চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে মহাসমারোহে উদযাপিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব সপ্তমীতে ২২৪০টি পূজামন্ডপে দর্শনার্থীর ভিড়

করোনা সংক্রমণের হার অনেকটা কমে আসায় চট্টগ্রামে এবার মহাসমারোহে উদযাপিত হচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শারদীয় দুর্গোৎসব শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, সকল ধর্মের মানুষ এ উৎসব পালন করে। গত সোমবার (১১ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজা, দেবীর অধিবাস ও আবাহনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হয়। মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) নগরীর বিভিন্ন পূজামন্ডপে ছিল ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল। এদিকে মন্ডপে মন্ডপে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যেও উপস্থিতি না থাকলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব-পুলিশ সদস্যকে সড়কে টহল দিতে দেখা যায়। করোনা পরিস্থিতির কারণে নগরীর অধিকাংশ পূজামন্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও কিছু কিছু মন্ডপে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই ছিল না। এ বছর চট্টগ্রাম মহানগরসহ জেলায় মোট ২২৪০টি পূজামন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার আওতাধীন ১৫ উপজেলায় সর্বজনীন ১ হাজার ৫৫৩টি এবং পারিবারিক ৪১১টি মন্ডপসহ মোট ১ হাজার ৯৬৪টি এবং চট্টগ্রাম মহানগরের ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৭৬টি পূজামন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থা ও প্রশাসনের দফায় দফায় সভা অনুষ্ঠিত হয়। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপি’র পক্ষ থেকে মন্ডপের নিরাপত্তা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। দর্শনার্থী ও জনসাধারণের সুষ্ঠু ও নির্বিঘেœ চলাচল করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গতবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকটা অনাড়ম্বরভাবেই উদযাপিত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। এবার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আড়ম্বরতা ফিরে এসেছে। চট্টগ্রামের পূজামন্ডপগুলো জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজানো হলেও পূজা উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়নি কোন ধরনের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। প্রতিবছর দূর্গাপূজার সময় বিশেষ করে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে পূজা মন্ডপগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। এবার ষষ্ঠী থেকেই মন্ডপগুলোতে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে গত এক দশক ধরে বন্দরনগরীতে যেখানে রীতিমত প্রতিযোগিতা করে পূজা প্যান্ডেলের থিম সাজানো হত, এবার তেমন কোন আয়োজন করা হয়নি। বুধবার মহাঅষ্টমীতে নগরীর পাথরঘাটাস্থ শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। শ্যামানন্দ দাস (শ্যামল সাধু) মোহন্ত মহারাজের পৌরহিত্যে হিন্দু শাস্ত্রমতে সাধারণত এক থেকে ষোল বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজা করার কথা রয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে এখন পূজার ধুম। গতকাল মঙ্গলবার পূজার মহাসপ্তমীতেও রংবেরঙের পোশাক পরে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ঘুরে বেড়ান মন্ডপে মন্ডপে। নগরীর হাজারীলেন, টেরিবাজার, জামালখান, নালাপড়া ও আগ্রাবাদেও মন্ডপগুলো ঘুরে দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মাস্ক পরে মন্ডপ প্রবেশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগে সকাল থেকেই শুরু হয় সপ্তমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা। নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার বাসিন্দা স্মরনিকা ঘোষ টিনা বলেন, গতবছর করোনা সংক্রমন বেশি থাকায় অনাড়ম্বরভাবে পূজা করতে হয়েছে। এবার সংক্রমণ কিছুটা কম। তাই মন্ডপে মন্ডপে জাঁকজমকভাবে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপূজা। দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা, করোনা নামক মহামারীর কবল থেকে মানুষকে রক্ষা করার। হিংসা-বিদ্বেষ, ভেদাভেদ ভুলে মানুষে মানুষে মৈত্রীর বন্ধন তৈরি করে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার। সকল সম্প্রদায়িকতা নির্মুল হোক- এটাই প্রার্থনা। বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, এবার চট্টগ্রাম নগরের ২৭৬টি পূজামন্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা সেগুলো মেনেই পূজার আয়োজন করেছি। বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে আমরা কঠোর থাকব। শান্তিপূর্ণভাবে, সাত্ত্বিকতা বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্ডপগুলোতে পূজার আয়োজন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পূজায় ডিজে পরিহার করা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান-বাজনা, মেলা, নাটক, সমাবেশ, আরতি প্রতিযোগিতা ও শোভাযাত্রা পরিহার করা, পূজামন্ডপে আগত সবার মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা, মন্ডপে প্রবেশমুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান-পানি রাখা, মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা প্রবেশ ও প্রস্থানের ব্যবস্থা রাখা, আতশবাজি বা পটকা ফুটানো পরিহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ-চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে গত বছরের মতো এবারও উৎসব পরিহার করে মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতায় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা আয়োজনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির সঙ্গে পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূজামন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।

# ১২.১০.২০২১ চট্টগ্রাম #