চলমান সংবাদ

জনপ্রিয় সংস্কৃতির বিশ্বপ্রতীক চে

বিপ্লবী চে গুয়েভারা (ফাইল ছবি)

 ৩ নভেম্বর ১৯৬৬। একজন মধ্যবয়সী উরুগুয়ের ব্যবসায়ী, নাম এডোলফ মীনা গনজালেস্, বলিভিয়ার লা পাঝ্ শহরের একটি হোটেলে স্যুইট ভাড়া নিলেন। হোটেল থেকে পশ্চিম বলিভিয়ার ইলিমনি পর্বতের চূড়া দেখা যায়। রাতে হোটেল কক্ষে তিনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে ধুমায়মান চুরুট ও তার শেভ করা মাথাসহ ভারী শরীরটার একটা ছবি নিয়ে রাখলেন। বাস্তবে, ছদ্মবেশী এই লোকটি হলেন আর্জেন্টিয়ান বংশোদ্ভুত বিপ্লবী, চিকিৎসক, কবি ও সাহিত্যিক আর্নেস্টো চে গুয়েভারা। কিউবার সফল বিপ্লবের পর তিনি অন্যান্য দেশেও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত করার জন্য চেস্টা করেন। ১৯৬৫ সালে আফ্রিকার কংগোতে বিপ্লবের প্রচেস্টা ব্যর্থ হবার পরে তিনি বলিভিয়ায় যান বিপ্লবের স্বপ্নকে সেদেশে বাস্তবে রূপ দিতে। ১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্মগ্রহন করেছিলেন আমাদের সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় রোমান্টিক বিপ্লবী চে গুয়েভারা। পুরে নাম এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না। তবে তিনি সারা বিশ্বে লা চে বা কেবলমাত্র চে নামেই পরিচিত। বুয়েনস আয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল সায়েন্সে পাস করা চে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে কাজ করেন নিজ দেশ আর্জেন্টিনার পাশ্ববর্তী ল্যাটিন আমেরিকান দেশ বলিভিয়া ও গুয়াতেমালায়। ১৯৫৫ সালে মেক্সিকোতে ফিদেল ক্যাস্ট্রো আর তাঁর ভাই রাউল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে পরিচিত হবার পর যুক্ত হন কিউবার স্বৈরশাসক বাতিস্তার বিরুদ্ধে সংঘটিত ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে সর্বাত্মক যুদ্ধ ও সংগ্রামে। তিনি ক্যাস্ট্রোর সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন ও গেরিলাযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৯ সালে বিপ্লব সফল হলে ক্যাস্ট্রোর সরকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন চে। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চে কিউবার শিল্প বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। এসময় তিনি কিউবার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এসময় কিউবান নোটগুলোতে তার স্বাক্ষরে শুধু “চে” লেখা থাকতো। ১৯৬৫ সালে আলজিয়ার্স সফরকালে সোভিয়েত সরকারকে সাম্রাজ্যবাদের দোসর আখ্যা দেয়ার ফলে দেশে ফেরার সাথে সাথে তার মন্ত্রীত্ব বাতিল হয়। এরপর তিনি বিপ্লবের পথে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। চে গুয়েভারা ইতিহাসের এক নন্দিত, রোমান্টিক বিপ্লবী চরিত্র। বিভিন্ন জীবনী, স্মৃতিকথা, প্রবন্ধ, তথ্যচিত্র, গান ও চলচ্চিত্রে তার চরিত্রের নানা দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। টাইম পত্রিকার বিংশ শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তির তালিকায় তার নাম প্রকাশিত হয়। ‘গেরিইয়েরো এরোইকো’ নামে আলবের্তো কোর্দারতোলা তোলা চে-র বিখ্যাত আলোকচিত্রটি “বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ আলোকচিত্র” হিসেবে ঘোষিত। ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর নিরস্ত্র অবস্থায় নয়টি গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল বন্দি চে গুয়েভারাকে। পরে ১৯৯৭ সালে ভ্যালেগ্রান্দের একটি গণ-কবরে চে ও তার সহযোদ্ধাদের দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। তার মৃত্যু সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সে সময় লিখেছিল, ‘একজন মানুষের সঙ্গে সঙ্গে একটি রূপকথাও চিরতরে বিশ্রামে চলে গেল।’ বলিভিয়ার একদম অজপাড়া গাঁয়ের লা হিগুয়েরা নামে একটি স্হানে চে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর ৫০ বছর পরেও সেই স্হানে এখনো অনেক দর্শনার্থীদের সমাগম হয়। অনেকেই আসেন এই বিপ্লবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। মৃত্যুর পর তার শৈল্পিক মুখচিত্রটি একটি সর্বজনীন প্রতিসাংস্কৃতিক প্রতীক এবং এক জনপ্রিয় সংস্কৃতির বিশ্বপ্রতীকে পরিণত হয়। চে নিজের এপিটাফে লেখেন, “যেখানেই মৃত্যু এসে আচমকা হাজির হোক,তাকে স্বাগত জানিও। আমাদের এ যুদ্ধের কান্না হয়তো কারো কানে পৌছোবে, কেউ হয়ত হাত বাড়িয়ে দিবে আমাদের অস্ত্রগুলো চালানোর জন্য।” শুভ জন্মদিন, চে! — প্রগতির যাত্রী ডেস্ক