বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (২৪)

– বিজন সাহা

যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়নে ধর্ম প্রায় নিষিদ্ধ ছিল তাই আমাদের ধারণা সেখানে ধর্ম একেবারেই ছিল না। সোভিয়েত আমলে অধিকাংশ গির্জা বন্ধ থাকলেও লোক দেখানোর জন্য কিছু কিছু গির্জা চালু ছিল। বিশেষ করে বিদেশী ট্যুরিস্টদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হত। আমি নিজেও বেশ কয়েকবার গেছি জাগোরস্ক বা সেরগিয়েভ পাসাদে, বেশ কয়েকবার ইস্টারের সময় গেছি মস্কোস্থ ফ্রান্স দুতাবাসের উল্টো দিকের গির্জায়। মূলত সেখানে থাকত বৃদ্ধাদের ভিড়, অনেকেই আমাদের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাতেন। এখনও কোথাও বেড়াতে গেলে গির্জায়  যাই, ছবি তুলি, কথা বলি। এখানকার গ্রামে গঞ্জে ধ্বংসপ্রায় গির্জা আমাকে টানে, যাই ছবি তুলতে। আর এ থেকেই বুঝতে পারি রুশ আমলে গির্জার প্রভাব। আসলে জারের আমলে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে – এ সবকিছুর রেজিস্ট্রেশন হত গির্জায়। তাই ধর্মীয় কাজের বাইরেও এ দেশের সামাজিক জীবনে গির্জার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। যেকোনো  শহরের প্রাণকেন্দ্রে ছিল গির্জা। সেই অর্থে গির্জা ছিল জনপদের কেন্দ্রবিন্দু। অনেক সময় এই গির্জাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠত শহর। এইতো ২০২১ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে গেলাম ভোলগা তীরের বিভিন্ন শহরে। নিঝনি নভগোরাদের পাশে এক গ্রামে গির্জার দুই বৃদ্ধা মহিলাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে নতুন রাশিয়ায় তাঁদের কেমন কাটছে, বললেন, «হ্যাঁ, তখন কাজ ছিল, নিশ্চয়তা ছিল, কিন্তু ঈশ্বর ছিল না, ঈশ্বরকে ডাকার স্বাধীনতা ছিল না। আজকের বিশ্বাস করার এই স্বাধীনতা যে কী সেটা সেটা তখন বুঝতাম না।» আসলেও তাই। যেকোনো ব্যাপারেই বাধা নিষেধ মানুষকে মানসিক কষ্ট দেয়। কোন কিছু করার অধিকার থাকলেই যে সে সেটা করবে তা কিন্তু নয়, কিন্তু যখনই বাধা নিষেধ আরোপ করা হয়, তখন সে নিজেকে বঞ্চিত মনে করে। যদি সোভিয়েত আমলে গির্জা বন্ধ না করত, মানুষকে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হত, খুব কম লোকই এখানে যেত। ধর্ম পালন করতে না দেওয়া বা সেটাকে সামাজিক ভাবে পশ্চাৎপদতা হিসেবে দেখা মানুষের মধ্যে এক ধরণের ভয়ের জন্ম দিত। আর এই যে ভয়ের সংস্কৃতি এটাই ছিল  সবচেয়ে খারাপ দিক।

তাহলে কি এত বাধা নিষেধের মধ্যেও সোভিয়েত আমলে ধর্ম বেঁচে ছিল? ছিল। শুধু ছিলই না, খুব ভাল ভাবেই ছিল। তবে সেটা প্রচলিত ধর্ম নয়, ধর্মের মতই অন্ধবিশ্বাস। এর আগে একবার বলেছিলাম আমার রুমমেটের কথা, যে বলেছিল, “যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতাম, তাহলে লেনিন হতেন আমার ঈশ্বর।” মনে রাখতে হবে সেই সময় প্রায় প্রতিটি শিশুই ছিল অক্তিয়াব্রিয়াতার সদস্য, এটা অনেকটা আমাদের দেশের খেলাঘরের মত। এরপর উপরের ক্লাসে গিয়ে তারা হত পাইওনিয়ার, ইনস্টিটিউটে গিয়ে কমসমলের সদস্য আর শেষে পার্টি মেম্বার। পার্টি মেম্বার তুলনামুলকভাবে কম হলেও শিশু, তরুণ আর যুবকদের প্রায় সবাই অন্য তিনটি পর্যায়ের ভেতর দিয়ে যেত।

