চলমান সংবাদ

সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের মদতদাতাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে  গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

-বামজোটের সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

 “কুমিল্লার ঘটনার পূর্বাপর সকল ঘটনা এবং সর্বশেষ রংপুরের ঘটনার মাধ্যমে পরিষ্কার যে, এটা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত ও দেশে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা।  সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অনুষ্ঠান পালনের নিশ্চয়তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর পরও যথাসময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেছে যা গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়। ফলে দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের দায় সরকার কোন ভাবেই এড়াতে পারে না।সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া এ ধরনের হামলা-ভাংচুর কয়েক দিন ধরে চলতে পারে না। সরকার সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটতে দিয়ে ঘটনার পর এখন অসাম্প্রদায়িক সেজে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে।অবিলম্বে সারাদেশে সনাতন ধর্মালম্বীদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের মদতদাতাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’’

সারাদেশে পূজামন্ডপে সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে কেন্দ্রঘোষিত দেব্যাপী ‘ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ এ নগরীতে আজ বামজোটের প্রতিবাদ সমাবেশেবক্তারা একথা বলেন।বামগণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক ও বাসদ জেলা নেতা মহিনউদ্দিনের সভাপতিত্বে আজ বিকাল ৪ টায় নগরীর সিনেমা প্যালেস চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক  কমরেড অশোক সাহা,গণসংহতি আন্দোলন জেলা সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমি,বাসদ(মার্কসবাদী) জেলা সদস্যসচিব শফি উদ্দিন কবির আবিদ,বাসদ জেলা নেতা রায়হানউদ্দিন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন,” কারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পূজামন্ডপে কোরান রেখেছে ও কারা সাম্প্রদায়িক আক্রমণের উস্কানি দিয়েছে – তাদের চিহ্নিত ও উন্মোচন করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িকতার কথা বললেও ক্ষমতার স্বার্থে তারা নানাভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, কখনো আঁতাত ও ব্যবহার করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণে নেতৃত্বদানকারীদের দলীয় নমিনেশন দেয়া, হেফাজতে ইসলামের সাথে সখ্যতা, এ সরকারের আমলে সংঘটিত অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার সঠিক বিচার না হওয়া ইত্যাদি এর প্রমাণ। ফলে এ গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে না পারলে অতীতের মত বর্তমান ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত-বিচার অনিশ্চিত। আমরা দাবি জানাই – সরকারী তদন্তের পাশাপশি এধরণের সাম্প্রদায়িক সহিংসতাগুলো নিরপেক্ষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে গঠিত কমিশন দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।’’

“আবার এই ঘটনার পর নানা গুজব ছড়িয়ে সংগঠিতভাবে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করা হয়েছে।  এর সাথে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তি, একশ্রেণীর ধর্মীয় বক্তা-নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল জড়িত। দেশের বুকে দীর্ঘদিন চেপে থাকা ফ্যাসিবাদী শাসনের ফলাফল হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব বাড়ছে, যুক্তিবাদী মন নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। যে কারণে গুজব ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে মানুষের ধর্ম অনুভূতিকে সহজেই কাজে লাগাতে সক্ষম হচ্ছে সরকারী-বেসরকারী নানা কায়েমী স্বার্থবাদী মহল। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় যে সব দল বা গোষ্টি এসেছে তাদের গণবিরোধী ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন এবং এর ধারাবাহিকতায় গত এক যুগ ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন এর জন্য দায়ী।শাসকগোষ্ঠীর সাম্পরদায়িক  বিভেদ সৃষ্টির  এ চক্রন্ত নির্মূল করার জন্য ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল গণতন্ত্রমণা মানুষকে আজ  ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’’

বক্তারা বামজোট  উত্থাপিত ৭ দফা দাবির ভিত্তিতে   ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সভায় নিম্নোক্ত ৭ দফা দাবি জানানো হয়ঃ
১. কুমিল্লা, হাজীগঞ্জ, চৌমুহনী, রামগঞ্জ, রামগতি, চট্টগ্রাম, বাঁশখালী, কক্সবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, খুলনা, ফেনী, নাটোর, রংপুরসহ সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের মদদদাতাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২. সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির কমিটিকে ও বাড়ীঘর, দোকানপাটের মালিকদের এবং নিহত আহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৩. মন্দির, মন্ডপে হামলার দায় সরকারের। ব্যর্থতার দায়ে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অপসারণ করতে হবে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলা-উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলা-ব্যর্থতার অপরাধে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৪. সংবিধানের ৩২ ধারা পুনস্থাপন করে ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।
৫. সংবিধান, রাষ্ট্রীয় আইন-বিধিবিধান, পাঠ্যপুস্তক থেকে সাম্প্রদায়িক বক্তব্য, লেখাসহ সকল উপাদান বাদ দিতে হবে।
৬. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৭. ধর্মীয় বক্তব্যের নামে সাম্প্রদায়িক উস্কানী দেয়া শাস্তিমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। ফেসবুক, ইউটিউবে সাম্প্রদায়িক বয়ান নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ করতে হবে।’’

# ২১/১০/২০২১, প্রেস বিজ্ঞপ্তি #