মতামত

নারী নির্যাতন : আমাদের সংস্কৃতি ও নারী-মুক্তি

– মোঃ জানে আলম|

১ম পর্ব

আমরা সকলে জানি, বর্তমান যুগকে বলা হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিপ্লবের যুগ”The era of science & technological revolution(STR)” । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এহেন উৎকর্ষতার যুগে বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা-মূল্যবোধও হওয়ার কথা ছিল অত্যাধুনিক, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক। কারণ দার্শনিক প্রত্যয় হল‘-বস্তু চেতনার জন্ম দেয় এবং চেতনা বস্তুকে পাল্টায়’। ‘সামাজিক সত্ত্বা সামাজিক চেতনাকে নির্ধারণ করে।’ অর্থাৎ যে জনগোষ্ঠী যে সামাজিক পরিবেশে বসবাস করে, সে সমাজের সামাজিক-প্রাকৃতিক পরিবেশ বা আবহের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে সে জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা। ফলত: কোন সমাজের বস্তুগত উন্নয়ন সে সমাজের মানুষের চিন্তা-চেতনা-মূল্যবোধের গুণগত পরিবর্তন ঘটায়। তাই দেখা যায় যে, বিশ্বে যে রাষ্ট্র বা সমাজ বস্তুগত ভাবে যত বিকশিত বা উন্নত, সে সমাজের মানুষের চিন্তা-চেতনা-মূল্যবোধ তত উন্নত। পক্ষান্তরে একটি পশ্চাৎপদ সমাজের মানুষের চিন্তা-চেতনা-মূল্যবোধও সেকেলে বা পশ্চাৎপদ। বিষয়টিকে আরো সহজ ভাবে বুঝানোর জন্য আমরা আমাদের গ্রাম ও শহরের উদাহরণ টানতে পারি।
আমারা সবাই স্বীকার করব যে, আমাদের শহর আমাদের গ্রামের চেয়ে বস্তুগতভাবে অগ্রসর বা উন্নত। ফলত: শহরের মানুষও গ্রামের মানুষদের চেয়ে অধিকতর স্মার্ট বা সচেতন কিংবা চালাক। একই ভাবে সামগ্রিক বিশ্বের কথা বিবেচনা করলে দেখা যায়, তৃত্বীয় বিশ্বের পশ্চাৎপদ মানুষগুলোর মূল্যবোধ উন্নত বিশ্বের মানুষদের চিন্তা-চেতনা-মূল্যবোধ এর চেয়ে পশ্চাৎপদ। কারণ বিজ্ঞান-প্রযুক্তির একচেটিয়া মালিকানার কারণে আজ ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশগুলো পরিণত হয়েছে বিশ্ব শহর, আর অনুন্নত বা তথাকথিত উন্নয়নশীল দেশগুলো পরিণত হয়েছে বিশ্ব শহরের উপর নির্ভরশীল বিশ্ব গ্রামে, তথা Metropolitan-satellite state এ। তারপরও বর্তমানে বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর জন্য আপাত-স্ববিরোধী বিষয় (Paradox) হল, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে বিশ্ব উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছলেও বিশ্ব-মানবগোষ্ঠী চিন্তা-চেতনা-মূল্যবোধে যুগপৎ বিকশিত হয়নি। তাই নারী নির্যাতন বা নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ আজ উন্নত বিশ্বেও বিদ্যমান যদিও মাত্রাগত ভিন্নতা আছে। অথচ নারীর প্রতি সমাজের যে দৃষ্টিভঙ্গী, নারীকে পুরুষের চেয়ে আতরাফ ভাবা, পরিণামে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও নিগ্রহ-নির্যাতন পশ্চাৎপদ চেতনা বা মূল্যবোধের বহি:প্রকাশ।

কিন্তু বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে উন্নত আধুনিক বিশ্বেও কেন সে চেতনা বা মূল্যবোধ এখনো বিরাজমান থাকবে? তাহলে কি চেতনার বস্তুগত ভিত্তির প্রপঞ্চটি ভুল? না-তা নয়। তার প্রকৃত কারণ উপলব্ধি করতে হলে ‘বস্তু চেতনার জন্ম দেয় এবং চেতনা বস্তুকে পাল্টায়’, দার্শনিক এ প্রত্যয়টিকে যান্ত্রিক ভাবে দেখলে হবে না। বস্তু থেকে চেতনার জন্ম হলেও আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, চেতনারও আছে আপেক্ষিক স্বাধীনতা। যে কারণে একটি পশ্চাৎপদ সমাজেও কখনো কখনো চিন্তা-চেতনায় প্রাগ্রসর মানুষের আবির্ভাব ঘটে। তেমনি সমাজের বস্তুগত বিকাশের সাথে সব সময়ে স্বত:স্ফূর্ত ভাবে চেতনার বিকাশ ঘটে না-তার ক্ষেত্র তৈরী হয় মাত্র। এমনকি বিজ্ঞানের অগ্রগতির মাধ্যমে সামাজিক সত্ত্বার পরিবর্তন অনিবার্য হলেও সামাজিক চেতনার বিকাশকে নানা ফন্দি-ফিকিরে দমিয়ে রাখা সম্ভব; অন্তত: কিছু কাল পর্যন্ত।

