চলমান সংবাদ

আজ ম্যাক্সিম গোর্কির মৃত্যুবার্ষিকী

আসল নাম আলেক্সেই ম্যাক্সিমোভিচ পেশকভ। ছদ্মনাম মাক্সিম গোর্কি। তিনি ছিলেন একজন রুশ, সোভিয়েত লেখক, সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদী সাহিত্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী। তিনি নিজেই তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম হিসেবে ‘গোর্কি’ নামকে বেছে নেন। রুশ শব্দ ‘গোর্কি’ অর্থ ‘তেতো’। এই রুশ লেখকের জন্ম ১৮৬৮ সালের ২৮ মার্চ। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে শুরু হয় কঠিন জীবন।প্রথমে একটি শৌখিন জুতার দোকানে কাজ শুরু করেন। এই কাজে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো সারাদিন। এরপর কিশোর বয়সে আলেক্সেই পেশকভ কাজ নেন কয়েদি বহনের জাহাজে। তার কাজ ছিল জাহাজের কর্মচারীদের বাসন-কোসন ধোয়া।সেখানেও ভোর ছয়টা থেকে মাঝরাত অব্দি ঘাম ঝরানো কাজ। পেটের দায়ে ভালো কাজের আশায় পেশা বদলাতে থাকেন পেশকভ, কিন্তু কোথাও শান্তি পাননি। অবশেষে শান্তি খুঁজে পান বইয়ের পাতায়। তিনি ছিলেন বইয়ের পোকা। অভাব-অনটন, হাড়ভাঙা পরিশ্রম- এত কিছুর মধ্যেও থামেনি তার বই পড়া। রুশ কবি পুশকিনের একটি কবিতার বই তাকে বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। আস্তে আস্তে পেশকভ হয়ে ওঠেন লেনিন আদর্শের কর্মী, লেখনীর মাধ্যমে মানবিক সমস্যার চিত্র তুলে ধরার সুদক্ষ শিল্পী। গোর্কি ছদ্মনামে তার লেখাগুলো তাঁকে নতুন এক পরিচিতি এনে দেয়। তাঁর লেখার মূলকেন্দ্রে থাকে সমাজের নিচুতলার মানুষেরা। ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয় তার সার্থক উপন্যাস ফোমা গর্দিয়েভ। ১৯০১ সালে বিপ্লবী ছাত্রদের হত্যার প্রতিবাদে গোর্কি রচনা করলেন ‘ঝোড়ো পাখির গান’ নামের কবিতা। ওই কবিতা হয়ে ওঠে বিপ্লবের অগ্নিমন্ত্র। তাকে গ্রেফতার করা হলেও প্রতিবাদের মুখে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় সরকার। লেখনীর কারণে জীবনে বহুবার তৎকালীন রাশিয়ার জার শাসকের রোষানলে পড়েছিলেন গোর্কি। বারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। আবারও গ্রেফতার হতে পারেন এমন খবর পেয়ে দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।অবশেষে তিনি জার্মানি ও ফ্রান্স হয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯০৭ সালে সেখানে বসেই তিনি রচনা করেন তার বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস মা। এ উপন্যাস গোর্কিকে বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে অমর করে তোলে। বাঙালি পাঠকের কাচে গোর্কির ব্যাপক পরিচিতি এই মা উপন্যাসের সূত্র ধরে। কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় লেবার স্বরাজ পার্টির সাপ্তাহিক মুখপত্র হিসেবে যখন লাঙল বেরোয়, তখন তার প্রথম সংখ্যা (২৫ ডিসেম্বর ১৯২৫) থেকেই নজরুলবান্ধব নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের ভাষান্তরে মা ধারাবাহিকভাবে ছাপা হতে থাকে। শুধু মা কেন, গোর্কির অধিকাংশ প্রধান রচনা তত দিনে তাঁর স্বদেশে বেরিয়ে গেছে। বিগত শতকের চল্লিশের দশকে বংলায় যখন বামপন্থার রাজনীতি ও আন্দোলনের স্বর্ণযুগ, সে সময় রুশ ও স্ক্যান্ডিনেভীয় সাহিত্য প্রচুর অনূদিত হয়েছিল এবং সেসবের ভেতরে গোর্কির রচনা সন্দেহাতীতভাবে ছিল। কালজয়ী উপন্যাস মা ১৯০৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। রুশ ভাষায় লিখিত এই উপন্যাসটি পরবর্তী এক শত বছরে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। উপন্যাসটি বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলনের পটভূমিকায় রচিত এবং উপন্যাসের প্রধান দুটি চরিত্র হল প্যাভেল ও তার মা। মা উপন্যাসের উপর আজ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি চলচিত্র নির্মিত হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রতি অগাধ আস্হা থাকলেও সোভিয়েত শাসনব্যবস্হার সবকিছু তিনি অবাধে মেনে নিতে পারেননি। পত্রিকায় কলাম লিখে বলশেভিকদের নানান বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। তাঁর সেই সব আক্রমণাত্মক নিবন্ধ পড়ে জোসেফ স্তালিনের মন্তব্য ছিল, যদি গোর্কি বিপ্লবের পথ পরিহার করেন, তবে তিনি নিক্ষিপ্ত হবেন বিস্মৃতির গর্ভে। তবে লেনিনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বরাবরই অটুট ছিল তাঁর। লেনিনের কাছে একাধিক ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গোর্কি একের পর এক চিঠিও লিখেছিলেন তখন। কখনো কোনো তরুণী কবি, রসায়ন বিজ্ঞানী বা লেখক বন্ধুর গ্রেপ্তারের খবর জানতে পেরে তাঁদের দ্রুত মুক্তির অনুরোধ জানিয়ে পত্র পাঠিয়েছেন। কখনো বা বই প্রকাশনায় আমলাতান্ত্রিক বাধানিষেধের প্রাবল্য দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তা দূর করতে আহ্বান জানিয়েছেন লেনিনকে। লেনিন যে তাঁর পত্রাঘাতকে উপেক্ষা করতেন, তা নয়। যতখানি সম্ভব ব্যবস্থা নিতেন। তবে লেনিনের মৃত্যুর পর, স্তালিন যখন সোভিয়েত রাশিয়ার সর্বেসর্বা, সে সময় গোর্কি আর এমন ভূমিকায় সরব ও সক্রিয় থাকতে পারেননি। ১৯৩৬ সালের ১৮ জুন এই মহাপ্রাণের জীবনাবসান ঘটে। গোর্কি আজও তার লেখনীর মাধ্যমে চির-অম্লান হয়ে আছেন বিশ্বব্যাপী মানুষের হৃদয়ে।

সূত্র: ১)উইকিপিডিয়া। ২)অন্য আলো/গোর্কিকে ফিরে দেখা/ হায়াত মাহমুদ 

#১৮ জুন ২০২১, প্রগতির যাত্রী ডেস্ক#