আমার জন্ম হিন্দু পরিবারে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি বাড়িতে নিয়মিত পালন করলেও গোঁড়ামি ছিল না। ছোটবেলায় পূজার সময় ঠাকুর দেবতাকে প্রণাম করলেও হাই স্কুলে ওঠার পর সেসব বাদ হয়ে যায়। এ নিয়ে কোন সমস্যা ছিল না। বাবা প্রতি সকালে গীতা বা চণ্ডী পাঠ করলেও এসব পূজায় অংশ নিতেন না। স্কুলে মুসলিম বন্ধুদের মুখে শুনেছি ইসলাম ধর্ম জীবনের সবদিকই নিয়ন্ত্রণ করে, মানে জীবনের বিভিন্ন কাজ কর্মে মানুষ কীভাবে চলবে সেটা ধর্মে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে লেখা আছে। আমি কয়েকবার চেষ্টা করেও কোরআন পুরোটা পড়তে পারিনি, তবে রাশিয়ায় কয়েকজন বন্ধুর মুখে শুনেছি সেটা প্রায় বাইবেলের মতই, তবে অনেক বেশি স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড। আমার এক বন্ধু বলেছিল সেটা আর্মির বাইবেল। কী করা যাবে আর কী করা যাবে না সেটা খুব স্পষ্ট ভাবে সেখানে বলা। আর আমরা জানি আর্মির জন্য শৃঙ্খলা কত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু শুরু থেকেই যুদ্ধ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে, তাই এই ধরণের কঠোরতা থাকা অসম্ভব কিছু নয়। সে কারণে ওর কথা অবিশ্বাস করতে পারিনি। তবে এখানে ইসলাম নিয়ে কথা নয়, এটা বললাম সোভিয়েত জীবন কীভাবে ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল সেটা ব্যাখ্যা করতে। এই উপলব্ধি আমার হয়েছিল সেই ১৯৮৮/১৯৮৯ সালেই। আগেই বলেছি এখানে স্কুল আর ইনস্টিটিউটের প্রায় সবাই কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিল। সেটা কি বাধ্যতামুলক ছিল? মনে হয় না। তবে যেহেতু প্রায় সবাই এসব সংগঠন করত, তাই ইচ্ছায় অনিচ্ছায় প্রায় সবাইকে এটা করতে হত, কেননা স্রোতের বিপরীতে খুব কম লোকই চলতে পারে, বিশেষ করে সেই বয়সে। আমার মনে আছে সোভিয়েত বন্ধুদের কথা যারা কমসোমলের সদস্য ছিল। আমি নিজেও দেশে খেলাঘর, ছাত্র ইউনিয়ন ইত্যাদি বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম। আমি আর আমার বন্ধুরা এসব করতাম স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। করতাম গর্বের সাথে। কিন্তু আমার সোভিয়েত বন্ধুদের মধ্যে তেমন উৎসাহ দেখতাম না, না করলে না তাই করা, বিশেষ করে ভাল ছাত্ররা। যারা খুব উদ্যোগের সাথে এসব করত, তারা করত নিজেদের স্বার্থে – পার্টিকে ব্যবহার করে নিজেদের ক্যারিয়ার কন্টকমুক্ত করতে। দেখেছি শুধু পড়াশুনা নয়, ব্যক্তিজীবনে কে কী করবে, এমনকি প্রেম ভালবাসা এসব ব্যাপারেও নাক গলাতো এই সংগঠনগুলো। সমাজের সব ক্ষেত্রেই যে এটা ছিল সে প্রমাণ সোভিয়েত বিভিন্ন সিনেমা দেখেও আমরা পাই। আর এসব দেখে আমার তখনই মনে হত ইসলাম ধর্মের সাথে সোভিয়েত সমাজের অনেক মিল আছে। ইসলামের মত এখানেও সাম্যের কথা বলা হয়, কঠোর ভাবে পার্টির প্রতিটি সদস্যের জীবনের সমস্ত কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শুধু পার্টির নয়, যারা পার্টির বাইরে তাদেরও। একই ঘটনা আমরা দেখি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে, যেখানে অন্য ধর্মের মানুষদেরও ইসলাম ধর্মের অনেক নিয়ম কানুন মূলত মেনে চলতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ রোজার কথা বলা যেতে পারে। তাই যারা বলে বা বিশ্বাস করে সোভিয়েত ইউনিয়নে ধর্ম ছিল না তারা ভুল বলে, ধর্ম ছিল কিন্তু ভিন্ন মোড়কে।

