বাংলাদেশেকে বাঁচাতে কেমন নেতা চাই? -ফজলুল কবির মিন্টু

দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিচ্ছে যে বাংলাদেশে এখন আর আগের ধাঁচের রাজনীতি কিংবা কেবল ক্ষমতা দখলের কৌশলে পারদর্শী নেতার প্রয়োজন নেই। সময়ের দাবি এক নতুন ধরনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব—যিনি রাষ্ট্র পরিচালনাকে ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে তুলে ধরে রাষ্ট্রনায়কসুলভ দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে যাবেন। এমন নেতা হবেন নৈতিকভাবে দৃঢ়, সাহসী এবং সত্য উচ্চারণে আপসহীন; জনপ্রিয়তার চাপ বা ক্ষমতার লোভ যাঁকে ন্যায় থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।
এই মুহূর্তে দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় চাওয়া হলো কথা বলার, শোনার ও অংশগ্রহণের সুযোগ। তাই প্রয়োজন এমন নেতৃত্ব, যিনি জনগণের সঙ্গে সংলাপে বিশ্বাস করবেন, ভিন্নমতকে শত্রু নয় বরং গণতন্ত্রের অপরিহার্য শক্তি হিসেবে দেখবেন। শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষার্থী, পেশাজীবী কিংবা প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বরকে যিনি গুরুত্ব দেবেন এবং আন্দোলন বা প্রতিবাদকে দমন নয়, সমাধানের পথে নেওয়ার মানসিকতা রাখবেন।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে দুর্বল করে ফেলেছে। এখন প্রয়োজন এমন নেতা, যিনি ব্যক্তি নয়—প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে চান। শক্তিশালী সংসদ, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তোলাই হবে তাঁর রাজনীতির মূল লক্ষ্য। প্রয়োজনে নিজের ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করতেও যিনি দ্বিধা করবেন না—এমন নেতৃত্বই পারে রাষ্ট্রকে টেকসই পথে এগিয়ে নিতে।
এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শ্রমজীবী ও সাধারণ জনগণ। তাদের জীবনের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত না করে কোনো উন্নয়নই অর্থবহ হতে পারে না। তাই প্রয়োজন এমন রাজনৈতিক নেতা, যিনি দল বা ব্যক্তি কেন্দ্রিক নীতির বদলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনকে অগ্রাধিকার দেবেন; শ্রম আইন বাস্তবায়ন, ন্যায্য মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষাকে স্লোগানের সীমায় না রেখে বাস্তব নীতিতে রূপ দেবেন।
একই সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় এই নেতৃত্ব হবে আপসহীন, তবে উগ্র নয়। বিদেশি শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ নয়, আবার অন্ধ জাতীয়তাবাদকিংবা সাম্প্রদায়িকতার নামে বিভাজনও নয়—কূটনীতি, বাস্তবতা ও আত্মমর্যাদার ভারসাম্য রক্ষা করাই হবে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার মূল ভিত্তি। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে তিনি ভয় নয়, শক্তি হিসেবে দেখবেন।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন কোনো ‘উদ্ধারক’ বা একক নায়কসুলভ নেতার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন এমন এক দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব, যিনি ক্ষমতার চূড়ায় বসে শাসন করবেন না, বরং মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র নির্মাণের কঠিন ও দীর্ঘ পথটিতে নেতৃত্ব দেবেন।