এখানে আমাদের আরো একটি দার্শনিক প্রত্যয় স্মরণ রাখতে হবে যে, একটি সমাজের শাসক শ্রেণীর মূল্যবোধ ও চেতনা সমাজের প্রধান মূল্যবোধ ও চেতনা হিসাবে বিরাজমান থাকে। (The ruling ideas of a society are the ideas of the ruling class)। তাই দেখা যায়, কি ধর্মবেত্তা, কি ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ, কি অর্থলোভী বিশ্ব-বেনিয়ার দল, তথা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি-তারা নিজেরা বৈজ্ঞানিক বিকাশের সর্বশেষ সুফল, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও-সর্বাধুনিক চিন্তা-চেতনা-মূল্যবোধকে তারা ধারণ করে না এবং সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে তদানুসারে মানুষের চিন্তা-চেতনা-মূল্যবোধকে বিকশিত হতে দেয় না-তাদের কায়েমী স্বার্থে। তারা মানুষের চিন্তা-চেতনার বিকাশকে ততটুকুই মেনে নেয়, যতটুকু মেনে নিলে তাদের কায়েমী স্বার্থে আঘাত লাগবে না। এ ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা বিপদাশঙ্কায় (Vulnarable) আছে ধর্ম ও ধর্মবেত্তারা। কারণ প্রতিটি নতুন বৈজ্ঞানিক আবিস্কার শত সহস্র বৎসর ধরে লালিত মানুষের ধর্ম বিশ্বাসে সুতীব্র আঘাত হানে। তখন ধর্মবেত্তারা মরিয়া হয়ে নানা অপযুক্তি-কুযুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে লেগে যায় যে, বিজ্ঞানের এ নতুন আবিস্কার পূর্ব থেকেই তাদের ধর্মগ্রন্থে ছিল। নরাধম(!) বিজ্ঞানীর তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে চুরি করে তা তার নামে প্রচার করছে। (কিন্তু তারা কেন এতদিন তাদের ধর্মগ্রন্থের এ যুগান্তকারী আবিস্কার বা তার ফর্মূলা মানুষকে জানাল না, সে প্রশ্ন তাদের করবে কে?) এর বাহিরে, নয়াঔপনিবেশিক বা সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সুফল ষোলকলা উপভোগ করলেও রাষ্ট্রীয় ভাবে আধুনিক চিন্তা-চেতনাকে একটি সীমারেখার বাইরে বাড়তে দেয় না। তাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সদম্ভে ঘোষণা করেন, ঈশ্বরের নির্দেশে তিনি ইরাক আক্রমণ করেছেন। বুশ-ক্লিনটন গং বিশ্বের সর্বাপেক্ষা আধুনিক প্রযুক্তির অধিকারী দেশের রাষ্ট্র প্রধান হয়েও জেনেটিক সায়েন্স এর অভাবিত আবিস্কারগুলোকে ধর্মীয় নৈতিকতার দোহাই দিয়ে নিষিদ্ধ করে রেখেছেন। ফলত: এসব উন্নত দেশও সর্বাংশে এখনো পশ্চাৎপদ সকল মূল্যবোধ পরিহার করতে পারে নি। সে কারণে বিশ্বের সর্বাধুনিক ও সর্বোন্নত দেশেও নারী নির্যাতন চলে। তবে সে সব উন্নত বিশ্বে নারী নির্যাতনের ধরণ ও মাত্রা পশ্চাৎপদ দেশের নারী নির্যাতনের চেয়ে ভিন্ন। আমাদের দেশের মত পশ্চাৎপদ দেশগুলোতে নারী নির্যাতন এখনো মধ্যযুগীয় বর্বরতার পর্যায়ে রয়ে গেছে।

