চলমান সংবাদ

আটলান্টা বেঙ্গলি কমিউনিটির আয়োজনে তিন বিশিষ্ট কবিকে নিয়ে কবিতা ও সংস্কৃতির উৎসব

আটলান্টা, জর্জিয়া — ৯ই নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট।

আটলান্টার বাংলা ভাষাভাষী প্রবাসী সমাজ এক অনন্য সাহিত্য-সংস্কৃতির উৎসবে মিলিত হয় এদিন। ‘কবি কণ্ঠে কবিতা’ শিরোনামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে একত্র হন তিন সমকালীন কবি— অংকন বসু, উৎপল দত্ত এবং নাহিদ ফারজানা

অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন আটলান্টার সুপরিচিত কবি ও আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ চৌধুরী, যিনি শুরুতেই তিন কবির কবিতার অংশ আবৃত্তি করে শ্রোতাদের স্বাগত জানান।

সন্ধ্যার সূচনা: সংগীত ও সুরের আবেশ

আয়োজন শুরু হয় রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে। ক্ষুদে শিল্পী মর্মী বসু তাঁর সুমধুর কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘সফল কর হে প্রভু আজি এ সভা’—যা প্রথম মুহূর্তেই শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।

এরপর বাঁশির সুরে সভাকে মোহিত করেন আটলান্টার বাংলা সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত শিল্পী  মাহবুব মোর্শেদ আনোয়ার। তাঁর বাঁশির সুরে পুরো হল যেন সুরের নদীতে ভেসে যায়।

কবিতার অন্তরযাত্রা: তিন কবির সৃজনমেলা

মঞ্চে প্রথম কবিতা নিয়ে আসেন কবি নাহিদ ফারজানা। নানা আঙ্গিকের একাধিক কবিতায় তিনি শ্রোতাদের নিয়ে যান ভাষা, অনুভূতি ও বেদনার গভীরে।

পরবর্তী পর্যায়ে কবিতা পাঠ করেন অংকন বসু, তারপর উৎপল দত্ত। তিনজনই তাঁদের কবিতার যাত্রা, প্রেরণা, জীবনদর্শন ও সৃষ্টিশীল সময়ের কথা আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেন।

উপস্থাপক রাশেদ চৌধুরীর অনন্য প্রশ্নোত্তরভিত্তিক পরিচিতি পর্ব কবিদের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে দর্শকের। গতানুগতিক পরিচয়ের বদলে এই সংলাপমুখর পদ্ধতি অনুষ্ঠানটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।

টানা দেড় ঘণ্টা ধরে খালি কণ্ঠে কবিতা পাঠ—এ এক বিরল অভিজ্ঞতা। উপচে পড়া দর্শকগণ পিনপতন নীরবতায় বসে বা দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন পুরো আয়োজন। তাঁদের মনোযোগ ও আগ্রহই প্রমাণ করে—প্রবাসে বাংলা কবিতা আজও কতটা জীবন্ত।

প্রবাসে বাংলা সাহিত্যের ঐক্য

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমীরা। দুই বাংলার মানুষের এই অংশগ্রহণ প্রমাণ করে—সীমানা পেরিয়েও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বন্ধন অটুট, প্রাণবন্ত এবং সমৃদ্ধ।

মঞ্চের পাশে সাজানো ছিল তিন কবির প্রকাশিত বইয়ের টেবিল, যাতে দর্শকরা নিজেদের পছন্দের বই সংগ্রহ করার সুযোগ পান।

সম্মাননা ও সৌহার্দ্যপ্রতিটি অতিথিকে ‘আলো-প্রদীপ’ উপহার দেওয়া হয়—যা কবিতা, শিল্প ও সাংস্কৃতিক আলোর প্রতীক হিসেবে বিশেষভাবে অর্থবহ।

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি চা ও নাস্তার মাধ্যমে। কবি-শিল্পী ও দর্শকদের আন্তরিক আলোচনা, সৌহার্দ্য ও প্রেরণায় হয়ে ওঠে এক স্মরণীয় উপলক্ষ।

কবিতাকে শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য

শহরে আবৃত্তি-গান নিয়মিত হলেও দীর্ঘ সময় ধরে শুধু কবিদের কণ্ঠে তাঁদের স্বরচিত কবিতা শোনানোর ধারণাটি ছিল নতুন। এই ভাবনা পরে পরিণত হয় এক যৌথ প্রয়াসে—প্রবাসে কবিতা পাঠকে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষকে কবিতা পড়তে উৎসাহিত করা।

দর্শকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, আয়োজনটি তার উদ্দেশ্যে সফল।

উপসংহার

আটলান্টা বেঙ্গলি কমিউনিটির এই কবিতা-সংস্কৃতির উৎসব প্রবাসী বাংলা সমাজে এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছে। এ ধরনের আরও সাহিত্য-সংস্কৃতিমূলক সমাবেশের প্রত্যাশা জাগিয়েছে এই সফল আয়োজন—যা নিঃসন্দেহে প্রবাসী বাঙালির ঐক্য, পরিচয় ও আবেগকে আরও দৃঢ় করবে।