চলমান সংবাদ

সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডে কাঠামোগত হত্যাকান্ডের জন্য দায়িদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি স্কপের

স্কপের সংবাদ সম্মেলন

নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপে অবস্থিত সজীব গ্রুপের সেজান জুস কারখানায় গত ৮ জুলাই অগ্নিকান্ডে কমপক্ষে ৫২ জন শ্রমিকের মৃত্যু, অর্ধশতাধিক শ্রমিক মারাত্মক জখম এবং শতাধিক শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও দায়িদের চিহ্নিত করতে স্কপ ৮ সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে। স্কপের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির ১৭ দফা পর্যবেক্ষণ ও ১২ দফা সুপারিশ প্রকাশ এবং ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সুপারিশের আলোকে স্কপের ৫ দফা দাবি ও দাবির পক্ষে কর্মসূচী ঘোষণা করতে আজ ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার, সকাল ১১ টায়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে (নসরুল হামিদ মিরনায়তন) সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিক নেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন যুগ্ম সমন্বয়ক কামরুল আহসান, স্কপের পক্ষে লিখিত বক্তব্য ও ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্ট পাঠ করেন অপর যুগ্ম সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে সম্মানিত সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন শ্রমিক নেতা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, রাজেকুজ্জামান রতন, সাইফুজ্জামান বাদশা, চৌধুরী আশিকুল আলম, নঈমুল আহসান জুয়েল, আহসান হাবিব বুলবুল, আজিজুন নাহার, শামীম আরা, ফিরোজ হোসাইন, আব্দুল ওয়াহেদ, সরদার খোরশেদ, ইমাম হোসেন খোকন, খালেকুজ্জামান লিপন, রফিকুল ইসলাম, কনক বর্মন, মোহাম্মদ রফিক, কাজী রুহুল আমিন, মন্জুরুল ইসলাম মন্জু, সেলিম মাহমুদ, সাইফুল ইসলাম শরিফ, খোরশেদ আলম, নিহত শ্রমিক রহিমা বেগমের স্বামী মোহঃ সেলিম ও মেয়ে লিপা আক্তার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, পর্যবেক্ষণে সেজান জুস কারখানায় নানা গুরুতর অসঙ্গতি দৃশ্যমান হয়েছে যার দায় মালিকপক্ষ, অগ্নি নির্বাপণ কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার প্রশাসন, শ্রম দপ্তর, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর কোনভাবেই এড়াতে পারে না। বিশেষ করে ভবন নির্মাণে ত্রুটি, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বিধি অনুযায়ী পর্যাপ্ত না থাকা, প্রতিটি ফ্লোর তালাবদ্ধ করে রাখা, শিশু শ্রমিক নিয়োগ, মালিক পক্ষের শ্রম আইন ও বিধি মেনে না চলা, পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী পরিদর্শন কাজে অবহেলা, স্বল্প মজুরীতে কাজ করানো, ট্রেড ইউনিয়ন না থাকা এই কারখানার অগ্নিকান্ডকে অনিবার্য করে তুলেছে। ফলে এই দায়িত্ব অবহেলা, শ্রম আইন তোয়াক্কা না করা, অগ্নিকান্ড ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে এবং কারখানায় কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদান নিশ্চিত না হলে দুর্ঘটনার নামে শ্রমিকের মৃত্যু ঘটতেই থাকবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডের প্রেক্ষিতে নি¤েœ উল্লেখিত ৫ দফা দাবি এবং দাবি আদায়ে প্রাথমিক কর্মসূচী ঘোষণা করেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত স্কপ নিরবিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নিম্নোক্ত ৫ দফা  দাবি উত্থাপন করা হয়ঃ
১। সুষ্ঠ তদন্ত ও সঠিক কারণ উদঘাটনের স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
২। সেজান জুস কারখানায় শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী মালিকপক্ষ এবং কর্তব্য অবহেলার জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তি দিতে হবে।
৩। মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকদের আই এল ও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে হাই কোর্টের নির্দেশনা এবং রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় ক্ষতিপূরণের হারকে বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
৪। ক্ষতিপূরণের একই হারে আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকা অবস্থায় কর্মহীন শ্রমিকদের মজুরী প্রদান করতে হবে।
এছাড়া ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে স্কপ নিম্নোক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করেঃ
১) সেজান জুস কারখানা হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ৫ দফা দাবী এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার দাবীতে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর সারাদেশে জেলায় জেলায় শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হবে।
২) আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর দায়ীদের শাস্তির দাবীতে ঢাকায় শ্রম মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং জেলায় জেলায় জেলা প্রশাাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
৩) আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর রুপগঞ্জের কর্ণগোপে ৫ দফা দাবিতে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, প্রেস বিজ্ঞপ্তি