নারী নির্যাতন : আমাদের সংস্কৃতি ও দেশীয় প্রেক্ষিত

আমাদের দেশে নারী নির্যাতন ও তার প্রতিকার নিয়ে প্রকাশিত নানা প্রবন্ধ-নিবন্ধ-টক্-শো, সভা সেমিনারের পাশাপাশি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াতে যে সব আলোচনা হচ্ছে, সেখানে অধিকাংশ আলোচনাতে বিষয়টাকে কেবল আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হিসাবে দেখানো হচ্ছে। নির্যাতনের ধরণ, সংখ্যা, তা অবদমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা ইত্যাকার বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টিকে মনস্তাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, অর্থাৎ সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে দেখার প্রবণতা তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। এ যেন অনেকটা রোগের উপসর্গ দূর করে রোগ সারানো হাতুড়ে ডাক্তারী প্রয়াস।

নারী নির্যাতন আমাদের সংস্কৃতি বিশেষভাবে লোকজ সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অনুসঙ্গ হয়ে আছে। এটা আমাদের ঐতিহ্য। বলাবাহুল্য, আমাদের সকল ঐতিহ্য কিন্তু গৌরবের নয়; বরং অনেক পশ্চাৎপদ এবং লজ্জাজনক ঐতিহ্য জাতিগতভাবে আমরা এখনো আকঁড়ে ধরে আছি। যেমন অসুখে-বিসুখে তাবিজ-মাদুলী-পানিপড়া গ্রামের সিংহভাগ মানুষের কাছে এখনো একটি বিশ্বাসযোগ্য চিকিৎসা । বালা-মুসিবত থেকে পরিত্রাণের আশায় গলায় মাদুলি, কোমরে, বাহুতে কিংবা কব্জিতে তাবিজ এবং অঙ্গুলীতে রঙ-বেরং এর পাথরের অঙ্গুরী এখনো অনেক শিক্ষিত এবং শহুরে মানুষের মধ্যেও দেখা যায়। গ্রামে-গঞ্জে এমনকি শহুরে অনেক মানুষেরাও এখনো ইহকাল-পরকালের মুক্তির আশায় অশিক্ষিত গ্রাম্য হুজুর-তান্ত্রিক-সাধু-সন্ত-সাঁইবাবা, এমন কি উম্মাদ-ন্যাংটা ফকিরের আস্তানায় হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এটাও আমাদের লোকজ সংস্কৃতির ঐতিহ্য। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রাপ্ত কত শহুরে তরুণীদের দেখেছি বর পাওয়া কিংবা বিবাহোত্তর সন্তান লাভের আশায় গ্রাম্য ফকির বাবার দরগায় গিয়ে শিরনি দিতে, দরগাহের খাদেম নামক মস্তানদের পা ছুঁয়ে দোয়া চাইতে। বন্ধ্যাত্ব্য ঘুচানোর জন্য হুজুর সাঈদাবাদীর সিদ্ধ ডিম বিতরণের গল্প এবং তৎজন্য কলকাতায় কারাভোগের সংবাদ তো আমরা জানি। মজার ব্যাপার হল, আমাদের কতিপয় জাতীয় নেতারাদেরও একবার তার “হিমেল পাউডার” এর মডেল সাজিয়ে কোন কোন জাতীয় পত্রিকার বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। আমাদের এখনো স্মরণ আছে একদা আমাদের এক রাষ্ট্রপ্রধান-তার বিরুদ্ধে যখন গণতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার হল-রাষ্ট্রীয় প্রটোকল নিয়ে প্রকাশ্যে আটরশ্মির পীরের কাছে ধর্ণা দিতে শুরু করল এবং সে পীর তাকে কী কী নসিহত করত তা সে সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে জানাত! আমাদের বহু জাতীয় নেতা ব্যক্তিভাবে এজাতীয় কোন না কোন অশিক্ষিত গ্রাম্য পীরের মুরিদ হয়ে আছে। অস্বস্তিকর হলেও স্বীকার করতে হয়, এসব নিয়েই আমাদের সংস্কৃতি। আমাদের পরিবারগুলোতে ছেলে-মেয়ের সাথে বাবা-মার আচরণ, স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্কের ধরণ, ছেলে ও মেয়ে সন্তানের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী, বিশেষ ভাবে পরিবারের নারী সদস্যাদের আচরণ, তার পোষাক-পরিচ্ছদ, চলাফেরা, কথা-বার্তা ইত্যাকার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে ধর্মের নামে যে সব বিধি-বিধান-তা যুক্তিযুক্ত হউক বা না হউক-সে সব আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে বহন করে আসছি। বলা বাহুল্য, ঘুষ-দুর্নীতি-ভূমি দখল-লুটপাট এর মত বিষয়গুলোও আমাদের সংস্কৃতিতে অঙ্গীভূত হয়ে গেছে কালক্রমে। পক্ষান্তরে আধুনিক কিংবা উত্তর আধুনিক কালে বিশ্বব্যাপী যে সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ মানবাধিকার, মানবতাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমান অধিকার, ইত্যকার চেতনা ও মূল্যবোধগুলো এখনো আমাদের শাসক শ্রেণীর মূল্যবোধ ও চেতনায় প্রভাব ফেলতে পারে নি। ফলত: এসব বিষয় সমাজের বিশাল জনগোষ্ঠীর চেতনাকে স্পর্শ করা এখনো সুদূরপরাহত। ন্যূনতম যুক্তিবোধ থাকলে আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, ঐতিহ্যগতভাবেই নারীর প্রতি আমাদের পরিবার ও সমাজের বিদ্যমান যে দৃষ্টিভঙ্গী, তা মোটেও রমণীয় নয়, বরং দমনীয়-নিবর্তনমূলক। নারী নির্যাতনে মূল হেতু কিন্তু এখানেই। তাই আমাদের আর্থ-সামাজিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামোকে অক্ষুন্ন রেখে বিচ্ছিন্ন ভাবে কেবল নারী-মুক্তির চিন্তা অবৈজ্ঞানিক। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, জাতীয়-মুক্তির প্রশ্নের সাথে সার্বিক অর্থে নারী মুক্তির প্রশ্নটি অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িয়ে আছে।
আমাদের সমাজে বিদ্যমান উপরোক্ত সাংস্কৃতিক অনুসঙ্গগুলো আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার কোন রোগ নয়; বস্তুত: দারিদ্র্যের যে মহামারিতে আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা আক্রান্ত, তার বহুমাত্রিক উপসর্গ মাত্র। এসব অসহনীয় উপসর্গ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের নির্ণয় করতে হবে প্রকৃত রোগ এবং তার কারণ। এর কোন বিকল্প নেই। তবে এক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক কাঠামো পরিবর্তনের সাথে রাজনৈতিক বিপ্লবের প্রশ্নটিও জড়িত, যার আশু কোন সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না, ফলত: তা একটি সুদূরপরাহত ব্যাপার।

