এনসিটি ইজারা ইস্যুতে উত্তাল বন্দর এলাকা -ফজলুল কবির মিন্টু
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি (নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল) ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে ইজারা দেওয়ার সম্ভাবনা ঘিরে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। স্কপ (শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ) এই ইজারার বিরোধিতায় দীর্ঘ ছয় মাস ধরে আন্দোলন করে আসছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে—বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলসমূহও এতে যুক্ত হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে স্কপের সাম্প্রতিক বৈঠকে জানানো হয়—২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশে আন্দোলনের সময় আরব আমিরাতে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন নাগরিক গ্রেফতার হয়। তাদের মুক্তির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা আমিরাত সরকারকে মৌখিকভাবে এনসিটি ইজারা দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেন বলে বৈঠকে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া, আগের সরকারও নীতিগতভাবে এনসিটি ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে দাবি করা হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, আর্থিকভাবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে দেওয়া যেকোনো প্রতিশ্রুতি পরবর্তীকালে অনুসরণ করা একটি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশের জন্য প্রায় বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। এই অবস্থার মধ্যেই এনসিটিকে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তবে বন্দর চেয়ারম্যান বর্তমানে ছুটিতে থাকায় তিনি ২ ডিসেম্বরের আগে দায়িত্বে যোগ দিচ্ছেন না। ফলে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে চুক্তি সম্পাদনের সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা থাকায় এই সময়ের মধ্যে চুক্তি হওয়ার বাস্তবতা নেই বলে বৈঠকে জানানো হয়।
স্কপের নেতারা জানান, আলোচনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ মূলত বন্দরের সুনাম রক্ষার দিকটি বিবেচনায় রেখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালনের পরামর্শ দেয়। তবে তারা একবারও আন্দোলন স্থগিত বা বাতিল করার অনুরোধ করেনি। ফলে স্কপ তাদের পূর্বঘোষিত বন্দর অবরোধ কর্মসূচী বহাল রেখেছে।
স্কপের আন্দোলন যখন পর্যায়ক্রমে শক্তিশালী ও সফলতার পথে এগোচ্ছে, তখন হঠাৎ করে আবির্ভূত ‘বন্দর রক্ষা পরিষদ’ নামে একটি সংগঠননের জন্ম।সংগঠনটি স্কপের ঘোষিত কর্মসূচীর দু’দিন আগে—২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে বন্দর অবরোধের ঘোষণা দেয়, যা স্কপ ও সাধারণ মানুষের কাছে বিভ্রান্তিকর হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।
আরও প্রশ্ন উঠেছে—একটি নিস্ফল ও সিদ্ধান্তবিহীন আলোচনার পর বন্দর রক্ষা পরিষদের আগ বাড়িয়ে কর্মসূচী স্থগিত করার সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক? এতে বন্দর এলাকার সাধারণ শ্রমিক ও কর্মচারীদের মধ্যে সন্দেহ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
এনসিটি ইজারা ইস্যুকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় যে উত্তাপ তৈরি হয়েছে, তা এখন শুধু শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার সীমায় নেই—এটি দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছে।
স্কপ তাদের অবরোধ কর্মসূচীতে অনড়, বন্দর কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে চায়, আর নতুন সংগঠনের আবির্ভাব আন্দোলনের মাঠে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।
আগামী দিনগুলোতে বন্দর এলাকার শ্রমিক পরিস্থিতি, ইজারার পরিণতি এবং জাতীয় রাজনীতির সময়সূচী—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন দেশের সবার নজরে।
