চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই

গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশে করোনা সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। চট্টগ্রামেও করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। দিনদিন চট্টগ্রামে আক্রান্তের হার বেড়েই চলছে। চট্টগ্রামে নতুন বছরের প্রথম দিনে (১ জানুয়ারি) ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আর মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হয় ৭৩৮ জনের। সংক্রমণের হার প্রায় ২৪ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের উদাসীনতা ও অবহেলায় সংক্রমণ বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অনেকেই। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চট্টগ্রামের পর্যটন স্পটগুলোতে এখনো ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে। গণপরিবহন, শপিংমল, পর্যটন স্পট কোথাও পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে না। করোনার ভয়াবহ এ সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে ১১টি বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলেও চট্টগ্রামের মার্কেট থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও ফুটপাতের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাসস্ট্যঠহু, রেলস্টেশন, মার্কেট ও গণপরিবহনসহ সর্বত্র মানুষ চলাফেরা করছে মাস্কবিহীন অবস্থায়। কারও মুখে আবার মাস্ক থাকলেও, নেই তার সঠিক ব্যবহার। দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের বেশির ভাগেরই মুখে মাস্ক নেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার তথ্য জানার পরও সচেতন নয় বেশিরভাগ মানুষ। ফলে সরকারের আরোপ করা বিভিন্ন বিধিনিষেধ কার্যকরের ক্ষেত্রে এসব শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। জনসচেতনতা প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুশান্ত বড়–য়া বলেন, সচেতন থাকা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বিকল্প নেই। সচেতন না হলে, সরকারসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীর সব ধরণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানছি না। ওমিক্রন বা নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট আসছে বা যেগুলো সামনে আসবে সেগুলো একজনের হলে সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির সবার হয়ে যাবে। মানে যেটা হচ্ছে খুবই সংক্রামক। তবে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। মানুষজন ভ্যাক্সিন দিবে, সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহার করবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে। সেই সঙ্গে জনসমাগম কমাতে হবে। পাশাপাশি যে নীতিমালাগুলো দেওয়া হয়েছে, সেসব মানতে হবে। না হলে সংক্রমণ হু হু করে বাড়বে।’ মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬টি ল্যাবে ৩ হাজার ১১৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭৩৮ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণের হার ২৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। নতুন শনাক্তের মধ্যে ৬৪৭ জন নগরের ও ৯১ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত সরকারি হিসেব অনুযায়ী চট্টগ্রামে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬ হাজার ৪৫৭ জন। এর মধ্যে নগর এলাকায় ৭৭ হাজার ৪৩৮ জন এবং উপজেলায় ২৯ হাজার ১৯ জন। এছাড়া সরকারি হিসেবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৩৩৮ জন। এর মধ্যে ৭২৮ জন নগর এবং ৬১০ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। বিধিনিষেধের মধ্যেও মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে মানুষ উদাসীন। অথচ ১১ দফা নির্দেশনার মূলই হচ্ছে-মাস্কের ব্যবহার। এ ছাড়া রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ, আবাসিক হোটেলে থাকতে করোনা টিকার সনদ প্রদর্শনের নির্দেশনা থাকলেও সে রকম কিছুই মানা হচ্ছে না।’ চট্টগ্রামে নতুন বছরের প্রথম দিনে (১ জানুয়ারি) ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সেদিন শনাক্তের হার ছিল ০.৬০ শতাংশ। ১১ দিনের ব্যবধানে (১২ জানুয়ারি) শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ১২ শতাংশে। সেদিন করোনা শনাক্ত হয় ২২২ জনের। পরদিন (১৩ জানুয়ারি) শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬০ জনে। ১৪ জানুয়ারি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৯৬ জন। ১৬ জানুয়ারি ৫৫০ জনের, শনাক্তের হার প্রায় ২৮ শতাংশ এবং ১৭ জানুয়ারি ৭৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়, শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ । চট্টগ্রাম জেলার সাবেক সিভিল সার্জন মুক্তিযোদ্ধা ডা. সরফরাজ খান বাবুল বলেন, দৈনিক শনাক্তের হার বাড়ছে। এ অবস্থায় সবাইকে নতুন করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিতে হবে। মাস্ক পড়ার পাশাপাশি আমাদের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। ওমিক্রমণ খুব বেশি সংক্রামক। তাই অবশ্যই এই ভ্যারিয়েন্ট থেকে রক্ষা পেতে চট্টগ্রামবাসীকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো এখন পরিহার করা উচিত।
# ১৮.০১.২০২২ চট্টগ্রাম #