ততদিন কি আমাদের সমাজে নারী নির্যাতন নির্বিঘ্নে চলবে? তা প্রতিরোধের কোন লড়াই কি চালানো নিরর্থক? না, মোটেই নয়। আমাদের ভুললে চলবেনা যে, আমাদের সমাজ পশ্চাৎপদ হলেও তা আজ বিশ্ব সমাজেরই অংশ। আজ বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিকাশের বিশ্ব প্রেক্ষিতে আমাদের সমাজেও যুক্তিবাদ বিকাশের ক্ষেত্র অত্যন্ত উর্বর হয়ে আছে। প্রয়োজন আধুনিক শিক্ষা, বিশেষভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা এবং যুক্তিবাদের চর্চা।
স্বাধীনতার সুদীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক পরও নির্মম সত্য হল, আমাদের দেশ এখনো একটি পশ্চাৎপদ দেশ। আমাদের এ পশ্চাৎপদতা সামগ্রিক। অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে আমরা পশ্চাৎপদ। কি শিল্পে, কি কৃষিতে, কাঙ্ক্ষিত বিকাশের মাধ্যমে আমরা আমাদের দারিদ্র ঘুঁচাতে পারি নি। নির্মম ফলশ্রুতিতে নানা রূপ পশ্চাৎপদ ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনা-মূল্যবোধ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তাছাড়া ঐতিহ্যগত ভাবেও অনেক কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস আমাদের সমাজে বিদ্যমান। অর্থাৎ আমারা বিত্তে পশ্চাৎপদ বলে চিত্তেও পশ্চাৎপদ। আবার আমাদের চিত্তের এ পশ্চাৎপদতা আমাদের বিত্তের পশ্চাৎপদতা অতিক্রম করার পথে এক দুর্লঙ্ঘ্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পশ্চাৎপদতার এ দুষ্টচক্র (A vicious circle of lagging-behind) ভাঙ্গতে না পারলে আমাদের মুক্তি অসম্ভব ।

চলবে…

পরবর্তী পর্ব ১৯ আগস্ট ২০২১, বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হবে।

লেখকঃ রাজনীতিবিদ ও শ্রমিকনেতা