করোনা আক্রান্ত পোশাক শ্রমিককে কর্মচ্যুত করায় মামলা দায়ের
করোনা আক্রান্ত একজন পোশাক শ্রমিককে কাজে যোগদানে বাধা প্রদান করায় আজ চট্টগ্রামের প্রথম শ্রম আদালতে ভুক্তভোগী শ্রমিকের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।মামলা নং – আই আর ০৯/২০২১। মামলার বিবরনে বলা হয়-
মোহাম্মদ ইদ্রিছ, পিতা-মৃত আতাহার বিশ্বাস সুইং সুপারভাইজার পদে ২/১১ /২০২০ তারিখ হতে সাগরিকা রোড, বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত এইচ বি নিটেক্স লিঃ এ চাকরিরত ছিল। তার মাসিক বেতন ছিল সর্বসাকুল্যে ২০ হাজার টাকা। প্রায়শ ৮ ঘন্টার অতিরিক্ত কাজ হলেও কোন ওভারটাইম ভাতা পান না।
বিগত ২৫ এপ্রিল ২০২১ তারিখে করোনা আক্রান্ত হয়ে ২৮ এপ্রিল ২০২১ চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসা শেষে তিনি ৭ মে ২০২১ তারিখে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি ২১ দিন আইসোলেশনে ছিলেন। অতঃপর তিনি ৩০ মে ২০২১ তারিখে কাজে যোগদান করতে গেলে কর্তৃপক্ষ তাকে পুনরায় কোভিড পরীক্ষার সার্টিফিকেট জমা দিতে মোখিক নির্দেশ দেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে মোহাম্মদ ইদ্রিছ কোভিড পরীক্ষার জন্য ৫ জুন নমুনা জমা দিয়ে ৮ জুন ২০২১ তারিখে করোনার নেগেটিভ মর্মে ফলাফল প্রাপ্ত হন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, হতভাগ্য শ্রমিক ইদ্রিছ উক্ত কোভিড সার্টিফিকেট সহ কাজে যোগদান করতে গেলে তাকে কাজে যোগ দিতে কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অপারগতা প্রকাশ করেন। এভাবে তিনি কয়েকবার গিয়ে অনুনয় বিনয় করা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তাঁকে কাজে যোগদানের সুযোগ দেয়নি। শেষে অনন্যোপায় হয়ে ভুক্তভোগী শ্রমিক বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সংগঠক ও বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ফজলুল কবির মিন্টুর সহযোগিতায় কর্তৃপক্ষ বরাবর গ্রিভ্যান্স দরখাস্ত এবং চট্টগ্রাম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রেরন করেন । দুর্ভাগ্যজনকভাবে কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সাড়া পান নি। অতঃপর দীর্ঘ দুইমাস অপেক্ষার পর বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ২০১৩ মোতাবেক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস এর সার্বিক সহযোগিতায় চট্টগ্রাম শ্রম আদালতের প্রবীন
ও সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট জানে আলমের মাধ্যমে অদ্য ১৯ আগস্ট ২০২১ চট্টগ্রাম বিভাগের ১ম শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেন।
বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ফজলুল কবির মিন্টু বলেন, করোনা দুঃসময়ে শ্রমিকেরা খুব আর্থিক কষ্টে আছে। এই রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মালিক পক্ষের সহানুভূতিশীল আচরণ প্রত্যাশিত। কিন্তু করোনা আক্রান্ত শ্রমিক ইদ্রিছের প্রতি এইচ বি নিটেক্স কর্তৃপক্ষের আচরন বেআইনি, অনৈতিক ও অমানবিক। তিনি বলেন, আমরা ২ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কিন্তু মালিক পক্ষ এবং সরকারী তদারকী প্রতিষ্ঠানের যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ায় আমরা মামলা করতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, আমরা আশা করবো শ্রম আইন অনুযায়ি ৬০ দিনের মধ্যে যেন মামলার নিষ্পত্তি হয় এবং শ্রমিক যেন ন্যায় বিচার পায়।
# ১৯ আগস্ট ২০২১, চট্টগ্রাম শ্রম আদালত #