চলমান সংবাদ

৫১দিন পর ঘটনার রহস্য উদঘাটন

-রাউজানে উদ্ধার সেই তরুণীর পরিচয় মিলেছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৩ যুবক আটক

চট্টগ্রামের রাাউজানে গত ২০ নভেম্বর পূর্বগুজরা ইউনিয়নের সিকদারঘাটার পশ্চিম পাশ থেকে উদ্ধার করা অজ্ঞাতনামার নারীর লাশে পরিচয় উদঘাটন করেছে রাউজান থানা পুলিশ। একই সাথে ওই নারীর খুনের সাথে জড়িত তিন খুনিকে আটক করে গতকাল আদালতে সোপর্দ করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারীর নাম আমেনা বেগম প্রকাশ রাহি প্রকাশ শারমিন (২২)। তিনি কক্সবাজার সদর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়ার নুর হোসেনের কন্যা। সে চট্টগ্রামের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।
পুলিশের কথা মতে- ভিকটিমের সাথে নিজ পাড়ার আবদুল শুক্কুরের ছেলে প্রভাবশালী নুরুল ইসলাম প্রকাশ বাদশার সাথে শারমিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের প্রলোভনে  শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে সে গর্ভবর্তী হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় নুরুল ইসলাম আবারো বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারমিনকে গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করে।
কিন্তু প্রতিশ্রুতিমত বিয়ে না করায়  ভিকটিম ও তার পরিবার নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জোড়পূর্বক গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ করে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর কক্সবাজার সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে। মামলা নং -৩৪, তারিখ-১১/১১/২০১৯ইং।
ওই মামলায় নুরুল ইসলাম গ্রেফতার হয়ে কারা ভোগ করে। জেল থেকে জামিনে এসে অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম আমেনা আক্তার ও তার পরিবারকে বশে এনে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চাপ দেয়। তাতে কোন কাজ হয়নি, মামলা প্রত্যাহার করেনি আমেনা ও তার পরিবার। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম বিভিন্ন ছল চাতুরি  ও কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিয়ের করার আশ্বাস দিয়ে পরিবারের অজান্তে আমেনা আক্তার তথা শারমিনকে চট্টগ্রাম শহরে এনে লালদিঘির পাড়ে একটি হোটেলে একদিন রাখে। পরদিন ইপিজেড থানা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। পরে তাকে নিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিনোদন স্পটে ঘুরে বেড়ায় নুরুল ইসলাম।
এখানে তাকে রেখে নুরুল ইসলাম খুনের পরিকল্পনার করে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করে তার বেয়াই (বোনের দেবর) লালখান বাজারের বসবাসকারী ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার মৃত গোলাম হোসেন এর পুত্র আকতার হোসেন (৩৫) অপরজন রাউজানের জিয়াবাজার এলাকায় বসবাসকারী নোয়াখালীর হাতিয়া বাজারের রাশেদ মিয়ার পুত্র টেক্সি চালক মেহেরাজ প্রকাশ মিরাজ (২৩) এর সাথে।
তিনজনের পরিকল্পনা অনুসারে গত ১৯নভেম্বর হোটেল থেকে শারমিনকে নিয়ে টেক্সিতে করে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন স্পটে বেড়াতে বের হয়। এভাবে ঘুরে বেড়ানোর ফাঁকে ১৯ নভেম্বর তারা শহরে ফিরে যাওয়ার আগে সুযোগ খুঁজে শারমিনকে হত্যা করার। তারা তিনজন কাপ্তাই রোড ধরে চট্টগ্রাম শহরের দিকে আসার পথে রাউজানের পাহাড়তলি এলাকা পার হয়ে নিরিবিলি জায়গায় আসলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম ও আক্তার শারমিনকে প্রথমে গলা চেপে ধরে। পরে গলায় ওড়না পেঁচিঁয়ে হত্যা করে গাড়ির ভিতর। এর পরে গাড়িটি নোয়াপাড়া পথেরহাট থেকে উত্তরমুখি রাউজান-নোয়াপাড়া সেকশন-২ পথের প্রায় চার কিলোমিটার ভিতরে গিয়ে নিরিবিলি স্থানের পূর্বগুজরা ইউনিয়নের সিকদার ঘাটা সংলগ্ন স্থানে লাশটি ফেলে চলে যায়। তখন বাজে রাত সাড়ে ৮টা। পরদিন ২০ নভেম্বর দুপুর ১২টার রাউজান থানা পুলিশ মৃত আমেনা আক্তারের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে মর্গে প্রেরণ করে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি আশা করছেন আদালতে জবানবন্দিতে একই ধরনের স্বীকারোক্তি প্রদান করবে।
# ১৩/০১/২০২২,  রাউজান, চট্টগ্রাম#