তাছাড়া এখানে সেই ধর্ম ছিল আরও কঠোর। ইসলামে হারাম না খেয়ে আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ধর্মের সাথে একটা মীমাংসায় আসা যায়। ইসলামে সাম্য মসজিদে, মানে যে কেউ যে কারও সাথে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারে, যেটা হিন্দু ধর্মে প্রায় অকল্পনীয়, যদিও বৌদ্ধ, জৈন, খৃস্টান বা ইহুদী ধর্মে বর্তমান। অন্যান্য ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী করা উচিৎ সেটা বললেও শুধুমাত্র মৌলবাদীরা ছাড়া কেউ সেটা জোর করে আরোপ করে না।  সোভিয়েত ইউনিয়নে সবাই কমবেশি সমান ছিল, বিশেষ করে বেতনের দিক থেকে। তবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্রের বাধানিষেধ ছিল আরও বেশি। পড়াশুনা শেষ করার পর কে কোথায় কাজ করবে সেটা পার্টি ঠিক করত, অনেক সময় প্রেম বিয়ের ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করত। জারের আমলে ছিল ক্রেপস্তনায়া প্রাভা বা ভূমিদাস প্রথা। যে কেউ চাইলেই যেকোনো জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারত না। সোভিয়েত আমলে সেটা আরও কঠোর ভাবে আরোপ করা হয়। প্রতিটি মানুষের একটা নির্দিষ্ট ঠিকানা বা প্রপিস্কা ছিল আর তাকে সেই জনপদেই কাজ করতে হত, চাইলেই অন্য কোথাও গিয়ে কাজ করতে বা জীবনযাপন করতে পারত না। করলে তার জেল পর্যন্ত হতে পারত। তাই ধর্ম  সেখান থেকে চলে যায়নি, বরং নতুন আঙ্গিকে, আরও বেশি বাধানিষেধ নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিল।

 

ধর্মের অন্যতম প্রধান অস্ত্র ভয় – পাপ করলেই শাস্তি, ভাল কাজ করলে পুরস্কার, তবে খারাপ কাজ করেও প্রার্থনা করলে ঈশ্বর ক্ষমা করে দেন। একই ঘটনা ঘটেছিল সোভিয়েত ব্যবস্থায়। ভয় ছিল সর্বত্র, বিশেষ করে স্তালিনের আমলে। পরে সেটা তুলনামূলক ভাবে কম হলেও একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। পাপ আর পুণ্যের মতই সব ছিল সাদা কালো। এর ফলে একদিকে যেমন ছিল কর্তৃপক্ষের কাছে অন্যদের নামে দোষারোপ করার সংস্কৃতি, অন্য দিকে ছিল ঘুষ দিয়ে কর্মকর্তাদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা। তাই ঐ অর্থে ধর্ম না থাকলেও ধর্মের সমস্ত উপকরনই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে। আসলে মানুষ সভ্যতার শুরু থেকেই মাথার উপর একজন রক্ষাকর্তা চায়, চায় কেউ তার হয়ে ভাবুক, কেউ তার হয়ে কাজ করুক। এমনকি নিজেরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও বার বার চায় একটা নির্ভরতার জায়গা। অক্টোবর বিপ্লবের পর অদৃশ্য ঈশ্বরকে বিতাড়িত করে সেই স্থান দখল করে পার্টির নেতারা। তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করত সাধারণ মানুষের ভালমন্দ। তাই এক সময় সাধারণ মানুষ এদেরকেই নতুন সমাজে নতুন দেবতা মনে করতে শুরু করল। তারা নিজেরা উদ্যোগী না হয়ে সব কিছুর ভার দিল পার্টির হাতে। আর এক সময় যখন পার্টি নিজেই পরিণত হল আমলাতান্ত্রিক যন্ত্রে, পার্টি নিজেই যখন বিশ্বাস করতে শুরু করল নিজেদের অলৌকিক শক্তিতে – তাদের অধঃপতন ঘটতে সময় লাগলো না। সাধারণ মানুষ তখন বিকল্প না পেয়ে আবার ফিরে গেল গির্জায়। এটা মনে হয় শিক্ষা, অশিক্ষা বা কুশিক্ষার ব্যাপার নয়, এটা মানুষের সীমাবদ্ধতা, বিপদ থেকে নিজেকে টেনে তোলার অক্ষমতা।

