চলমান সংবাদ

সিসিটিভিতে নজরদারি, তারপরও শেষরক্ষা হলো না ‘মাদকের রাণী’র

নগরীর বায়েজিদ থানার রউফাবাদ এলাকায় ‘মাদকের রাণী’ খ্যাত খাদিজা বেগমকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। খাদিজা ও তার স্বামী মান্নানসহ পুরো পরিবার রউফাবাদ ও আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসার একমাত্র নিয়ন্ত্রক ও প্রভাবক। মাদক ব্যবসা আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে দিতে অন্ততঃ ২০ সদস্যের একটি সক্রিয় দল রয়েছে তাদের। এই দলে আছে স্থানীয় ছাত্রলীগ নামধারী কয়েকজন নেতাকর্মীও। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে গোপন সংবাদে অভিযান চালিয়ে খদিজাকে তার রউফাবাদের উত্তর পাড়া খালপাড়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে খাদিজার স্বামী মান্নান ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে গহীন পাহাড়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ খাদিজাকে ধরে থানায় নিয়ে আসে। এ সময় তার বাসায় হাঁড়িপাতিল রাখার উঁচু ঢালাই করা স্থানে বিশেষ গর্তে লুকানো অবস্থায় ৫টি নীল রংয়ের পলিথিনের প্যাকেট থেকে এক হাজার ১৭০ পিস ইয়াবা ও ৪টি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়। এই ফোনগুলোতে বিভিন্ন কৌশলে ইয়াবা বেচা-বিক্রির তথ্য মিলেছে। নিজের ডেরায় যাতে যখন তখন পুলিশ হানা দিতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন পয়েন্টে বিশেষ চেকপোস্ট বসায় ‘মাদকের রাণী’ খাদিজা। এসব চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকে খাদিজার মনোনীত এজেন্ট। এরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই খাদিজার কাছে খবর পৌঁছে দিত। এছাড়া স্টারশিপ-পাহাড়িকা আবাসিক এলাকা দিয়ে তার বাসায় প্রবেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ইন্টারনেট প্রটোকলের (আইপি) মাধ্যমে এসব ক্যামেরা বাসায় বসে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শুধুমাত্র সিসিটিভি ক্যামেরা মনিটর করার জন্য আলাদা লোক ছিল। প্রতি রাতে জুয়ার বোর্ড : জুয়ার বোর্ডেও খাদিজার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। তার নেতৃত্বে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জুয়ার আসর বসতো। এর আগে বায়েজিদ থানা পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জুয়াড়িদের আটক ও মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠায়। পরে তারা জরিমানা দিয়ে আবারও বেরিয়ে এসে জুয়ায় মেতে উঠত। রউফাবাদ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খাদিজা বহু পুরাতন ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন কিছু না। তার কারবারের টাকা এখানকার রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে যায়। এলাকার প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে রেখে সে ইয়াবা ব্যবসা করত। এর আগেও সে একাধিকবার জেলে গেছে। দুইমাসের বেশি তাকে আটক রাখা যায়নি। নেতারা তদবীর করে তাকে ছাড়িয়ে আনে। আবার শুরু হয় মাদকের রমরমা ব্যবসা। বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন, খাদিজার মাদক ব্যবসা অনেকটা ওপেন সিক্রেটের মতো ব্যাপার। এলাকায় ‘মাদকের রাণী’ হিসেবে ইতোমধ্যে সে পরিচিতি কুড়িয়েছে। ইয়াবা ব্যবসা, সরকারি খাসজমি দখল, জুয়ার বোর্ড পরিচালনাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যেখানে খাদিজা ও তার স্বামীর বিচরণ নেই। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় অন্ততঃ ৫টি মামলা রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৩ নভেম্বর রাতে খাদিজার মেয়ে তাসলিমা আক্তারকে তার স্বামী ও অপর দুই সহকারীসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
# ০৫.১২.২০২১ চট্টগ্রাম #