চলমান সংবাদ

চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা নিজের মামলায় গ্রেপ্তার বাবুল আক্তার

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় নিজের দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। নগরীর পাঁচলাইশ থানায় পাঁচ বছর আগে ঘটনার পরদিন মামলাটি করেছিলেন তিনি। রবিবার (৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল হালিমের আদালত এই আদেশ দেন। একই ঘটনায় নিহতের বাবার দায়ের করা আরেক মামলায় বাবুল আক্তার বর্তমানে কারাগারে আছেন। এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারকে তার নিজের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গ্রেপ্তারের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। নির্ধারিত দিনে শুনানির সময় অভিযুক্ত বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন করেছিলেন। আদালত শুনানি শেষে সেটা মঞ্জুর করেছেন। বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, মামলার তদন্তকারী সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে আদালত বাবুল আক্তারকে নিজের করা মামলাতেই গ্রেপ্তারের আদেশ দিয়েছেন। অথচ তিনি একই ঘটনায় মিতুর বাবার করা অন্য মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। একই ঘটনায় একসঙ্গে দুটি মামলা চলতে পারে না। একজন ব্যক্তি একই অভিযোগে দুই মামলার আসামি হতে পারেন না। আবার একই ঘটনায় দুই মামলাতেই গ্রেপ্তার কী করে হয়? শুনানিতে সবই বলেছি। এ বিষয়ে সুরাহার জন্য উচ্চ আদালতে যাব। যা হবার উচ্চ আদালতে হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও কুপিয়ে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। মিতু হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম তার জবানবন্দিতে ‘হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি ভোলা সরবরাহ করেছিল’ বলে জানিয়েছিল। এদিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মিতুর বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশারফ হোসেন প্রথম দিকে জামাতার পক্ষে কথা বললেও পরে ২০১৭ সালে নিজেই এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহের আঙুল তোলেন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে নগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি’র কাছে থাকলেও ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই’র ওপর। এরপর ধীরে ধীরে জট খুলতে থাকে এই মামলার। গতবছরের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ১২ মে ওই মামলার তার বিরুদ্ধে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। একইদিন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম কালু, সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া। এই মামলায় ওইদিনই বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে জবানবন্দি দেয়ার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত তিনি তা দেননি। এরপর থেকে বাবুল আক্তার কারাগারে রযেছেন। গত ২৯ মে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পিবিআই’র দেয়া চার্জশিটের বিষয়ে বাবুল গত বছর আদালতে আপত্তি জানিয়ে অন্য কোন সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তা দিয়ে মিতু হত্যার ঘটনা পুনঃতদন্ত চান। শুনানি শেষে আদালত বাবুলের নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করেন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে টেকনিক্যাল ত্রুটি আছে উল্লেখ করে অধিকতর তদন্ত করে পুনরায় প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দেন। এতে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় দু’টি মামলাই এখন তদন্তাধীন রয়েছে। # ০৯.০১.২০২২ চট্টগ্রাম #