনসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান কোইকা। এতে কোরিয়া সরকারের অনুদান থাকছে ৫১ কোটি টাকা আর ২৬ কোটি টাকা দিবে বাংলাদেশ সরকার। রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জেং কিউনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি ব্রিফিংকালে এই উদ্যোগের কথা জানান। এরআগে গত মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর চট্টগ্রাম সিটি করর্পোরেশন নড়চেড়ে বসে। তারাও বিয়ষটি নিয়ে কয়েকটি চীনা সংস্থাসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠকও করে। যদিও শেষ পর্যন্ত চীনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নয় ; কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই চট্টগ্রামের মেট্রোরেলের প্রাথমিক কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চট্টগ্রামে পরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থা এবং মেট্রোরেল চালুর লক্ষ্যে কোইকার সহায়তায় সরকার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় প্রায় ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সমীক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে কোরিয়া সরকারের অনুদান ৫১কোটি টাকা।’ সচিবালয়ে এ বিষয়ে কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত এবং কোইকার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ইতোমধ্যে কোরিয়া থেকে একটি বিশেষজ্ঞ সার্ভে টিম বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। দলটি আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীর উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের উপস্থিতিতে ৮ ফেব্রুয়ারি একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সার্ভে টিম আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে এক রিভিউ সভায় মিলিত হবেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম নগরীর জন্য একটি সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে, এর পাশাপাশি ম্যাস ট্রানজিট লাইন বা মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও করা হবে। নগরীর উন্নয়ন চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে সার্কুলার রোড, রেডিয়াল রোড, মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, বাস টার্মিনালের জন্য স্থান নির্ধারণ, বাস রুট রেশনালাইজেশনের মাধ্যমে কোম্পানিভিত্তিক বাস পরিচালনার সমীক্ষাও সম্পন্ন করা হবে। সেতুমন্ত্রী এ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ হবে বলেও আশা করেন। ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় কোরিয়া সরকার এবং কোইকাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এদিকে রাষ্ট্রদূত লি জেং কিউন বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান শর্ত হচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়ন, এ লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে মেট্রোরেল প্রকল্প নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে কোরিয়া সরকার।’ ২০১৯ সালের জুলাইয়ে প্রাক যোগ্যতা সমীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস লিমিটেড নগরীতে মেট্রোরেলের তিনটি র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইনের প্রস্তাব করে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে দুই লেভেলে (উপরে-নিচে) মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের জন্য আড়াই বছর আগে মেট্রোরেল নিয়ে ওই সমীক্ষায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারকে মেট্রোরেলের ‘প্রতিবন্ধকতা’হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তিনটি রুটে মোট সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন ও ৪৭টি স্টেশন প্রস্তাব করা হয়। প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা ধরে সম্ভাব্য মোট ব্যয় ধরা হয় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-১ এর দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ২৬ কিলোমিটার (২০টি স্টেশন), সিটি গেইট থেকে নিমতলা হয়ে শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর পর্যন্ত লাইন-২ এর দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার (১২টি স্টেশন) এবং অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গিবাজার ও পাঁচলাইশ থেকে একেখান পর্যন্ত লাইন-৩ এর দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার (স্টেশন ১৫টি)।
# ০৬.০২.২০২২ চট্টগ্রাম #