চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম কলেজে সংঘর্ষের ঘটনায় অবশেষে যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসী টিনুকে প্রধান আসামি করে মামলা

চট্টগ্রামে আলোচিত সন্ত্রাসী টিনু

চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় অবশেষে যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসী নূর মোস্তফা টিনুকে প্রধান আসামি করে মামলা নিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) সকালে চকবাজার থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলার বাদি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ও ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল সায়মুন। মামলার বাকি আসামিদের মধ্যে আছে আমির উদ্দিন, জিয়া উদ্দিন আরমান, সৌরভ উদ্দিন বাপ্পা, সিরাজুল ইসলাম তোরাব, মো. মহিউদ্দিন সৌরভ, মনির উদ্দিন রেহান, আবুল কালাম, আনসার উদ্দিন, মন্টি চৌধুরী, ইমন হোসেন এবং মো. আব্দুল্লাহ। এদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম তোরাব ও মহিউদ্দীন সৌরভকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। চকবাজার থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, হামলার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে নুর মোস্তফা টিনুসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গত বুধবার (১৬ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম কলেজে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় ৭ জন আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক হয় একজন। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা থানার বারান্দায় ঘুরেও এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা সম্ভব হয়নি। বাদির পক্ষ থেকে টিনুকে আসামী করে মামলা দায়ের করতে চাওয়ায় পুলিশ এ মামলা নিতে রাজি হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমের অনুসারীদের চাপের মুখে বৃহস্পতিবার মামলা নিতে বাধ্য হয় চকবাজার থানা পুলিশ। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ বহিরাগতদের নিয়ে সভাপতি মাহমুদুল করিমের সমর্থকদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে মাহমুদুল করিমের অনুসারী আব্দুল্লাহ আল সায়মন, কাজী মো. আব্দুল মালেক রুমি ও মো. ইমনসহ সাতজন আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত সায়মন ও রুমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজনকে আটক করে পুলিশ। এরা হলেন বহিরাগত সৌরভ সাহা ও চট্টগ্রাম কলেজের ¯œাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র সিরাজুল ইসলাম তোরাব। আটককৃত দুইজনই নূর মোস্তফা টিনুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। প্রসঙ্গত নূর মোস্তফা টিনুর বিরুদ্ধে নগরীর চকবাজার ও পাঁচলাইশ থানা এলাকায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালে নগর পুলিশের তৈরি করা তালিকায় কিশোর গ্যাং গডফাদার হিসেবে টিনুর নাম রয়েছে প্রথম সারিতে। গত জানুয়ারিতে অস্থায়ী জামিনে আসার পর গ্রুপটি ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করছে স্থানীয়রা। জানা গেছে, ২০০৩ সালে অত্যাধুনিক একে-২২ অস্ত্রসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়ে প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসেন টিনু। সেই মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগও করেছিলেন তিনি। নগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা পরিচয় দানকারী টিনুর বিরুদ্ধে গত প্রায় দেড় যুগে চান্দগাঁও থানায় একটি বিস্ফোরক মামলা ছাড়া কেউ লিখিত অভিযোগ করারও সাহস পায়নি। টিনুর বড় ভাই মোহাম্মদ সেলিম জামায়াতের রুকন পর্যায়ের একজন নেতা আর ছোট ভাই নুরুল আলম শিপু থানা ছাত্রদলের সভাপতি। ফলে বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ যারাই ক্ষমতাই আসুক, তিনি সবসময় নিরাপদ থাকতেন। নগরীর চকবাজার ও পাঁচলাইশ এলাকার তিনি আলোচিত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী আছে, আছে কিশোর গ্যাংও। এলাকার কোচিং সেন্টার, ক্লিনিক, প্রাইভেট হাসপাতালসহ যাবতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মূলত তার কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে শুদ্ধি অভিযানে র‌্যাবের হাতে অস্ত্রসহ আটক হয়েছিল কুখ্যাত গ্যাং লিডার নূর মোস্তফা টিনু। চকবাজার কাপাসগোলা এলাকা থেকে একটি বিদেশি পিস্তলসহ আটক করে র‌্যাব-৭। টিনু কখনো কলেজের দ্বারগোড়ায় পৌছেনি অথচ নিজেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিতো, শুধু তা-ই নয়, কোন ধরনের কমিটিতে না থাকলেও পরিচয় দেয় যুবলীগ নেতা হিসেবে। নগরীর চকবাজারসহ আশপাশের এলাকার আতংক যুবলীগ নেতা পরিচয় দানকারী নূর মোস্তফা ওরফে টিনু চাঁদাবাজি, ছিনতাই, দখলবাজিসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও বাণিজ্য কর্মকান্ডে জড়িত। ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে টিনু কয়েক দফায় কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এছাড়া চকবাজার মোড়টি ঘিরে অত্যাধুনিক বিভিন্ন মার্কেটের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস, রেষ্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল, ফার্মেসিসহ অন্যান্য ব্যবসায়িক স্থাপনা থেকে এমনকি রাস্তার পাশে ফুটপাতের উপর বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। এছাড়া অবৈধভাবে হিউম্যান হলার, সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত টমটম, অটোটেম্পু’র বড় একটি বাণিজ্যও নিয়ন্ত্রণ করে টিনু। এলাকায় আধিপত্য, অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখানো, ছিনতাই-চাঁদাবাজি, কিশোর অপরাধী চক্র গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে টিনুর বিরুদ্ধে। টিনুর অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারাও বিব্রত। # ১৭.০৬.২০২১ চট্টগ্রাম #