চলমান সংবাদ

আজ সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল

– রুখসানা বিলকিস (শান্তা)

কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ক্যাম্পাসের ছাত্র ছাত্রীরা আজ আন্দোলনে নেমেছে। দাবী করছে বর্তমান ভিসির পদত্যাগ। কিন্তু কেনো এই দাবী? কেনো এত ক্ষোভে ফেটে পরছে সকল শিক্ষার্থী? তাহলে চলুন একটু তা জেনে নেই। ছাত্রী হলের ছাত্রীদের ছোটো কিছু দাবী দাওয়া আর চাওয়া পাওয়ার আবদার আজ মোড় ঘুরে অনেক বড় আকার ধারন করেছে। তাদের সেই দাবীগুলো নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিল হল প্রভোষ্টের সাথে। কিন্তু উনি তাদের এ ব্যাপারে কোনো সাহায্য না করে উল্টো অকথ্য ভাষা প্রয়োগ করেন। এক পর্যায়ে তারা ভিসির মাধ্যমে সমাধান চেয়েও পূর্ণাঙ্গ আশ্বাস না পেয়ে ভিসিকে অবরুদ্ধ করেন। ফলস্বরূপ ভিসি পুলিশ ডেকে এনে অবর্ণনীয় ভাবে ছাত্র ছাত্রীদের উপর আক্রমন করে আহত করেন যার অনেক গুলো ভিডিও আমরা দেখেছি ও মনে প্রাণে বিধ্বস্ত হয়েছি।

এখন ভিসির পদত্যাগ দাবীতে অনশন করছে তারা। কয়েকজনের অবস্থা বেশ খারাপের দিকে। যা আমাদেরকেও খুব পীড়া দিচ্ছে। আমার কথা হলো ঘটনা এতদূর কেনো যাবে? উনি কি পারতেন না ঘরোয়া ভাবে সমাধান করতে? একটু কি ধৈর্য ধারন করতে পারেননি? ওরা তো আপনাদের‌ই সন্তান। কি ভাবে পারলেন ওদের গায়ে হাত তুলতে? সন্তান ভুল করতে পারে, মা-বাবা না।পুলিশ কেনো ডাকতে হলো? স্টুডেন্টদের রক্ত কেনো দেখতে হলো আমাদের এই প্রিয় সাস্টে?

বিগত বছরগুলোয় ক্যাম্পাসকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ভিসির যত‌ই অবদান থাকুক আজ সব কিছু ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে ঐ এক বিন্দু রক্তের কাছে। প্রশাসন কথা বলার সব পথ নিজেই করেছে বন্ধ। ভালো ভাবে হলে থাকার জন্য ছাত্র ছাত্রীদের কেনো বলতে হবে? আর যদি বলতেই হয় তবে অবশ্য‌ই তা রক্ষা করার পুরো দায়িত্ব প্রশাসনের। হল ও একটা বাসার মতন। এটা মাথায় রাখতে হবে। খাওয়ার মান, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, থাকার উপযুক্ত পরিবেশ এ সব কিছু প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীর ন্যায্য অধিকার।

গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন সাস্টের শিক্ষক শিক্ষিকারা যার মাধ্যমে তাঁরা বিরল এক ইতিহাস তৈরি করল। Bravo our teachers and shame on you to all. তাদের অভিযোগ শিক্ষার্থীরা নাকি উনাদের অসম্মান করে কথা বলেছেন। আপনাদের তো চুপ থাকা উচিৎ ছিল। তা না করে বিশ্বকে জানিয়ে এই প্রমান করলেন যে শিক্ষক হিসেবে আপনারা কতটুকু ব্যর্থ। ছাত্র ছাত্রীদেরকে পারলেন না ঠিক মতন শিক্ষিত করতে। তাদের বানালেন আপনাদের প্রতিপক্ষ। শিক্ষকরাই জাতির মেরুদন্ড তৈরি করে আর আপনারা আজ নিজ হাতে সেই মেরুদন্ড ভেঙে দিলেন? পারবেন আবার সেই সম্মান তৈরি করাতে ওদের মনের মাঝে নিজের জন্য? সত্যি সেলুকাস! কি বিচিত্র এই মানুষ গড়ার কারিগরেরা!

পরিশেষে একজন প্রাক্তন ছাত্রী হিসেবে এই বলব যে, চলমান এই অহিংস পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার একমাত্র উপায় অবিলম্বে ভিসির পদত্যাগ যা এখন সকল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবী এবং তা মেনে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে এনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে সহজ ও সম্মানজনক সম্পর্ক পুনরায় গঠন করাই হবে সকলের প্রতি কাম্য। আশা করছি অচিরেই সব আগের মতন হয়ে যাবে। ক্যাম্পাস হোক আগের মতন ছাত্র ছাত্রীদের কল-কাকলীতে পূর্ণ।

লেখকঃ পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ৩য় ব্যাচের ছাত্রী এবং  ছাত্রী হলের ১ম বোর্ডার,  সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়