 

সোভিয়েত ইউনিয়নে সাম্যবাদ আর লেনিন ধর্ম আর ঈশ্বরের আসন দখল করেছিল। সেটা আমি নিজের চোখেই দেখেছি। আসলে শুধু রাশিয়ার লেনিন বা স্তালিন কেন, চীনে মাও, উত্তর কোরিয়ায়  কিম, রোমানিয়ায় চউসেশকু, যুগোস্লাভিয়ায় টিটো – এরা কেউ কি কম ছিলেন। ইতিহাসে ব্যক্তির কাল্ট নতুন কিছুই নয়। হিটলার, মুসোলিনি থেকে শুরু করে কেনেডি, ট্রাম্প, ওবামা, গান্ধী, জিন্নাহ, মুজিব – অনেকেই কিন্তু তাঁদের সমর্থকদের কাছে দেবতার আসনে আসীন। সেটা বলা যায় শচীন, লারা, মেসি, রনাল্ডো এদের সম্পর্কেও। আসলে মেসিয়ারা যুগে যুগে আসে, কেউ ধর্মের বাণী বলে, কেউ সমাজ সংস্কার করে, কেউ রাজনীতিতে পরিবর্তন আনে। আর যখন এরকম কিছু থাকে না তখন দেখা যায় অরাজকতা। নব্বইয়ের দশকের রাশিয়া ছিল এমন – যখন না ছিল আদর্শ, না ছিল নেতৃত্ব।

প্রশ্ন আসতে পারে এর সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সম্পর্ক কী? যেটা বলতে চেয়েছি তা হল এ দেশের সাধারণ মানুষ বেশ বিশ্বাসপ্রবণ। আগে তারা বিশ্বাস করত জার তাদের সব সমস্যার সমাধান করবেন। বিপ্লবের পরে তারা সেই বিশ্বাস অর্পণ করে পার্টির উপর। জার আমলে যেমন জমিদাররা, সোভিয়েত আমলে তেমনি পার্টি নেতারা ছিল ঈশ্বরের স্থানীয় প্রতিনিধি। তবে এরা কখনোই সাধারণ মানুষের সেই বিশ্বাসের মূল্য দেয়নি। যদিও বিপ্লবের প্রথম দিকে পার্টি তাদের ভাত কাপড় বাসস্থানের নিশ্চয়তা দিতে পেরেছিল, সময়ের সাথে যখন চাহিদা বেড়েছে সেই সাথে বাড়েনি এদের জীবন যাত্রার মান। আর তার মূলে ছিল উৎপাদন ব্যর্থতা। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কর্মদক্ষতার চেয়ে পার্টির প্রতি আনুগত্য হয়েছে কাজ পাওয়ার একমাত্র যোগ্যতা। খেয়াল করলে দেখা যাবে এটা শুধু সোভিয়েত সিস্টেমের নয়, প্রায় সব সিস্টেমের মধ্যেই দেখা যায়। হতে পারে সোভিয়েত জনগণ বিশ্বাস করেছিল নতুন ব্যবস্থায় তারা আরও ভাল থাকবে। যদি তারা জানতো এর মূল্য তাহলে হয়তো রক্ত দিয়ে হলেও সোভিয়েত ব্যবস্থা রক্ষার চেষ্টা করত। তারা ভাবতে পারেনি যে একটু বেশি ভাল থাকার ইচ্ছা তাদের অনেককেই সর্বস্বান্ত করবে। এটা থেকেও আমাদের শিক্ষা নিতে হবে যে পপুলিস্টিক স্লোগান শুধু স্বপ্নই দেখায়, তা বাস্তবায়িত করতে পারে না।

 

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, দুবনা
শিক্ষক, পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো