চলমান সংবাদ

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহারসহ ৬দফা দাবি

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য হিন্দুদের সঙ্গে তামাশার শামিল দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতায় পুরোহিত হত্যা, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংসের ঘটনা সমূহ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিভ্রান্তিমূলক বিবৃতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সনাতনী সংগঠন। শনিবার (২০ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব এস রহমান হলে ‘ঐক্যবদ্ধ সনাতন সমাজ’ এর উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.একে আবদুল মোমেনের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য কাঞ্চন আচার্য্য। এছাড়া সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারকে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো, (১) আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, অন্যতায় দেশব্যাপী কর্মসূচি, (২) ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের ঘায়েল করা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় যেসব সনাতনীদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে(৩) সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত (৪) ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মবিশ্বাস, দেবদেবী, পূজাঅর্চনা নিয়ে বিদ্বেষমূল, উসকানিমূল অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যারা এ ধরণের অপপ্রচার করেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং এসব বন্ধে দরকার হলে আইন প্রণয়ন করতে হবে (৫) ক্ষতিগ্রস্থ ও ধ্বংসপ্রাপ্ত মঠ-মন্দির, আশ্রম, দেবালয়সমূহকে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে সেনাবাহিনীর দ্বারা পুনঃনির্মাণ এবং অগ্নিদগ্ধ ও লুটপাটকৃত বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পুনঃনির্মাণ ও ক্ষতিপূরণ করে দিতে হবে এবং (৬) সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে, সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গীতা শিক্ষা কমিটির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ডাঃ কথক দাশ, সনাতন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা অশোক চক্রবর্তী, হিন্দু মহাজোট চট্টগ্রাম জেলার এডভোকেট যীশু কৃষ্ণ রক্ষিত , ঋষি মতিলাল স্মৃতি সংসদের সদস্য সচিব এডভোকেট শুভাশীষ শর্মা, জাগো হিন্দু পরিষদের চট্টগ্রামের সভাপতি রুবেল কান্তি দে, বিশ্ব সনাতন ঐক্যের সমন্বয়ক সাংবাদিক বিপ্লব পার্থ, শারদাঞ্জলি ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক শিপন রায় চৌধুরী, যুব সংগঠক পিয়াল শর্মা, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা অশীষ দাশ, ইসকনের পক্ষ থেকে ডা. দিব্যনিমাই দাস ব্রহ্মচারী, ভ্রাম্যমাণ গীতাসংঘের সৈকত বসু, বিশ্ব সনাতন ঐক্যের সাধারণ সম্পাদকঅ্যাডভোকেট মিঠুন বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট হিরু সুশীল, অজয় দত্ত, মাইনোরিটি ওয়াচ চট্টগ্রামের জুয়েল আইচ অর্ক,ঐক্যবদ্ধ সনাতনী যুব সমাজের সুদীপ শর্মা, লিংকন তালুকদার, বিকাশ নাথ প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সম্প্রতি নোয়াখালীর চৌমুহনীসহ সারা বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ঘটে যাওয়া অমানবিক কর্মকান্ড-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হত্যার বিষয়ে পরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য তাঁদের হতবাক করেছে। মন্ত্রীর এই বক্তব্য খুনি ও দুষ্কৃতকারীদের আড়াল করবে। মন্ত্রীর এই বক্তব্য ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার লোকজনকে আরও আতঙ্কগ্রস্থ করে তুলছে। সরকারের দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়। একদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা এবং মন্দিরের সঠিত তথ্য নিয়ে সেগুলো পুনর্নিমাণের ঘোষণা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে সেখানে প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা এবং আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি টিম বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ স্থান পরিদর্শন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক মাঠ পর্যায়ের পুলিশ প্রশাসন ঘটনায় প্রকৃত অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে অপরাধীদের গ্রেফতার করছে, মূল হোতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে ঠিক তখন অন্যদিকে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি সহিংসতাকারী ও অপরাধীদের উৎসাহিত করছে। তিনি কি দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চান নাকি দেশকে অস্থিতিশীল করে কোন মৌলবাদী গৌষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন কিনা সেটি বড় প্রশ্ন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইচ্ছেকৃতভাবে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটনায় সহিংসতার শিকার ব্যক্তিও জীবন উৎসর্গকারী শহিদদের আত্মার সাথে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ তামাশা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট এদেশে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তি সরকারের রন্ধে রন্ধে বসবাস করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য পুরো বিপরীত।

# ২০/১১/২০২১ চট্টগ্রাম #